কাগজে-কলমে ২০০৩ সালে কলেজটির প্রতিষ্ঠা দেখানো হলেও বাস্তবে এর কোনও অস্তিত্ব ছিল না। কলেজের কার্যক্রম কীভাবে পরিচালনা করা হতো, তা স্থানীয়রা জানাতে পারেনি। ধারণা করা হচ্ছে, বিসিক নগর টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজে এই কলেজের শিক্ষার্থীদের ক্লাস হতো।
বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) সরেজমিন দেখা গেছে, ঝলই শালশিরী ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন হোসনাবাদ ইসলামিয়া দাখিল মাদ্রাসার পাশে একটি পরিত্যক্ত জমিতে সাইনবোর্ড টানানো রয়েছে। শিক্ষক-শিক্ষার্থী তো দূরের কথা, কলেজের কোনও অফিস ভবন ও শ্রেণিকক্ষ নেই। কয়েকজন শ্রমিক বালু ফেলার কাজ করছেন। কেউ কেউ ইটের গাঁথুনির কাজ করছেন। ঘটনাস্থলে ওই প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট কাউকে পাওয়া যায়নি। প্রতিষ্ঠানের সভাপতি দেলদারের ভয়ে স্থানীয়রাও মুখ খুলছেন না।
জানা গেছে, শুধু নতুনহাট টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজের চিত্রই এমন না, এমপিওভুক্ত হওয়া পঞ্চগড়ের বাকি তিনটি প্রতিষ্ঠানের অবস্থাও নাজুক। কাগজে-কলমে শিক্ষক, শিক্ষার্থী, প্রতিষ্ঠান এবং শিক্ষা কার্যক্রম চললেও বাস্তবে সব চিত্রই উল্টো।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নতুনহাট টেকনিক্যাল অ্যান্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্ট কলেজ কর্তৃপক্ষ কলেজের অবকাঠামো, শিক্ষক ও শিক্ষার্থী দেখিয়ে আবেদন করেন। এছাড়া অবৈধভাবে শিক্ষক নিয়োগ, ভুয়া শাখা এবং শিক্ষার্থীর তথ্য দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে দেলদার জানান, ‘কলেজের শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ২০০। শিক্ষক আছেন ৬ জন। এবার এইচএসসি পরীক্ষায় কলেজ থেকে ৬০ শিক্ষার্থী অংশ নেয়। পাস করে ৫৮ জন।’ বাস্তবে না থাকলেও কাগজে কলমে সব ঠিকঠাক রয়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
রাতারাতি ভবন নির্মাণের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার ঘর আমি যখন খুশি তখন উঠাবো।’
ঝলই শালশিরী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবুল হোসেন বলেন, ‘যেভাবেই হোক প্রতিষ্ঠানটি এমপিওভুক্ত হয়েছে। চেয়ারম্যান হিসেবে আমি খুশি।’
বোদা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল হোসেন বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানগুলো অনলাইনে এমপিওভুক্তির জন্য আবেদন করে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের আওতাধীন এমপিওভুক্তির আবেদন বাছাই কমিটি নীতিমালা অনুযায়ী প্রতিষ্ঠান বাছাই করে সরকারের কাছে সুপারিশ করে। এরপর শিক্ষা মন্ত্রণালয় সেসব প্রতিষ্ঠানকে এমপিওভুক্ত করে।’
এই প্রতিষ্ঠানটি ছাড়াও এমপিওভুক্ত হওয়া আটোয়ারী উপজেলার আলোয়াখোয়া ইউনিয়নের সন্দেশ দিঘি নিম্ন মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের অবস্থা আরও করুণ। বিদ্যালয়টির নামমাত্র একটি ভবন থাকলেও তাতে নেই কোনও বসার ব্যবস্থা। এমপিওভুক্তির নীতিমালা না মেনে কীভাবে এই প্রতিষ্ঠানগুলো এমপিওভুক্তির নামের তালিকায় আসে, এ প্রশ্ন সংশ্লিষ্টদের।