জয়পুরহাটে এক ঘণ্টার জন্যে উপজেলা পরিষদের প্রতীকী চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ফারহানা আফরীন সাথী। বৃহস্পতিবার (২ নভেম্বর) সকাল ১০টায় সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যানের কক্ষে এক ঘণ্টার জন্য প্রতীকী চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন জয়পুরহাটের চাইল্ড পার্লামেন্ট মেম্বার সাথী।
কন্যাশিশু দিবস উপলক্ষে ইয়েস বাংলাদেশ ও ইয়ুথ ফর চেঞ্জ-এর আয়োজনে ‘গার্লস টেকওভার’ শীর্ষক এই কর্মসূচিতে বৃহস্পতিবার সকালে সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান জনাব এস এম সোলাইমান আলীর নিকট থেকে দায়িত্ব গ্রহণ করে জেলার সকল শিশুর প্রতিনিধি হিসেবে সাথী এই দায়িত্ব পালন করেন।
এ সময় শিশু ফারহানা আফরীন সাথীকে ফুলেল শুভেচ্ছা জানিয়ে নিজের চেয়ারে বসতে দেন চেয়ারম্যান এস এম সোলায়মান আলী এবং পরবর্তী সময়ে প্রতিষ্ঠানের বিশদ বিবরণী দেন। এ ছাড়াও উপজেলা পরিষদের প্রশাসনিক কাঠামো, চলমান নানা উন্নয়নমূলক কার্যক্রম সম্পর্কেও প্রতীকী চেয়ারম্যানকে জানান তিনি। পরবর্তীতে উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন দফতর, প্রশাসনিক কক্ষ ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাও পরিদর্শন করেন শিশু সাথী। দায়িত্ব পালনকালে প্রতীকী চেয়ারম্যান উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিনামূল্যে স্যানেটারি ন্যাপকিন বিতরণের প্রশংসা করেন। এ ছাড়াও চলমান উন্নয়ন কার্যক্রম দ্রুত সম্পাদনের মাধ্যমে উন্নয়নে এই প্রতিষ্ঠান আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে এমন প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
কন্যাশিশুরা সমান সুযোগ এবং অধিকার পেলে বদলে দিতে পারে তাদের নিজেদের জীবন ও তাদের আশপাশের সমাজ। সমাজের মানুষদের এমন বিশ্বাস অন্তরে ধারণ করে সমাজের নেতৃস্থানীয় যে জায়গাগুলোতে নারী বা মেয়েদের খুব কম দেখা যায় কিংবা তাদের সাফল্যের কথা কম শোনা যায় সেই জায়গাগুলোতে নিজেদের অবস্থান, নেতৃত্ব, সিদ্ধান্ত ও সাফল্য যেন মেয়েরা তুলে ধরতে পারে সেই আত্মবিশ্বাস তৈরিকরণের উদ্দেশ্যেই প্ল্যান ইন্টারন্যাশনালের বৈশ্বিক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে এই কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
প্রতীকী চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে জয়পুরহাট কালেক্টরেট বালিকা বিদ্যানিকেতনের দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী ফারহানা আফরিন সাথী বলেন, ‘জয়পুরহাট সদর উপজেলা পরিষদের মতো এমন একটি প্রতিষ্ঠানের প্রতীকী হলেও কিছু সময়ের জন্য চেয়ারম্যান হওয়া সত্যিই আমার কাছে স্বপ্নের মতো। মধ্যবিত্ত পরিবারে বেড়ে উঠলেও আজকের এই দায়িত্বের মাধ্যমে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা নিলাম, ভবিষ্যতে সত্যি সত্যিই এমন কোনও সফল চেয়ারে আসীন হতে করণীয় সকল কিছুই করবো। বাংলাদেশে যদি একজন নারী প্রধানমন্ত্রী হয়ে দেশ চালাতে পারে তাহলে তৃণমূলের কন্যাশিশুরা কোনোভাবেই পিছিয়ে থাকার সুযোগ নেই। সকলে যদি জীবনযুদ্ধে এগিয়ে যেতে উৎসাহ, উদ্দীপনা ও একটু সহযোগিতা পায় তাহলে নারীরাও বড় বড় পদে সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে পারবে।’
এ কর্মসূচি নিয়ে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এস এম সোলায়মান আলী সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। শিশুদের প্রতিনিধি ফারহানা আফরিন সাথীর মাধ্যমে সকল শিশুকে মুক্তমনা হিসেবে বেড়ে উঠে ভবিষ্যতে দেশের সর্বোচ্চ পদগুলোতে নেতৃত্ব দেওয়ার লক্ষ্যে প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
এস এম সোলায়মান আলী বলেন, ‘গার্লস টেকওভার কর্মসূচির মাধ্যমে কন্যাশিশুরা উৎসাহিত হবে এবং নিজেদের স্বপ্নপূরণেও অঙ্গীকারবদ্ধ হবে। যেখানে নারীরাও পিছিয়ে নেই তখন আজকের এই কর্মসূচির মাধ্যমে সমাজের সকল কন্যাশিশুকে এগিয়ে যেতে অনুপ্রেরণা প্রদান করাই মূল লক্ষ্য।’
এনসিটিএফ জয়পুরহাট জেলা ভলান্টিয়ার সমাজকর্মী মো. সালেহুর রহমান সজীবের ব্যবস্থাপনায় ব্যতিক্রমী এই আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন কালেক্টরেট বালিকা বিদ্যানিকেতনের প্রধান শিক্ষক জনাব মাহবুবুল আলম, এনসিটিএফ ফাহিম জামান, সহসভাপতি রুমাইয়া সুলতানা, সাংগঠনিক সম্পাদক শাইলা ইসরাত জাহান শিমু, শিশু গবেষক আমিনা ইসলাম রোজা, আল তাহমিদ রেজা, জেলা ভলান্টিয়ার শান্তনা পারভীনসহ প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন কর্মকর্তা, অভিভাবকবৃন্দ ও গণমাধ্যমকর্মীরা।