মরণব্যাধি ক্যানসার থেকে ইনসাব আলীকে বাঁচাতে প্রায় ১০০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে রাজশাহী শহরের একটি ক্লিনিকে নিয়ে আসছিলেন ছেলে-মেয়ে ও নাতনি। ক্লিনিকে কেমোথেরাপি দিয়ে বাড়ি ফেরার কথা ছিল তাদের। পথিমধ্যে মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেলেন ইনসাব আলী, তার ছেলে-মেয়ে এবং নাতনিসহ পাঁচ জন। অপরজন তাদের প্রতিবেশী সিএনজি অটোরিকশাচালক।
শনিবার (২৫ নভেম্বর) বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে পুঠিয়া উপজেলার বেলপুকুর এলাকায় একটি ট্রাক অটোরিকশাকে চাপা দিলে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার কান্তপুর গ্রাম থেকে ইনসাব আলীকে (৭৫) অটোরিকশায় করে রাজশাহীতে নিয়ে আসছিলেন তার ছেলে আইয়ুব আলী লাবু (৩৫), মেয়ে পারভীন বেগম (৩০), নাতনি রাজশাহীর শাহ মখদুম কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী শারমিন আক্তার (১৭) ও তাদের প্রতিবেশী অটোরিকশাচালক মোখলেসুর রহমান (২৮)। দুর্ঘটনায় তারা সবাই মারা গেছেন।
দুর্ঘটনায় এলাকার কেউ আহত হয়েছেন এমন খবর শুনে নগরীতে অবস্থান করা রাজশাহী কলেজের দর্শন বিভাগের ৩য় বর্ষের ছাত্রী মিথিলা আক্তার (২৩) ছুটে আসেন রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে। জরুরি বিভাগে তিন জনের লাশ দেখতে পান। তাদের লাশ দেখে কান্নায় ভেঙে পড়েন। কারণ ইনসাব আলী হলেন মিথিলার চাচা। পরে একে একে পাঁচ স্বজনের লাশ দেখে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন তিনি।
খবর পেয়ে মিথিলার আরেক চাচাতো বোন সাদিয়া খাতুন হাসপাতালে আসেন। তিনিও নগরীর একটি প্রতিষ্ঠানের ছাত্রী। লাশ জরুরি বিভাগ থেকে মর্গে নেওয়ার আগ পর্যন্ত তাদের আহাজারিতে হাসপাতালের পরিবেশ ভারী হয়ে ওঠে। জরুরি বিভাগে শোকের ছায়া নেমে আসে। তাদের কান্না দেখে চোখের জল ঝরেছে অনেকের।
ইনসাব আলীর ভাতিজি মিথিলা বলেন, বাসা থেকে ফোন করে জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে আসতে বলেছিল। আমার স্বজনরা বলেছিল, এলাকার কোনও আত্মীয় আহত হয়েছেন। কিন্তু হাসপাতালে এসে দেখি সবাই আমার আত্মীয়। একসঙ্গে সবাইকে হারিয়ে ফেলেছি।
নিহতদের স্বজনরা জানান, কিছুদিন আগে ইনসাব আলীর ক্যানসার শনাক্ত হয়। গত বৃহস্পতিবার থেকে রাজশাহীর একটি বেসরকারি ক্লিনিকে তার কেমো দেওয়া শুরু হয়েছে। শুক্রবার দ্বিতীয় কেমো দেওয়া হয়। শনিবার তৃতীয় কেমোটা দেওয়ার কথা ছিল। এজন্য পরিবারের সদস্যরা ইনসাবকে রাজশাহী নিয়ে আসছিলেন। পথিমধ্যে দুর্ঘটনা ঘটে।
রাজশাহীর বেলপুকুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মামুনুর রশীদ বলেন, দুর্ঘটনার পর পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আহত ছয় জনকে উদ্ধার করে রামেক হাসপাতালে নিয়ে যান। এ সময় কর্তব্যরত চিকিৎসক চার জনকে মৃত ঘোষণা করেন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় আরও একজন মারা যান। আরও একজন চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
ওসি আরও বলেন, দুর্ঘটনার পর ট্রাকের চালক পালিয়ে গেছেন। মরদেহ রামেক হাসপাতালের মর্গে আছে। আইনগত প্রক্রিয়া শেষে হস্তান্তর করা হবে।