বস্তা সেলাই করে সংসার চলে ৫০০ শ্রমিকের

দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে আমদানিকৃত বিভিন্ন পণ্য ঘিরে বস্তার ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। চাহিদাকে ঘিরে হিলিতে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু দোকানপাট। এসব দোকানে ছেঁড়াফাটা বস্তা সেলাই করে জীবিকা নির্বাহ করছেন ৫০০ নারী ও পুরুষ। একসময়ে বেকার থাকলেও এখন বস্তা সেলাই শ্রমিকের কাজ করে সচ্ছল তারা।

বস্তার দোকানে কর্মরত মিলন মন্ডল বলেন, ‌‘আগে চোরাচালানির ব্যবসা করতাম। ভারত থেকে শাড়ি চোরাই পথে নিয়ে আসতাম। এখন সীমান্তে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। পাশাপাশি অপরাধ দমনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কঠোর হওয়ায় এখন ভারতে যেতে পারি না। কোনও পণ্যও আনতে পারি না। এ অবস্থায় বেকার হয়ে পড়ি। পরে বস্তা সেলাইয়ের কাজ শুরু করি। সারাদিনে বস্তা সেলাইয়ের কাজ করে যা আয় হয় তা দিয়ে সুন্দরভাবে সংসার চলছে। কোনও সমস্যায় পড়তে হয় না।

অপর শ্রমিক ইমরান হোসেন বলেন, সারাদিনে ৩০০ থেকে ৪০০ বস্তা সেলাই করি। এতে দিনে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা মজুরি পাই। তা দিয়ে ভালোভাবেই চলে সংসার। সেই সঙ্গে ছেলেমেয়েকে লেখাপড়াই করাই। এই কাজ করে ভালো আছি।

বস্তার চাহিদাকে ঘিরে হিলিতে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু দোকানপাট, কাজ করছেন শ্রমিকরা

রেহেনা পারভীন বলেন, আমার স্বামী নেই। দুই মেয়ে নিয়ে কয়েক বছর অনেক কষ্টে সংসার চালিয়েছি। অবশেষে বস্তা সেলাইয়ের কাজ শুরু করি। দিনে ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা মজুরি পাই। এই টাকা দিয়ে কোনও রকমে সংসার চলে। বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। ছোট মেয়ে ডিগ্রিতে পড়ছে। বস্তা সেলাইয়ের কাজ আমার জন্য আশীর্বাদ। না হয় কীভাবে সংসার চালাতাম জানা ছিল না। 

রন্টু শেখ বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বস্তা সেলাইয়ের কাজ করি। দিনে ৫০০ টাকা আয় হয়। কোনও দিন ৬০০ টাকাও আয় হয়। এতে ছেলেমেয়ের পড়ালেখার খরচ ও সংসার চলে। এই কাজ করে পরিবার নিয়ে ভালোই আছি। খুব সুন্দরভাবে আমাদের পরিবার চলছে।

বস্তা সেলাইয়ের কাজ করছেন শ্রমিকরা

হিলি বাজারের বস্তার দোকানি মেসার্স মিথন ট্রেডার্সের মালিক আব্দুর রহিম মিথুন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে প্রচুর চাল, গম, ভুট্টা, খৈল ও ভুসিসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি হয়। এসব পণ্য লোড-আনলোডের সময় অনেক বস্তা ছিঁড়ে ও ফেটে যায়। এজন্য বস্তার অনেক চাহিদা রয়েছে। চাহিদা মেটাতে হিলিতে ১৫টির মতো পুরনো বস্তার দোকান গড়ে উঠেছে। বিভিন্ন স্থান থেকে নতুন ও পুরনো বস্তা সংগ্রহ করি আমরা। পুরনো বস্তা দোকানে এনে ছেঁড়াফাটা সেলাই করে ব্যবহার উপযোগী করি। এজন্য বস্তা সেলাইয়ের শ্রমিকের কদর রয়েছে। এসব দোকানে নারী-পুরুষসহ প্রতিদিন ৫০০ শ্রমিক কাজ করেন। বস্তা সেলাইয়ের পরিমাণ অনুযায়ী তাদের মজুরি দেওয়া হয়।তাদের সেলাই করা বস্তাগুলো আমদানিকারকদের গুদামে দিই। বস্তার দোকান গড়ে উঠার ফলে যেমন কর্মসংস্থানের সুযোগ হয়েছে তেমনি আমরাও বস্তার ব্যবসা করে লাভবান হচ্ছি। এই কাজ করে পরিবার নিয়ে শ্রমিকরা ভালো আছেন, আমরাও ভালো আছি।