মুসলিম প্রেমিককে ‘বাঁচাতে’ পালিয়ে বিয়ে হিন্দু কিশোরীর: আদালতে জবানবন্দি

কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ অনন্তপুর গ্রামের হিন্দু ধর্মাবলম্বী এক কিশোরীকে অপহরণের অভিযোগ ওঠার পর প্রেমিকসহ কিশোরীকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকালে তাদের নাগেশ্বরী উপজেলার সন্তোষপুর ইউনিয়ন থেকে উদ্ধার করা হয়। ফুলবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নওয়াবুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

উদ্ধারের পর শুক্রবার ওই কিশোরী ও তার প্রেমিককে আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ। কুড়িগ্রাম চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ২২ ধারায় জবানবন্দি দিয়েছেন ওই কিশোরী। জবানবন্দিতে তিনি অপহরণের শিকার হওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। চার বছরের প্রেমের সম্পর্কের জের এবং প্রেমিকের জীবন বাঁচাতে তিনি স্বেচ্ছায় যুবকের সঙ্গে চলে গিয়ে বিয়ে করেছেন বলে জবানবন্দিতে উল্লেখ করেছেন। পুলিশ ও আদালত সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

গত বুধবার বিকালে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী হিন্দু ধর্মাবলম্বী ওই কিশোরীকে (১৭) ‘ঘোষণা দিয়ে অপহরণের’ অভিযোগ ওঠে একই গ্রামের বাসিন্দা মুসলিম যুবক আলিনুরের (২৬) বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার ফুলবাড়ী থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন কিশোরীর বাবা। শুক্রবার সকালে কিশোরীকে উদ্ধারসহ আলিনুরকে আটক করে পুলিশ।

সাম্প্রদায়িক উসকানি দিয়ে আলিনুরকে ‘পিটিয়ে গ্রামছাড়া’ করার পরিকল্পনা

আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে কিশোরী বলেছেন, গত চার বছর ধরে আলিনুরের সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্ক। বিষয়টি জানাজানি হলে গ্রাম্য সালিশে আলিনুরকে পিটিয়ে আহত করা হয়। পাঁচ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়। প্রেমিককে নির্যাতনের বিষয়টি কোনোভাবে মেনে নিতে পারেননি কিশোরী। এরপর পারিবারিকভাবে ওই যুবকের বিয়ে দিলে তাও তিনি মেনে নিতে পারেননি। তার কথাতেই আলিনুর স্ত্রীকে তালাক দেন বলেও জবানবন্দিতে জানান কিশোরী।

কিশোরীর সঙ্গে প্রেমের ‘অপরাধে’ আলিনুরকে পিটিয়ে গ্রাম থেকে বিতাড়িত করার পরিকল্পনা করা হয়েছিল দাবি করে ওই কিশোরী তার জবানবন্দিতে আরও বলেছেন, তার চাচা (বাবার মামাতো ভাই) মুকুল আসন্ন দুর্গাপূজায় মন্দিরে কোরআন শরিফ বা অন্য কোনও ইসলামি বই রেখে আলিনুরকে ফাঁসানোর পরিকল্পনা করেছেন। মুকুলসহ অনেকে বলেছেন, এই অভিযোগ তুলে তারা আলিনুরকে পিটিয়ে গ্রামছাড়া করবে। বিষয়টি জানতে পেরে আলিনুরকে নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন কিশোরী।

কিশোরীর বয়স ১৮ পূর্ণ না হওয়ায় আলিনুর তাকে নিয়ে চলে যেতে অসম্মতি জানিয়েছিলেন বলে জবানবন্দিতে ওই কিশোরী উল্লেখ করেছেন। ‘না হলে তোমাকে মারবে, চলো পালিয়ে যাই’, বলে তিনি আলিনুরের আপত্তির জবাব দিয়েছেন। এরপর তিনি আলিনুরের সঙ্গে কুড়িগ্রাম শহরে গিয়ে অ্যাফিডেভিট করে স্বেচ্ছায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেন। পরে এক ইমামের কাছে গিয়ে দুজনে বিয়ে করেন।

বাবা মায়ের কাছে যেতে অসম্মতি, কিশোরী সেফ হোমে

আদালত সূত্র জানায়, বাবা মায়ের হেফাজতে যেতে অসম্মতি জানালে আদালত কিশোরীকে মহিলা ও শিশু কিশোরী নিরাপদ হেফাজতিদের আবাসন (সেফ হোম), রাজশাহীতে পাঠানোর আদেশ দেন। আদালত কিশোরীর জবানবন্দি লিপিবদ্ধ করে প্রেমিক আলিনুরকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

ওসি নওয়াবুর রহমান বলেন, ‘প্রাথমিক তদন্ত ও জবানবন্দিতে উভয়ের মধ্যে প্রেমের সম্পর্কের সত্যতা পাওয়া গেছে। কিশোরীর বাবার করা মামলার পর কিশোরীকে উদ্ধার ও অভিযুক্ত যুবককে আটক করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।’

এ ব্যাপারে জেলা পুলিশ সুপার আল আসাদ মো. মাহফুজুল ইসলাম বলেন, ‘বিষয়টি আসলে দীর্ঘদিনের প্রেমঘটিত, কোনও সাম্প্রদায়িক ইস্যু নয়।’ ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব, প্রেম-পরিণয় কিংবা সম্পত্তি সংক্রান্ত বিরোধকে সাম্প্রদায়িক ইস্যু না বানানোর অনুরোধ জানান তিনি।