ছয়তলা থেকে ইটের রেলিং পড়ে নারীর মৃত্যু, ৭০ হাজারে মীমাংসা

বগুড়া শহরে ছয়তলা ভবনের ছাদের ইটের রেলিং ভেঙে মাথায় পড়ে পারুল বেগম (৩৮) নামে এক গৃহকর্মীর মৃত্যু হলেও এখন পর্যন্ত কোনও মামলা হয়নি। ওই ভবনের মালিক স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, পুলিশ ও প্রভাবশালীদের সহযোগিতায় ওই নারীর পরিবারকে ৭০ হাজার টাকার বিনিময়ে বিষয়টি মীমাংসা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

মঙ্গলবার (৮ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফন করা হয়। এতে সাধারণ মানুষের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। তারা বলছেন, দিনে এমন ঘটনা ঘটলে অনেক মানুষের প্রাণহানি হতো।

নাম ও পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন এলাকাবাসীর দাবি, দুর্ঘটনার পরপরই প্রভাবশালী মালিক পক্ষ স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, প্রভাবশালী ব্যক্তি এবং পুলিশকে ম্যানেজ করেন। মামলা থেকে বাঁচতে ভবন মালিক সোমবার রাতে সদর থানায় নিহতের পরিবারকে নগদ ৭০ হাজার টাকা দেন। এ ছাড়া পুলিশ ও প্রভাবশালীদের হাতেও কিছু দেওয়া হয়েছে। ফলে পুলিশ ময়নাতদন্ত ছাড়াই মঙ্গলবার দুপুরে নিহত পারুল বেগমের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছে।

তারা আরও দাবি করেন, দিনের বেলায় এ ঘটনা ঘটলে অনেক মানুষের প্রাণহানির ঘটনা ঘটতো। দরিদ্র পরিবার আইনের আশ্রয় না নিলেও প্রশাসন বাদী হতে পারতো। তদন্ত করে দেখতে পারতো ভবনটি পৌরসভার নকশা অনুসারে নির্মাণ বা অন্য কোনও সমস্যা ছিল কিনা? তারা এ ঘটনায় ব্যবস্থা নিতে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

বগুড়া পৌরসভার ৫ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রেজাউল করিম ডাবলু জানান, তিনি ভবন মালিকের কাছ থেকে ৭০ হাজার টাকা নিয়ে নিহতের পরিবারকে দিয়ে মীমাংসা করে দিয়েছেন।

সদর পুলিশ ফাঁড়ির টিএসআই খোরশেদ আলম রবি জানান, দরিদ্র পরিবার মামলা করতে রাজি হয়নি। তারা ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ বাড়িতে নিয়ে গেছে। অর্থের বিনিময়ে মীমাংসার বিষয়টি তার জানা নেই বলে দাবি করেন।

নিহতের ছেলে পলাশ জানান, তারা এ বিষয়ে পত্রিকায় প্রতিবেদন বা অন্য কোনও সহায়তা নিতে চান না। এদিকে, মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় ভবনের অন্যতম মালিক মাহমুদ হাসান পিন্টুর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

স্থানীয়রা জানান, নিহত পারুল বেগম বগুড়া শিবগঞ্জ উপজেলার বুড়িগঞ্জ ইউনিয়নের বিলহামলা গ্রামের জামাল হোসেনের স্ত্রী। তারা শহরের সুলতানগঞ্জপাড়ার গোয়ালগাড়িতে ভাড়া বাসায় থাকতেন। পারুল শহরের কাটনারপাড়া এলাকায় মাহমুদ হাসান পিন্টু নামে এক ব্যবসায়ীর ছয়তলা ভবনের একটি ফ্ল্যাটে ব্যাংকারদের রান্নার কাজ করতেন। সোমবার মাগরিবের নামাজের পর সন্ধ্যা সোয়া ৬টায় জনবহুল ও বাণিজ্যিক ওই এলাকা ফাঁকা ছিল। পারুল কাজ শেষে বক্সে সন্তানদের জন্য খাবার নিয়ে ভবন থেকে নামেন। তিনি প্রধান ফটক পেরিয়ে রাস্তায় অটোরিকশার জন্য দাঁড়ানো ছিলেন। এ সময় হঠাৎ বিকট শব্দে ওই ভবনের ছয়তলার ছাদের রেলিং ভেঙে রাস্তায় পড়ে। এ সময় ওই নারী ইটের নিচে চাপা পড়েন।

প্রতিবেশী মঞ্জু, আনারুল ইসলাম ও একটি দোকানের ম্যানেজার রাশেদ সুলতান জুয়েল জানান, ওই ভবনের ছয়তলার ছাদের প্রায় ৩০ ফুট লম্বা রেলিং ভেঙে রাস্তায় পড়ে। তখন ওই ভবনের মেসে রান্নার কাজে নিয়োজিত পারুল বেগম ইটের নিচে চাপা পড়েন। তার মাথা থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। দ্রুত তাকে উদ্ধার করে অটোরিকশায় করে বগুড়া শজিমেক হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। 

প্রত্যক্ষদর্শীরা আরও জানান, ওই এলাকায় সারা দিন যানজট থাকে এবং প্রচুর জনসমাগম হয়। ঘটনার সময় রাস্তা ফাঁকা থাকায় অনেকে প্রাণে রক্ষা পেয়েছেন।

বগুড়া ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সিনিয়র স্টেশন অফিসার আবদুল হালিম জানান, মাহমুদ হাসান পিন্টু নামে এক ব্যবসায়ীর মালিকানাধীন ওই ছয়তলা ভবনের ছাদের ওপর ইট দিয়ে রেলিং দেওয়া হয়। ছাদের উত্তর-পশ্চিম পাশে ইট দিয়ে ফাঁকা ফাঁকা করে সরু রড দেওয়া ছিল। এগুলো রেলিংয়ের ধরে রাখার ক্ষমতা ছিল না।