কাউন্সিলর হলেন তৃতীয় লিঙ্গের সাগরিকা, বললেন ‘সবসময় জনতার পাশে থাকবো’

রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নির্বাচনে প্রথমবারের মতো তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধি হিসেবে সংরক্ষিত ওয়ার্ডে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েছেন সুলতানা আহমেদ সাগরিকা। ১৯, ২০ ও ২১ নম্বর ওয়ার্ডে আনারস প্রতীকে ছয় হাজার ২৬৩ ভোট পেয়েছেন তিনি। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী নাজমা বেগম পেয়েছেন পাঁচ হাজার ৭০০ ভোট। বুধবার (২১ জুন) রাতে জেলা শিল্পকলা একাডেমি অডিটোরিয়াম থেকে তাকে বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করেছেন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. দেলোয়ার হোসেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রাজশাহী সিটি নির্বাচনে প্রথমবার তৃতীয় লিঙ্গের প্রতিনিধি হিসেবে অংশ নিয়েছেন সাগরিকা। প্রথমবারই জনগণের সাড়া পেয়েছেন। এমন জয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন তিনি ও ভোটাররা। জনকল্যাণে নিজেকে নিবেদিত করে জনগণের ভালোবাসার ঋণ শোধ করতে চান সাগরিকা। 

জয়ের অনুভূতি জানিয়ে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সাগরিকা বলেন, ‘ভোটে জেতার পর অশ্রুতে চোখ ভিজে আসছে। যারা আমাকে ভোট দিয়ে জয়ী করেছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। সবসময় জনতার পাশে থাকবো।’

জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী ছিলাম জানিয়ে সাগরিকা বলেন, ‘কারণ মানুষ ব্যতিক্রম কিছু চেয়েছিল। এই ওয়ার্ডে আমি ছাড়াও পাঁচ জন প্রার্থী ছিলেন। সবার মধ্যে আমার জনপ্রিয়তা বেশি ছিল। ভোটাররা আমাকে জয়যুক্ত করায় তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। আমার জনগোষ্ঠী ছাড়াও ওয়ার্ডের সব বাসিন্দার অধিকার আদায়ে কাজ করবো।’

সাগরিকা তৃতীয় লিঙ্গের অধিকার আদায়ের সংগঠন ‘দিনের আলো হিজড়া সংঘ’র সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। সুবিধাবঞ্চিত সাগরিকা নবম শ্রেণিতে ওঠার পর আর বিদ্যালয়ে টিকতে পারেননি। আগের ক্লাসগুলো পার করেছেন নানা টিপ্পনীতে। শেষমেশ বাড়ি ছাড়তে হয়। এরপর নানা সংগ্রামে কেটেছে জীবন। সব বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে এবার জনপ্রতিনিধি হলেন। 

২০০০ সালে সাগরিকার উদ্যোগে ‘দিনের আলো হিজড়া সংঘ’ সংগঠনের যাত্রা শুরু হয়। ২০০৫ সালে মহিলা অধিদফতর ও ২০০৭ সালে সমাজসেবা অধিদফতর থেকে নিবন্ধন পায় সংগঠনটি। হিজড়াদের ভোটাধিকার, বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অংশীদারিত্ব নিয়ে কাজ করছেন। ২০২২ সাল থেকে রাজনীতিতে সক্রিয় হন।

নির্বাচনে তার এই জয়কে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন সুশীল সামাজের প্রতিনিধিরা। সুবিধাবঞ্চিত এই জনগোষ্ঠীকে সমাজের মূলধারায় ফেরাতে সাগরিকা তৎপর থাকবেন—এমনটাই প্রত্যাশা সবার।

এ বিষয়ে দিনের আলো হিজড়া সংঘের সভাপতি মোহনা বলেন, ‘সুলতানা তিনটি ওয়ার্ডের মানুষের ভোটে জয়ী হয়েছেন। ভোটাররা তাকে সহজভাবে গ্রহণ করেছেন। তার জয়ে আমরা খুশি। পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর কেউ জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হওয়ায় আমাদের অধিকার আদায়ের পথ মসৃণ হবে।’

আরও পড়ুন: সাগরিকাকে নিয়ে কৌতূহলী ভোটাররা, জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী