রাজশাহীতে ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয়ে নারী চিকিৎসকের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন এক যুবক। পরে বিয়ের প্রস্তাব দেন। তখন চিকিৎসকের পরিবার খোঁজ নিয়ে জানতে পারে ওই যুবক ডিম ব্যবসায়ী। এতে বাধে বিপত্তি। বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে দেয়। তারই সূত্রে নিজ বাসা থেকে নারী চিকিৎসক অপহরণের শিকার হন। সোমবার অপহরণের ঘটনায় নগরের চন্দ্রিমা থানায় করা মামলার এজাহার থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
পাবনার সাথিয়া থানার বামনডাঙ্গা গ্রামের আবু হানিফের ছেলে তানজিম খান তাজ নীরব (৩০) এই অপহরণের ঘটনায় জড়িত বলে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে। সোমবার ভোরে নিজ বাসা থেকে অপহরণের শিকার হন নারী চিকিৎসক। তিনি রাজশাহীর একটি বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ থেকে সম্প্রতি ব্যাচেলর অব ডেন্টাল সার্জারি (বিডিএস) শেষ করেছেন। তার বাবা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা। তাদের বাসা রাজশাহী নগরে। ওই দিন রাতে চন্দ্রিমা থানায় মামলা করেন চিকিৎসকের বাবা। মামলায় তানজিম খানের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত তার কয়েকজন সহযোগীকে আসামি করা হয়েছে।
চিকিৎসকের পরিবার জানায়, ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয়ে নারী চিকিৎসকের সঙ্গে প্রায় চার বছর ধরে প্রেম করে আসছিলেন তানজিম খান তাজ নীরব। সম্প্রতি বিয়ের প্রস্তাব দেন। পরে চিকিৎসকের পরিবার খোঁজ নিয়ে জানতে পারে তানজিম ম্যাজিস্ট্রেট নয়, ডিম ব্যবসায়ী। এই পরিচয় জেনে বিয়ের প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে অপহরণের পরিকল্পনা করেন তানজিম খান।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, তানজিম খানের বর্তমান ঠিকানা পদ্মা আবাসিক এলাকার ১০ নম্বর রোডে। বাড়ি পাবনার সাথিয়ায়। প্রায় চার বছর আগে চিকিৎসকের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। তখন নিজেকে ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয় দেন। সম্প্রতি বিয়ের প্রস্তাব দিলে জানা যায় তানজিম মূলত ডিম ব্যবসায়ী। প্রতারণার বিষয়টি জেনে বিয়ের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে দেন মামলার বাদী। তখন থেকে চিকিৎসক ও তার পরিবারের সদস্যদের হুমকি এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে আসছিলেন তানজিম।
সোমবার ভোরে চিকিৎসকের বাবা ফজরের নামাজ পড়ার জন্য বাসা থেকে বের হন। রাস্তায় উঠলে পেছন থেকে তানজিম ও তার সহযোগীরা তাকে মারধর করে মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে কালো রঙের গাড়িতে (ঢাকা মেট্রো-চ-১৫-৫০৫২) তোলেন। পরে তার পকেটে থাকা চাবি নিয়ে বাসার ভেতরে ঢোকেন। ঘরে ঢুকে তানজিম তার হাতে থাকা রামদা দিয়ে চিকিৎসকের মায়ের মাথায় আঘাত করে রক্তাক্ত করেন। পরে তার মেয়েকে গাড়িতে তুলে নেন। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে বাদীকে সলঙ্গা থানার হাটিকুমরুল এলাকায় রাস্তার পাশে ফেলে মেয়েকে নিয়ে চলে যান অপহরণকারীরা। তিনি বাড়ি ফিরে রাতে থানায় মামলা করেন।
রাজশাহী নগর পুলিশের কমিশনার মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান বলেন, ‘অপহরণকারী তানজিম নিজেকে ম্যাজিস্ট্রেট পরিচয় দিয়ে চিকিৎসকের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়েন। যখন তার পরিবার জানতে পারে তিনি ভুয়া ম্যাজিস্ট্রেট, তখন বিয়ে প্রস্তাব ফিরিয়ে দেয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে চিকিৎসককে অপহরণ করা হয়।’
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মঙ্গলবার রাত ৮টার দিকে চন্দ্রিমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মতিয়ার রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘এখনও নারী চিকিৎসককে উদ্ধার করা যায়নি। উদ্ধারের চেষ্টা চালাচ্ছে পুলিশ।’
ওসি আরও বলেন, ‘ওই চিকিৎসকের বাবা থানায় মামলা করেছেন। এজাহারে বিয়ের প্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় অপহরণের শিকার হয়েছেন বলে উল্লেখ করেছেন। অপহরণের কাজে ব্যবহৃত গাড়িটি নম্বরসহ শনাক্ত করতে পেরেছে পুলিশ। ওই নম্বর বিভিন্ন থানায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাদীও অপহরণকারীদের চিনতে পেরেছেন। আমরা ওই চিকিৎসককে উদ্ধারে সব ধরনের তৎপরতা চালাচ্ছি।’