রাবিতে পোষ্য কোটা বাতিল দাবি: খোলা আকাশের নিচে রাত কাটালেন অনশনরত শিক্ষার্থীরা

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে অনড় অবস্থানে রয়েছেন আমরণ অনশনরত শিক্ষার্থীরা। বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ জোহা চত্বরে প্রথমে ৩ শিক্ষার্থী অনশনে বসেন। শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) ভোর পর্যন্ত তা বেড়ে ৯ জনে দাঁড়িয়েছে।

অনশনরত শিক্ষার্থীরা হলেন–– বিশ্ববিদ্যালয়ের পপুলেশন সায়েন্সেস অ্যান্ড হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান মারুফ ও আমান উল্লাহ খান, ফোকলোর বিভাগের আল শাহরিয়ার শুভ, আইন বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাইদ, শারীরিক শিক্ষা ও ক্রীড়া বিজ্ঞান বিভাগের মেহেদী হাসান মাসুম, মনোবিজ্ঞান বিভাগের আজমাইন আসিফ, সমাজকর্ম বিভাগের আজাদ আলী, ফারসি ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের দিদার এবং ওয়াজেদ শিশির অভি।

অনশনরত শিক্ষার্থীরা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা সমাজের অগ্রগামী গোষ্ঠী। তাদের পোষ্য কোটা দিয়ে আরও অগ্রগামী করা হচ্ছে। এতে তাদের সঙ্গে নিম্ন মধ্যবিত্তদের পার্থক্য আরও বাড়ছে। যেটা একটা বড় ধরনের বৈষম্য। বৈষম্যমূলক এ কোটা বাতিল না হওয়া পর্যন্ত আমরণ অনশন চালিয়ে যাবেন তারা।

জানতে চাইলে অনশনরত শিক্ষার্থী আবু সাঈদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, প্রশাসনের ভাষ্যমতে পোষ্য কোটা কোনও কোটা না।  তাদের সন্তানদের জন্য কিছু অতিরিক্ত আসন এগুলো। আমার কথা হলো, অতিরিক্ত আসনগুলো যদি একান্তই সংরক্ষিত রাখা হয় তাহলে সেগুলো শ্রমিকের-রিকশাচালকের সন্তানদের দেওয়া হোক। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে এখানে উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) ফরিদ উদ্দিন খান ও প্রক্টর এসেছিলেন। উনারা আমাদের কোনও যৌক্তিক সমাধান দিতে পারেননি। আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সকাল ১০টায় আমাদের নিয়ে বসবেন বলে জানিয়েছেন। তিনি এ জায়গায় এসে সিদ্ধান্ত না দেওয়া পর্যন্ত আমরা অনশন ভাঙব না।

অনশনরত পপুলেশন সায়েন্স অ্যান্ড হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট বিভাগের আরেক শিক্ষার্থী আমান উল্লাহ খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা গতকাল সন্ধ্যা থেকে খোলা আকাশের নিচেই আছি। আমরা বিদ্যমান পোষ্য কোটা বাতিলের দাবিতে আরও ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে আজকের (শুক্রবার) মধ্যে এই পোষ্য কোটার কবর রচনার মধ্য দিয়ে আমরা একটা ইতিহাস রচনা করতে চাই। আমরা আশা করি, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের বোধদয় হবে এবং এই পোষ্য কোটা বাতিল হবে।

এদিকে পোষ্য কোটা বাতিলে ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সালাউদ্দিন আম্মার। দাবি মানা না হলে আমরণ অনশনে বসার ঘোষণা দিয়েছেন তিনি।

এর আগে, গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে পোষ্য কোটার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ্ হাসান নকীব বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, প্রায় ৫০ বছর ধরে এই কোটা চলে আসছে। আমরাই এবার কোটা সংস্কারে বিষয়টি নিয়ে পর্যালোচনা করেছি এবং ৪ শতাংশ থেকে ৩ শতাংশ করেছি। বিষয়টি নিয়ে উপকমিটির সভায় বেশ আলোচনা হয়েছে। অধিকাংশের মত কোটা রাখার পক্ষে থাকায় সেটা বাতিল করা সম্ভব হয়নি। তবে ক্রমাগত বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করব।