বগুড়ার সোনাতলা উপজেলা আওয়ামী লীগের ৭১ সদস্য বিশিষ্ট পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। কমিটিতে তিন জন মৃত ও বিতর্কিত, সরকারি চাকরিজীবী ও বহিষ্কৃতরা স্থান পেয়েছেন। আবার অনেক ত্যাগীকে বাদ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) তালিকা হাতে পাওয়ার পর ত্যাগী নেতাকর্মীদের মাঝে প্রচণ্ড ক্ষোভ ও হতাশার সৃষ্টি হয়েছে।
সোনাতলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান মিনহাদুজ্জামান লিটন জানান, তাদের সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই মেয়াদ শেষে বিতর্কিত কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে।
জানা গেছে, ২০২১ সালের ১৩ মার্চ বগুড়ার সোনাতলা উপজেলা আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এর এক মাস পর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত ৭১ সদস্য বিশিষ্ট প্রস্তাবিত কমিটি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন ও জেলা কমিটির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও দফতর সম্পাদকের কাছে জমা দেওয়া হয়।
বগুড়া জেলা আওয়ামী লীগ দীর্ঘ দুই বছর ৯ মাস পর গত ৩০ জানুয়ারি প্রস্তাবিত ওই কমিটি সংশোধন ও সংযোজন করে। ত্যাগীদের বাদ দিয়ে মনগড়া কমিটি গঠনের পর সেটি গোপন রাখা হয়। জেলা আওয়ামী লীগ অনুমোদিত ওই কমিটির তালিকা বৃহস্পতিবার বাহকের মাধ্যমে সোনাতলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির কাছে পৌঁছানো হয়েছে।
অনুমোদিত কমিটিতে সম্পাদক মণ্ডলীতে তিন জন মৃত ব্যক্তিকে রাখা হয়েছে। তারা হলেন- মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম খান, স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যা বিষয়ক সম্পাদক ডা. আবদুল মান্নান ও শ্রম বিষয়ক সম্পাদক আবদুল গফুর। অজ্ঞাত কারণে তালিকা থেকে প্রায় ২০ ত্যাগী নেতাকর্মীকে বাদ দেওয়া হয়েছে।
গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বগুড়া-১ (সারিয়াকান্দি-সোনাতলা) আসনে নৌকার প্রার্থী ছিলেন সাহাদারা মান্নান। অথচ স্বতন্ত্র প্রার্থী শাহাজাদী আলম লিপির পক্ষে কাজ করেন সাবেক সহ-সভাপতি আতাউর রহমান গেদা। পরে তাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে তাকে ৬নং সহ-সভাপতি করা হয়েছে। কমিটিতে নতুন মুখ এসেছে ১৫ জন। প্রস্তাবিত কমিটিতে সিনিয়র সহ-সভাপতি হিসেবে রাখা হয়েছিল- শাহিদুল বারী খান রব্বানী ও সিনিয়র যুগ্ম সম্পাদক নবীন আনোয়ার কমরেডকে। অনুমোদিত কমিটিতে রব্বানীকে ৩নং সহ-সভাপতি ও কমরেডকে ২নং যুগ্ম সম্পাদক করা হয়েছে।
সোনালী ব্যাংক লিমিটেডের কর্মকর্তা তারাজুল ইসলামও কমিটিতে স্থান পেয়েছেন। মেয়াদ শেষে ঘোষিত পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে নানা অসঙ্গতি থাকায় ত্যাগীদের মাঝে প্রচণ্ড ক্ষোভ ও হতাশার সৃষ্টি হয়েছে। এতে সাংগঠনিক অবস্থান দুর্বল হবে বলে ত্যাগী নেতাকর্মীরা আশঙ্কা করছেন।
সোনাতলা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান মিনহাদুজ্জামান লিটন বলেন, তাদের কমিটির মেয়াদ তিন বছর। তিন বছর চার মাস আগে ২০২১ সালের ১৩ মার্চ কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হয়। এক মাসের মাথায় ৭১ সদস্যের প্রস্তাবিত কমিটি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং জেলা শাখার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের কাছে জমা দেওয়া হয়। দীর্ঘদিন পর গত ৩০ জানুয়ারি সোনাতলা উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটির অনুমোদন দেওয়া হয়।
তিনি আরও জানান, এত দিন গোপন থাকার পর বৃহস্পতিবার তিনি পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা পেয়েছেন। কমিটি ঘোষণার আগে তাদের সঙ্গে একবারও আলোচনা করা হয়নি। মৃত, বিতর্কিত, সরকারি চাকরিজীবী ও নৌকা বিরোধীদের স্থান দেওয়া হয়েছে। অনেক ত্যাগী নেতাকে বাদ দেওয়ায় কোন্দলের সৃষ্টি ছাড়াও সাংগঠনিক ভিত্তি দুর্বল হবে। এ কমিটি কোনও স্বার্থান্বেষী মহলের ষড়যন্ত্রের ফসল।