ধানক্ষেতে দুই কৃষকের কীটনাশক পান, একজনের মৃত্যু

বোরো ধানের জমিতে পানি না পাওয়ার অভিযোগে রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর দুই কৃষক কীটনাশক পান করেছেন। এর মধ্যে এক কৃষক মারা গেছেন। অন্যজন রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

বুধবার বিকালে উপজেলার দেওপাড়া ইউনিয়নের ইশ্বরীপুরে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) ২ নম্বর গভীর নলকূপের ধানক্ষেতের পাশে কীটনাশক পান করেন তারা। সন্ধ্যায় বাড়িতে নেওয়া হলে এক কৃষকের মৃত্যু হয়। 

মৃত অভিনাথ মারান্ডি (৩৬) গোদাগাড়ীর দেওপাড়া ইউনিয়নের নিমঘুটু গ্রামের মৃত বাবুচাঁদ মারান্ডির ছেলে। চিকিৎসাধীন অন্যজনের নাম রবি মারান্ডি (২৭)। তার বাবার নাম গয়ানাথ মারান্ডি। অভিনাথ ও রবির বাড়ি পাশাপাশি। সম্পর্কে তারা চাচাতো ভাই।

খবর পেয়ে বৃহস্পতিবার (২৪ মার্চ) দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জানে আলম, গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বেলাল উদ্দিন সোহেল।

স্থানীয় লোকজন ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, বুধবার বিকালে অভিনাথ ও রবি গভীর নলকূপের কাছে কীটনাশক পান করেন। এরপর দুজনকে বাড়িতে নেওয়া হয়। কিছুক্ষণ পর অভিনাথ মারা যান। রবিকে রামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

মৃত অভিনাথ মারান্ডির স্ত্রী রোজিনা হেমব্রম জানান, ধানক্ষেত শুকিয়ে যাওয়ায় পানি দেওয়ার জন্য তার স্বামী ১০-১২ দিন ধরে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের গভীর নলকূপের দায়িত্বশীলদের বারবার অনুরোধ করেছেন। কিন্তু নলকূপের অপারেটর সাখাওয়াত হোসেন পানি দিচ্ছিলেন না। এ কারণে তার স্বামী ক্ষোভে কীটনাশক পান করেন। একই কারণে অভিনাথের চাচাতো ভাই রবিও কীটনাশক পান করেন।

তবে সাখাওয়াত হোসেন দাবি করেন, মঙ্গলবার তাদের ক্ষেতে পানি দেওয়া হয়েছে। ইশ্বরীপুরে বিএমডিএর ২ নম্বর গভীর নলকূপের অধীনে দেড়শ একর জমি ধান চাষের আওতায় এসেছে। কোথাও পানির সংকট নেই। এরপরও কেন তারা আত্মহত্যা করতে গেলেন বিষয়টি বুঝতেছি না।

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের গোদাগাড়ী জোন-১-এর সহকারী প্রকৌশলী রফিকুল হাসান বলেন, তারা স্বপ্রণোদিত হয়েই ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। বিষয়টি খতিয়ে দেখছি আমরা। সেখানে প্রায় দেড়শ বিঘা জমিতে ধান চাষ হয়েছে। কোথাও পানির সংকট নেই।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানে আলম বলেন, ওই কৃষকের ধানক্ষেত পরিদর্শন করেছি। তার ক্ষেতে পানি আছে। আশপাশের ক্ষেতেও পানি রয়েছে। তবে তিনি কেন আত্মহত্যা করলেন, এর পেছনে অন্য কোনও কারণ আছে কিনা তা তদন্ত করে দেখা দরকার।

গোদাগাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কামরুল ইসলাম বলেন, মৃত কৃষকের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছি। এ ব্যাপারে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।