বুধবার (১৩ মে) সরেজমিনে সদরের রামনগর, কচুকাটা, পঞ্চপুকুর ও টুপামারী ইউনিয়নে গিয়ে কৃষকের ধানের জমিতে এই রোগের সংক্রমণ দেখা যায়। রামনগর ইউনিয়নের বাহালী পাড়া গ্রামের কৃষক লালবাবু রায় জানান, চার বিঘা জমিতে প্রায় ৮৫ শতাংশ ধানের শীষ চিটা হয়েছে। বাকি ধানগুলোও প্রতিকারের অভাবে শুকিয়ে যাচ্ছে। কীটনাশক প্রয়োগ করে কোনও লাভ হয়নি। সাধারণত চার বিঘা জমিতে ধান ফলন হয় প্রায় ৮০ মণ। আর প্রতিমণ ৬৫০ টাকা হিসেবে ৫২ হাজার টাকার ক্ষতির আশঙ্কা করছি। এই পরিস্থিতিতে সরকারের কাছে প্রণোদনার দাবি করছি।
একই উপজেলার পঞ্চপুকুর ইউনিয়নের বগুলাগাড়ী জামতলা গ্রামের কৃষক মশেতুল্যা মিয়া (৬৩) জানান, এবার তার তিন বিঘা ধানের (ব্রি ধান-২৮) জমিতে চিটা রোগ দেখা দিয়েছে। এ ছাড়াও আশেপাশের জমিতে ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়েছে এই রোগ। তিনি বলেন, ‘প্রতিবার প্রাকৃতিক দূর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে দিশেহারা হয়েছি। এছাড়া ধানের বাজারে দরপতনের কারণে কৃষক বার বার লোকসান গুনছে। এবার নেক ব্লাস্ট রোগ ছড়িয়ে পড়ায় গ্রামে আতঙ্ক বিরাজ করছে।’
উপজেলার ইটাখোলা ইউনিয়নের সিংদই পাইকার পাড়া গ্রামের কৃষক মোজাহারুল হক (৪৩) জানান, এ মৌসুমে তিন বিঘা জমিতে ব্রি ধান-২৮ চাষ করেছেন। কিন্তু ধান পেকে যাওয়ার মুহূর্তে শতভাগ ধানের শীষ চিটা হয়। এতে ব্যাপক লোকশান গুনতে হবে। করোনায় কর্মহীন হয়ে ঘরে বসে থেকে যা জমানো ছিল তাও শেষ। জমির ধানও শেষ। এখন কিভাবে পরিবার চালাবেন তা নিয়ে দিশেহারা।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ জানায়, এবার জেলার ছয় উপজেলায় ৮৩ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। ইতোমধ্যে ৮০ হাজার ৬০৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধান চাষ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১৩ হাজার ৮৭৫ হেক্টর জমিতে ব্রি ধান-২৮ চাষ হয়েছে। আর উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে তিন লাখ ৮২ হাজার ৮৫০ মেট্রিকটন।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের (ভারপ্রাপ্ত) উপ-পরিচালক মো. ওবায়দুর রহমান মণ্ডল জানান, কৃষকদের ব্রি ২৮ ধান চাষ করতে নিরুৎসাহিত করি। কারণ এই জাত অনেক পুরনো হয়ে গেছে। এই ধানে নেক ব্লাস্ট বেশি হয়। আমরা নতুন নতুন জাতের ধান চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করছি। বিক্ষিপ্তভাবে কিছু কিছু এলাকায় দুই একজন কৃষকের ২৮ ধানের জমিতে এই রোগের সংক্রমণ ঘটেছে। এর প্রেক্ষিতে, জেলায় ২২ হাজার ৫৪২ হেক্টর জমিতে প্রিভেন্টিভ কীটনাশক স্প্রে করা হচ্ছে। আশাকরি এই সমস্যা দ্রুত কেটে যাবে।