জামিন পেয়ে বাদীকে হুমকি, নিরাপত্তা চেয়ে থানায় গেলেও জিডি নেয়নি পুলিশ

আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিন আদেশ পাওয়ার পর এলাকায় ফিরে বাদীপক্ষ ও তাদের সাক্ষীদের প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে আসামিপক্ষের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় নিরাপত্তা চেয়ে গত শনিবার (৭ ডিসেম্বর) কুড়িগ্রামের রাজারহাট থানায় সাধারণ ডায়রি (জিডি) নথিভুক্তির আবেদন করেছেন ভুক্তভোগী বাদী। তবে গত দুই দিনেও (রবিবার রাত ৮ টা পর্যন্ত) সেই জিডি নথিভুক্ত করেনি পুলিশ।

রাজারহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল করিম রেজা জিডির আবেদন পাওয়ার কথা স্বীকার করলেও জিডিটি নথিভুক্ত করা হয়েছি কি না, তা নিশ্চিত করতে পারেননি। কেন করা হয়নি, সে প্রশ্নের কোনও সদুত্তর দেননি ওসি।

ভুক্তভোগী বাদীর নাম শফিউজ্জামান। তিনি উপজেলার গতিয়াশাম গ্রামের বাসিন্দা। অভিযুক্ত আসামিরা হলেন আলতাফ হোসেন, কাশেম আলী ও মজিদুল ইসলাম। তারা সবাই উপজেলার পশ্চিম দেবত্তোর গ্রামের বাসিন্দা। এদের মধ্যে আলতাফ হোসেন বরিশাল রেঞ্জের আলোচিত ও বরখাস্ত হওয়া কারাবন্দি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলেপ উদ্দিনের ছোট ভাই বলে জানা গেছে।

মামলা সূত্রে জানা গেছে, বাদী শফিউজ্জামান গত ২ ডিসেম্বর আলতাফ হোসেনসহ ১২ জনকে আসামি করে রাজারহাট থানায় মামলা করেন। আসামিদের বিরুদ্ধে দাঙ্গা সৃষ্টির মাধ্যমে জমিতে অনধিকার প্রবেশ করে হত্যার উদ্দেশ্যে সাধারণ ও গুরুতর জখম, চাঁদা দাবি ও গণউপদ্রব সৃষ্টিসহ বিভিন্ন অভিযোগ আনা হয়েছে। যা দণ্ডবিধি ১৮৬০ অনুযায়ী ১৪৩/১৪৭/ ৩২৫/৩৮৫/৩০৭ ধারার অপরাধ।

বাদী শফিউজ্জামান বলেন, ‘আসামিরা কারাবন্দি পুলিশ কর্মকর্তা আলেপ উদ্দিনের ছোট ভাই ও নিকটাত্মীয়। তারা প্রভাবশালী। গত ৪ ডিসেম্বর আসামিরা আদালতে আত্মসমর্পণ করলে আদালত ওই দিনই তাদের সকলের জামিন মঞ্জুর করেন। পরের দিন আলতাফসহ আসামিদের কয়েকজন উপজেলার চায়না বাজার এলাকায় আমার ও কয়েকজন সাক্ষীর দেখা পেলে আমাদের হুমকি দেয়। আমাদের উচিত শিক্ষা দেবে বলে তারা শাসায়। এরপর থেকে বিভিন্ন জনের মাধ্যমে আমাদের হুমকি দিচ্ছে। আমি ও আমার সাক্ষীরা আতঙ্কে আছি।’

নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করে বাদী শফিউজ্জামান বলেন, ‘আসামিরা প্রভাবশালী। থানা-পুলিশ তাদের হাতের মুঠোয়। তারা আদালতে দাঁড়াতেই জামিন পায়। তাদের হুমকিতে আমরা খুব আতঙ্কে আছি। থানায় জিডি আবেদন করলেও পুলিশ তা এন্ট্রি করেনি।’

তবে বাদীর এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছেন আসামি আলতাফ হোসেন। তিনি বলেন, ‘এসব ভিত্তিহীন অভিযোগ। তারা মিথ্যা অভিযোগে মামলা করেছে। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে জামিন নিয়েছি। তাদের হুমকি তো দূরের কথা, তাদের সঙ্গে আমাদের কোনও কথা হয়নি। তদন্ত করলেই সত্য বেরিয়ে আসবে।’

জিডি বিষয়ে জানতে চাইলে রাজারহাট থানার ডিউটি অফিসার সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) সফিকুল ইসলাম বলেন, ‘জিডির আবেদন পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে জিডি নথিভুক্ত করার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

তবে আইনজীবীরা বলছেন, যেকোনও ঘটনায় কেউ জিডি করতে চাইলে থানার ওসি আগে জিডি নথিভুক্ত করবেন। পরে সেটি তদন্তের অনুমতি চেয়ে আদালতে পাঠাবেন। জিডি নথিভুক্ত না করে তদন্তের কোনও সুযোগ নেই।

আবেদনের দুই দিনেও জিডি নথিভুক্ত না করার প্রশ্নে ওসি রেজাউল করিম রেজা থানার ডিউটি অফিসারের বরাতে বলেন, ‘আবেদনে ঠিকানার সমস্যা আছে। বাদী সেটি সংশোধন করে দিলে জিডি নথিভুক্ত করে আদালতে পাঠানো হবে।’

তবে বাদী শফিউজ্জামান জানিয়েছেন, তিনি সকল পক্ষের নাম ও ঠিকানা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করে জিডির আবেদন করেছেন। আসামিরা পুলিশের পরিবারের সদস্য হওয়ায় ওসি খোঁড়া অজুহাত দিচ্ছেন।