চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘‘জিআই সনদ পাওয়ার মধ্য দিয়ে ব্র্যান্ডিং হলো চাঁপাইনবাবগঞ্জের ‘খিরসাপাত’ আম। পরে এই পরিচিতি দিয়ে মেধাসত্ত্বও পাওয়া যাবে। এতে দেশীয় এবং আন্তর্জাতিকভাবে লাভবান হবে জেলার ‘খিরসাপাত’ আম। এখন থেকে এই আম অন্য নামে কেউ বাজারজাত করতে পারবে না এবং ক্রেতারাও প্রতারিত হবেন না।’
ড. মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আরও মানসম্মতভাবে এই আমের উৎপাদন বাড়াতে স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ও উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের মাধ্যমে কৃষকদের প্রশিক্ষণের উদ্যোগ এবং চাষিদের মাঝে সদনপত্র দেওয়া হবে।’
ড. মো. শফিকুল ইসলাম জানান, কেবল চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় ৩ হাজার ৪০০ হেক্টর জমিতে প্রতিবছর ৩৫ হাজার মেট্রিক টন খিরসাপাত আম উৎপাদন হয়।
লোক সংস্কৃতির গবেষক প্রফেসর ড. মাজহারুল ইসলাম তরু বলেন,‘‘প্রাচীন লোক সংস্কৃতি ‘আলকাপ’ গানের ছড়ায় আড়াইশ জাতের আমের মধ্যে এই ‘খিরসাপাত’ আমের নাম রয়েছে। এছাড়া জেলার গেজেট অনুসন্ধানেও খিরসাপাত আমকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের আম বলে উল্লেখ করা হয়।’’
চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মঞ্জুরুল হুদা বলেন, ‘খিরসাপাত আম জিআই সনদ পাওয়ায় এখন থেকে বাজারজাতের সময় আমের গায়ে ট্যাগ লাগানো থাকবে। ক্রেতারাও আমটি চিনতে পারবেন। এতে অন্য আম আর বাজারে চালিয়ে দিতে পারবে না। চাষিরাও মূল্য পাবেন, আমের রাজ্যে কর্মসংস্থান আরও বাড়বে। এভাবে খিরসাপাত আমের একটি ব্র্যান্ডিং হবে এবং আন্তর্জাতিকভাবে দেশের আমের ইতিহাস ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ হবে।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জবাসীকে অভিনন্দন জানিয়ে জেলা প্রশসক এ জেড এম নুরুল হক বলেন,‘খিরসাপাত আম জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ায় এ আমের বাণিজ্যিক উৎপাদন ও সম্প্রসারণ এবং দেশের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাজারে রফতানির বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়া হবে। অনেক দিনের চাওয়া ছিল জেলাবাসীর। এর ফলে জেলার উন্নয়নে এটি মাইলফলক হবে।’ সরকার ও পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদফতরকে কৃতজ্ঞতা জানান জেলা প্রশাসক।
রবিবার সকালে শিল্প মন্ত্রণালয়ে শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ন এই সনদ দেন। সনদপত্র গ্রহণ করেন বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের আওতাধীন উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের (গাজীপুর) পরিচালক ড. মোদন গোপাল সাহা ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্রের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. শফিকুল ইসলাম। ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে আমের রাজ্য চাঁপাইনবাবগঞ্জের খিরসাপাত আমের অনুকূলে নিবন্ধন সনদ দেয় শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন পেটেন্ট, ডিজাইন ও ট্রেডমার্কস অধিদফতর (ডিপিডিটি)।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ আঞ্চলিক উদ্যানতত্ত্ব গবেষণা কেন্দ্র জানায়, শুরুটা প্রায় ২শ বছর আগে। ময়মনসিংহের মহারাজা সুতাংশু কুমার আচার্য্য বাহাদুর চাঁপাইনবাবগঞ্জের কানসাটে গড়ে তোলেন একটি আমবাগান। সেই বাগানেই অন্যান্য উৎকৃষ্ট জাতের আমের সঙ্গে চাষ হতো খিরসাপাত আম। এছাড়া ১৯৫৫ সালে স্থানীয় লোকসংগীত আলকাপ গানের বন্দনা ছড়ায় উল্লেখ রয়েছে খিরসাপাত আমের কথা। বর্তমানে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার পাঁচটি উপজেলায় বাণিজ্যিকভাবে চাষ হচ্ছে সুস্বাদু এই জাতটি।
আরও পড়ুন: জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পেলো খিরসাপাত আম