ডিজাইন দেখে বোঝা যাবে মুক্তিযোদ্ধার কবর: মোজাম্মেল হক

একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বের পর্যায়ে থাকলেও পরবর্তীতে জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে নির্বাসনে পাঠিয়েছিলেন বলে অভিযোগ করেছেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী বীর মুক্তিযোদ্ধা আ ক ম মোজাম্মেল হক। জিয়াউর রহমানকে মুক্তিযুদ্ধে একজন অনুপ্রবেশকারী বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (২০ জুন) দুপুরে সিরাজগঞ্জের কামারখন্দ উপজেলায় পলাশডাঙ্গা যুব শিবির স্মৃতিসৌধ ও জাদুঘর প্রাঙ্গণে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় প্রতিষ্ঠিত বেসরকারি সাবসেক্টর পলাশডাঙ্গা যুব শিবিরের মুক্তিযোদ্ধা জনতা মিলনমেলায় প্রধান অতিথির বক্তব্য আ ক ম মোজাম্মেল হক এসব মন্তব্য করেন।

মন্ত্রী বলেন, ‘খুনি জিয়া মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে নির্বাসনে পাঠিয়েছিলেন। যদিও তিনি নামে মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন, মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার ছিলেন। জেড ফোর্সের অধিনায়ক ছিলেন। তবে তিনি যে একজন অনুপ্রবেশকারী এবং প্রকৃতপক্ষে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বিশ্বাস করেন না, সেটা প্রমাণ করেছিলেন ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মধ্য দিয়ে।’

জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে নির্বাসিত করেছিলেন। আবার পাকিস্তানি ভাবধারায় এই দেশে ‘জয় বাংলা’ রণধ্বনি বাদ দিয়ে ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ কায়েম করেছিলেন। যোগ করেন মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী।

মোজাম্মেল হক বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধাদের মাসিক ভাতা বাড়ানোসহ অন্যান্য দাবি নিয়ে আলোচনা হবে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের নির্বাচনের পরে। আগামী সেপ্টেম্বর মাসের ২৮-২৯ তারিখে দেশব্যাপী মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার করা হয়েছে। তিনিই সেপ্টেম্বর মাসে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করবেন।’

বাংলাদেশে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান অনেকগুণ বাড়িয়ে দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আপনারা সাথে থাকলে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সকল দাবি পূরণ করা হবে। চিকিৎসার ব্যাপারে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ঢাকায় উন্নত ২২টি হাসপাতালে সর্বোচ্চ চিকিৎসার জন্য স্পেশাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। জুলাই মাস থেকে সারা দেশে সকল মৃত মুক্তিযোদ্ধার জন্য একই ডিজাইনের কবর করে দেওয়া হবে যা দেখে সহজেই যে কেউ বুঝতে পারে মুক্তিযোদ্ধার কবর। আমরা সরকারে থেকে শতভাগ বিদ্যুৎসংযোগ নিশ্চিত করেছি। আগামী ৫ বছরের মধ্যে দেশের ৮০ ভাগ অঞ্চলে চলাচলের রাস্তা পাকা করা হবে।’

পলাশডাঙ্গা যুব শিবিরের যুদ্ধকালীন সহকারী কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট বিমল কুমার দাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মুক্তিযোদ্ধা জনতা মিলনমেলায় আরও বক্তব্য রাখেন সিরাজগঞ্জ–২ (সদর ও কামারখন্দ) আসনের সংসদ সদস্য ড. জান্নাত আরা হেনরী, সিরাজগঞ্জ–৬ (উল্লাপাড়া) আসনের সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা সফিকুল ইসলাম সফি, সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শামীম তালুকদার লাবু, জেলা প্রশাসক মীর মোহাম্মদ মাহবুবর রহমান, সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা অ্যাডভোকেট কে এম হোসেন আলী হাসান, সাধারণ সম্পাদক আব্দুস সামাদ তালুকদার, সিরাজগঞ্জ জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা সফিকুল ইসলাম সফি, সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা চেয়ারম্যান রিয়াজ উদ্দিন, শাহজাদপুর উপজেলা চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা হালিমুল হক মিরু, কামারখন্দ উপজেলা চেয়ারম্যান শহীদুল্লাহ সবুজসহ অন্যান্যরা।

অনুষ্ঠান শেষে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনীর দেওয়া আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে আর্থিক সহযোগিতা তুলে দেওয়া হয়।

উল্লেখ্য, পলাশডাঙ্গা এলাকায় ১৯৭১ সালে গড়ে উঠেছিল বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে উত্তরবঙ্গের সর্ববৃহৎ মুক্তিযুদ্ধের সংগঠন পলাশডাঙ্গা যুব শিবির। যার সার্বিক নেতৃত্বে ছিলেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল লতিফ মীর্জা। যে কারণে যুদ্ধকালীন এই বাহিনী লতিফ মীর্জার বাহিনী নামেও পরিচিত ছিল। এই বাহিনী ছাত্র, শ্রমিক, বেঙ্গল রেজিমেন্টের সদস্য, ইপিআরের সদস্য, বিএলএফের সদস্য ও এফএফের সদস্যদের সমন্বয়ে পরিচালিত হতো। এই পলাশডাঙ্গার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে এই অঞ্চলে (মধ্য অদ্রঘাট) ১৯৭১ সালের ১৭ জুন পাকিস্তানি বাহিনীর সঙ্গে সম্মুখ যুদ্ধ অনুষ্ঠিত হয়। যুদ্ধপরবর্তী সময়ে পাকিস্তানি বাহিনী এই এলাকায় বহু নিরীহ মানুষের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয় এবং বহু নিরীহ মানুষকে হত্যা করে।

পলাশডাঙ্গার বীর মুক্তিযোদ্ধারা সিরাজগঞ্জ, পাবনা, বগুড়া ও রাজশাহীর বিভিন্ন অংশে পাকিস্তানি বাহিনী, রাজাকার, আলবদর, আলসামস বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রায় ৫১টি সম্মুখ যুদ্ধে অংশ নেয় এবং তিনটি থানা দখল করে নেয়।