এক চিঠিতে আ.লীগ আমলে বিএনপি-জামায়াতের বিরুদ্ধে করা ২৪১ মামলা প্রত্যাহার

আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে বগুড়ায় বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে দায়ের করা ৭৬৬টি মামলা প্রত্যাহার করা হচ্ছে। রাজনৈতিক হয়রানিমূলক বিবেচনায় এসব মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে বগুড়া জেলা প্রশাসকের কাছে এ সংক্রান্ত ২৪১টি মামলা প্রত্যাহারের চিঠি এসেছে। জেলা প্রশাসকের কাছে পাঠানো মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব মফিজুল ইসলাম স্বাক্ষরিত চিঠিতে ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮-এর-৪৯৪ ধারায় আওতায় ২৪১টি মামলার প্রত্যাহারের কথা বলা হয়।

মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) রাত সাড়ে ৮টার দিকে বিষয়টি বাংলা ট্রিবিউনকে নিশ্চিত করেছেন বগুড়ার জেলা প্রশাসক হোসনা আফরোজা। তিনি বলেন, ‘২৪১টি মামলা প্রত্যাহারের চিঠি হাতে পেয়েছি। চিঠি অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে বগুড়া আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটরকে (পিপি) বলা হয়েছে।’ 

বগুড়া আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট আবদুল বাছেদ বাংলা ট্রিবিউনকে, ‘মামলাগুলো প্রত্যাহারের জন্য আদালতগুলোতে চিঠি দেওয়া হচ্ছে।’

পিপির কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত বিএনপি, জামায়াত এবং তাদের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা দেওয়া হয়। জেলার ১২ উপজেলায় ফৌজদারি কার্যবিধি, ১৮৯৮-এর ৪৯৪ ধারায় আওতায় ৭৬৬টি মামলা করা হয়। এসব মামলায় অর্ধলক্ষাধিক নেতাকর্মী আসামি হন। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় আসার পর এসব মামলার আসামিদের রেহাই দিতে আইন মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সলিসিটর বরাবর আবেদন করার সুযোগ দেওয়া হয়। এরপর বগুড়ার পিপি আবদুল বাছেদের মাধ্যমে মামলাগুলো প্রত্যাহারের আবেদন করা হয়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ এসব মামলা না চালানোর সিদ্ধান্ত দেয়। 

পিপি আবদুল বাছেদ বলেন, ‘৭৬৬টি মামলা প্রত্যাহারের আবেদনের মধ্যে মঙ্গলবার জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে ২৪১টি মামলা প্রত্যাহারের চিঠি হাতে পেয়েছি। প্রতিটি মামলায় গড়ে ১০০ জন আসামি রয়েছেন। এরপর এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে চিঠিগুলো স্ব স্ব আদালতে জমা দেওয়া হয়েছে। শিগগিরই আরও ২৯২ মামলা প্রত্যাহারের চিঠি আসবে। পর্যায়ক্রমে সবগুলো মামলা প্রত্যাহার হবে। তবে অধিক সমস্যা থাকলে কিছু মামলা প্রত্যাহার নাও হতে পারে। তবে হত্যা, অস্ত্র, জঙ্গি ও সন্ত্রাসবিরোধী আইনে হওয়া মামলাগুলো প্রত্যাহারে আমরা কোনও আবেদন করবো না।’

এর আগে গত ১৬ মার্চ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছিল, অন্তর্বর্তী সরকার এ পর্যন্ত ছয় হাজার ২০২টি রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের সুপারিশ করেছে। 

বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গঠিত এ-সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় কমিটি মাঠপর্যায়ের কমিটির উপস্থাপিত ছয় হাজার ২৯৫টি মামলা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে। সেখান থেকে এ পর্যন্ত ছয় হাজার ২০২টি মামলা রাজনৈতিক হয়রানিমূলক বিবেচিত হওয়ায় তা প্রত্যাহারের সুপারিশ করে। মাঠপর্যায়ের কমিটি থেকে পাওয়া প্রস্তাব বিবেচনার লক্ষ্যে ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় কমিটি আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার সভাপতিত্বে আটটি সভা করে। নিরপরাধ ব্যক্তি ও রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের অনর্থক হয়রানি থেকে রেহাই দেওয়ার লক্ষ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যৌথ উদ্যোগে গৃহীত এ কার্যক্রম চলমান থাকবে।