সিরাজগঞ্জের আলোচিত মা ও দুই ছেলে হত্যায় যুবকের মৃত্যুদণ্ড

সিরাজগঞ্জের আলোচিত মা ও দুই ছেলেকে হত্যায় আইয়ুব আলী সাগর নামে এক যুবককে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে তাকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেছেন বিচারক।

রবিবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সিরাজগঞ্জ জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক ফজলে খোদা মো. নাজির এ রায় দেন। রায় ঘোষণার সময় আসামি আদালতে উপস্থিত ছিল। দণ্ডপ্রাপ্ত আইয়ুব আলী সাগর (২৫) উল্লাপাড়া উপজেলার নন্দিগাঁতী গ্রামের বাসিন্দা। নিহতরা হলেন—বেলকুচি থানার মরুপুর গ্রামের সুলতান আলীর স্ত্রী রওশন আরা খাতুন (৩০), তার দুই শিশু ছেলে জিহাদ হোসেন (১০) ও মাহিন (৩)।

আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) আব্দুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের দেড় বছরের মধ্যে সিরাজগঞ্জের আলোচিত এই মামলার রায় দিয়েছেন আদালত। রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। দণ্ডপ্রাপ্ত আইয়ুব আলী এই মামলায় বর্তমানে কারাগারে আছে। রবিবার রায় ঘোষণার সময় আদালতে হাজির করা হয়েছিল। বিকালে আবার জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।’

মামলার নথি থেকে জানা যায়, দুই ছেলে জিহাদ ও মাহিনকে নিয়ে মরুপুর গ্রামে বসবাস করতেন রওশন আরা। স্বামী সুলতান খোঁজখবর না নেওয়ায় তাঁত কারখানায় কাজ করে সংসার চালাতেন। এর মধ্যে একদিন সৎ-ভাগনে সাগর বাড়িতে বেড়াতে আসে। ওই সময় বাড়ির ট্রাংকে জিনিসপত্র ও টাকা দেখেছিল। সেই টাকা নেওয়ার পরিকল্পনা করে ২০২২ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর আবারও বেড়াতে আসে। ওই রাতে খাওয়া-দাওয়া শেষে ঘুমিয়ে পড়ে। গভীর রাতে ট্রাংকের তালা ভেঙে টাকা নেওয়ার চেষ্টা করলে ঘুম ভেঙে যায় রওশনের। এতে বাধা দিলে শিল দিয়ে রওশনের মাথায় আঘাত করে শ্বাসরোধে হত্যা করে। এ সময় ছেলে জিহাদ ও মাহিন জেগে উঠলে তাদের গলা টিপে হত্যা করে। পরে ঘরের দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে দিয়ে চলে যায় সাগর। দুদিন কাজে না যাওয়ায় ছোট বোন লিলি খাতুনের কাছে রওশনের খোঁজখবর জানতে চান সহকর্মীরা। লিলি বোনের বাড়িতে এসে বন্ধ ঘরের দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে তিন জনের লাশ মেঝেতে পড়ে থাকতে দেখেন। এরপর আশপাশের লোকজন ছুটে আসেন। খবর পেয়ে তাদের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। 

এ ঘটনায় ২০২২ সালের ১ অক্টোবর রওশনের ভাই মো. নুরুজ্জামান বেলকুচি থানায় হত্যা মামলা করেন। মামলার পর তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে প্রযুক্তির সহায়তায় সাগরকে গ্রেফতার করে পুলিশ। তাকে আদালতে হাজির করলে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে জানায়, ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ায় বেড়াতে এসে রওশনের ঘরে জিনিসপত্র ও টাকা দেখে চুরির পরিকল্পনা করেছিল। এতে বাধা দেওয়ায় হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে।

পিপি আব্দুর রহমান বলেন, ‘১৩ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় মামলার রায় দিয়েছেন বিচারক। আলোচিত ঘটনা হওয়ায় অল্প সময়ের মধ্যে বিচারকাজ সম্পন্ন করেছেন আদালত।’