লাভ বেশি হওয়ায় ঘাস হিসেবে বিক্রি হচ্ছে গম গাছ

বগুড়ার সারিয়াকান্দিতে লাভ বেশি হওয়ায় কৃষকরা বিভিন্ন হাটবাজারে পশুখাদ্য (ঘাস) হিসেবে সবুজ গম গাছ বিক্রি করছেন। গত কয়েক বছর ধরে এ উপজেলায় গম চাষের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত ও কাঙ্ক্ষিত মূল্য না পাওয়ায় কৃষকরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।

কৃষি বিভাগ বলছে, ভুট্টা চাষে লাভ বেশি হওয়ায় কৃষকরা গম চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন।

সারিয়াকান্দি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাটবাজারগুলোতে গম গাছ বিক্রি হচ্ছে। বেশি লাভ হওয়ায় কৃষকরা গম উৎপাদনের পরিবর্তে গাছগুলো কেটে আঁটি বেঁধে বাজারে বিক্রি করছেন। প্রতিআটি গাছের দাম পাঁচ টাকা। যা গরু, ছাগল, ভেড়াসহ সকল প্রকার পশুখাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

কৃষকরা জানিয়েছেন, প্রতিবিঘা জমিতে সর্বোচ্চ আট মণ গম পাওয়া যায়। দুই হাজার টাকা মণ হিসেবে বাজারমূল্য ১৬ হাজার টাকা। সেখানে প্রতিবিঘা জমিতে গম গাছ হয় চার হাজারের বেশি আঁটি। যার বাজারমূল্য ২০ হাজার টাকা। আবার গম হিসেবে বিক্রি করতে পরিপক্ব হতে আরও অন্তত দুই মাস অপেক্ষা করতে হবে। সেক্ষেত্রে আগেই পশুখাদ্য হিসেবে তারা (কৃষক) গম গাছ বিক্রি করে অন্য ফসল চাষাবাদ করতে পারছেন। আর তাই জমির সদ্য ফুল বের হওয়া গম গাছগুলো কেটে আঁটি বেঁধে বাজারে বিক্রি করছেন।

সারিয়াকান্দি উপজেলার ফুলবাড়ি ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর গ্রামের কৃষক তৌহিদুল ইসলাম জানান, তিনি তার ১০ শতাংশ জমিতে গম চাষ করেছেন। সদ্য ফুল বের হওয়া গমের গাছ বিক্রি করতে সারিয়াকান্দি বাজারে এসেছেন। ওই পরিমাণ জমি থেকে তিনি ১৩০০ আঁটি গম গাছ পেয়েছেন। প্রতিআঁটি গম গাছ পাঁচ টাকা দরে বিক্রি করছেন।

তিনি আরও জানান, গম করার চেয়ে কাঁচা ঘাস হিসেবে বাজারে বিক্রি করেই বেশি লাভ হয়। তা ছাড়া কম সময়ে বাজারে বিক্রি করে জমিতে অন্য ফসলের আবাদ করা যায়।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, সারিয়াকান্দি উপজেলায় দিন দিন গমের আবাদ কমে যাচ্ছে। এখানে গত বছর ৭১০ হেক্টর জমিতে গমের আবাদ হয়েছিল। এ বছর গম চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য হয়েছে ৭০০ হেক্টর জমিতে। এখন পর্যন্ত মাত্র ৩২০ হেক্টর জমিতে গম চাষ হয়েছে। কৃষকদের আগ্রহ না থাকায় এ বছর গম চাষের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হওয়ার সম্ভবনা কম।

সারিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোহাম্মাদ আলী জিন্নাহ বলেন, ‘ভুট্টায় বেশি লাভ হওয়ায় এ উপজেলায় কৃষকরা ভুট্টা চাষে বেশি ঝুঁকে পড়েছেন। ফলে উপজেলায় গমের আবাদ কমে গেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘যেসব কৃষক পশুখাদ্য হিসেবে গমের চাষ করেছেন তারা বাজারে বিক্রি করছেন। আর যারা ফসল হিসেবে চাষ করেছেন বিক্রি করছেন না।’