কাজ শেষ হওয়ার আগেই দেবে গেলো সেতুর পিলার, তদন্তে কমিটি

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগেই দেবে গেছে বেলকাবাজার খেয়াঘাটে তিস্তার শাখা নদীর ওপর সেতু। গত সোমবার (২৪ জুন) রাতে সেতুর মাঝখানের চারটি সিসি পিলার দেবে যায়। এরপরও ঝুঁকি নিয়েই এর ওপর দিয়ে পারাপার হচ্ছেন এলাকাবাসী। নদীর স্রোত বাড়লেই সেতুটি আরও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

এ ছাড়া সেতুর পাটাতনে সিমেন্টের স্লাবের পরিবর্তে ব্যবহার করা হয়েছে কাঠ। এখন পর্যন্ত দেওয়া হয়নি নিরাপত্তা রেলিং। এলাকাবাসীর অভিযোগ, ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের গাফিলতির কারণেই এ অবস্থা হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, উপজেলার বেলকা ইউনিয়নের বেলকাঘাটে লোকজন নৌকায় নদী পারাপার হতো। নৌকাই যোগাযোগের একমাত্র ভরসা এলাকার মানুষের। স্থানীয়দের দীর্ঘদিনের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে বেলকাঘাট এলাকায় একটি সেতু নির্মাণ করে এলজিইডি। রাজস্ব অর্থায়নের ২৮ লাখ টাকা ব্যয়ে সুন্দরগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় এটি বাস্তবায়ন করে। ২০২২ সালের আগস্ট মাসে ২০০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৫ ফুট প্রস্থের এই সেতুর টেন্ডার আহ্বান করা হলে নির্মাণকাজের দায়িত্ব পান ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ছানা এন্টারপ্রাইজ। কিন্তু সেতুর কোনও কাজ না করেও বরাদ্দের পুরো টাকাই গত বছরের জুনে তুলে নেয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি।

এদিকে, বিল তুলে নেওয়ার ঘটনা জানাজানি হলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চলতি বছরের জানুয়ারিতে সেতু নির্মাণের কাজ শুরু করেন। বর্তমানে সেতুর ৯০ ভাগ নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। এরই মধ্যে গত সোমবার রাতে হঠাৎ করে সেতুর মাঝখানে চারটি পিলার দেবে গেছে। সেতুর এমন দশায় ক্ষুব্ধ এলাকাবাসীসহ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি।

সেতুর পিলার দেবে যাওয়ার ঘটনায় বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) বিকালে সেতুস্থল পরিদর্শন করেন সুন্দরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তরিকুল ইসলাম ও উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল মান্নাফ।

সেতু পরিদর্শন শেষে ইউএনও তরিকুল ইসলাম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘সেতুর পিলার দেবে যাওয়ার ঘটনায় পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। প্রতিবেদনে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার গাফিলতি কিংবা অনিয়ম পরিলক্ষিত হলে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

দীর্ঘ প্রত্যাশিত সেতুর পিলার দেবে যাওয়ার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করে বেলকা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ইব্রাহিম খলিলুল্লাহ বলেন, ‘সেতুটির ভিত্তিসহ পিলার নির্মাণে অনিয়ম হয়েছে। এ কারণে নদীর পানি বৃদ্ধি ও স্রোতের কারণে দেবে যায় পিলার।’ এ ঘটনায় জড়িত ঠিকাদারসহ দায়িত্বরত এলজিইডি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানান তিনি।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ছানা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মো. ছানা মিয়াকে। এমনকি তার মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া যায়।