সবার আগে ভোট দিতে ভোর থেকে কেন্দ্রের বাইরে বৃদ্ধের অপেক্ষা

বয়স ৮২ বছর। জীবনে যতবারই ভোট দিয়েছেন সবার আগে তার ভোটটাই পড়তো। নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেনি জীবনের এই পড়ন্ত বিকেলে এসেও। ভিড়ের কারণে যদি প্রথম ভোটটা দিতে না পারেন তাই সেই ভোর ৫টায় এসে কেন্দ্রের বাইরে অপেক্ষা।

মঙ্গলবার (২১ মে) সকাল সাড়ে ৬টায় দ্বিতীয় ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তথ্য সংগ্রহের জন্য জয়পুরহাট সদর উপজেলার দাদরা উচ্চবিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রে গেলে এই প্রতিবেদকের সঙ্গে দেখা হয় এক বৃদ্ধের। সে সময় কেন্দ্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা ছাড়া আর কেউ ছিলেন না। ভোটকেন্দ্রের বাইরে মাঠের মধ্যে একটি বেঞ্চে হাতে চিরকুট নিয়ে বসে আছেন ওই বৃদ্ধ।

কথা বলে জানা গেলো, বৃদ্ধের নাম শ্রী ওপেন চন্দ্র কর্মকার। তার বাড়ি জয়পুরহাট সদর উপজেলার শুকতাহার আদিবাসীপাড়া গ্রামে। বাবার নাম বিজলি কর্মকার।

শুকতাহার গ্রামের হাবিল হোসেন বলেন, ‘আমার বয়স ৪২ বছর। বুঝ হওয়ার পর থেকেই দেখি ওপেন চন্দ্র কর্মকার সবার আগে ভোট দেওয়ার জন্য আগেভাগে কেন্দ্রে গিয়ে অপেক্ষা করেন। আজও তিনি একইভাবে পায়ে হেঁটে ভোটকেন্দ্রে এসেছেন।’

ভোট দিতে আসা ওপেন চন্দ্র কর্মকার বলেন, ‘আমার বয়স এখন প্রায় ৮২ বছর। আমি যখন থেকে ভোট দিতে শুরু করি তখন থেকেই সবার আগে ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হই। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্রে ভোটার উপস্থিতি বেড়ে যায়। লাইন ধরে ভোট দিতে হয়। এসব কারণে আমি সবার আগে ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হই। আজও ভোর পৌনে ৫টায় বাড়ি থেকে পায়ে হেঁটে কেন্দ্রে এসেছি। এসে দেখি ভোটকেন্দ্রে অন্য কোনও ভোটার নাই। আমি একাই বসে আছি। ৮টা বাজলে ভোট দেওয়া শুরু হবে সেই অপেক্ষাতেই আছি। সবার আগে ভোট দিয়ে চলে যাবো।’

ভোটকেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশের সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মোতাহার হোসেন বলেন, ‘ভোর ৫টার দিকে একজন বয়স্ক লোককে ভোটকেন্দ্রে প্রবেশ করতে দেখি। তাকে জিজ্ঞেস করে জানতে পারি তিনি ভোট দিতে এসেছেন। তার জীবনে সব ভোটই তিনি সবার প্রথমে দিয়েছেন। আমি জীবনে অনেক নির্বাচনি দায়িত্ব পালন করেছি। এমন ব্যতিক্রম লোক কখনও দেখিনি। যে বয়সে চলাফেরা করাই কঠিন সে বয়সে তিনি পায়ে হেঁটে ভোর থেকে ভোটকেন্দ্রে এসে অপেক্ষা করছেন।’

জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ফজলুল করিম বলেন, ‘জয়পুরহাট সদর ও পাঁচবিবি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ১৫১টি ভোটকেন্দ্রে ভোট গ্রহণ চলছে। দুটি উপজেলায় চেয়ারম্যান পদে ১১ জন, ভাইস চেয়ারম্যান পদে ১১ জন ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ৮ জন প্রতিদ্বন্দিতা করছেন। অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটগ্রহণ চলছে। এখন পর্যন্ত কোথাও কোনও সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়নি।’

জয়পুরহাট পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নুরে আলম বলেন, ‘সকাল ৮টা থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়েছে। আমরা সুষ্ঠু নির্বাচন করে দেখিয়ে দিতে চাই। আমাদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র রয়েছে। সেই কেন্দ্রগুলোকে আলাদাভাবে নজরদারি রাখা হবে। নির্বাচন সুষ্ঠু করতে আমরা সমন্বিতভাবে কাজ করছি।  আইনশৃঙ্খলার ব্যত্যয় ঘটলে প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করলে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে এখন পর্যন্ত কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।’