নেত্রকোনার হাওরাঞ্চল খালিয়াজুরীতে ইজারাকৃত জলাশয়ের মাছ লুট করতে গিয়ে দুই পক্ষের লোকজনের সংঘর্ষের ঘটনায় জেলার মদন উপজেলার কৃষক রোকন মিয়া ও অটোরিকশাচালক ইয়াছিন মিয়া নিখোঁজ হন। কিন্তু ঘটনার তিন দিন পেরিয়ে গেলেও নিখোঁজ ওই দুই ব্যক্তির কোনও সন্ধান মেলেনি।
নিখোঁজ রোকন মিয়ার বাড়ি মদন উপজেলার তিয়শ্রী ইউনিয়নের বাগজান গ্রামে এবং ইয়াছিন মিয়ার বাড়ি একই উপজেলার কাইটাইল ইউনিয়নের গোবিন্দপুর গ্রামে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, খালিয়াজুরী ধনু নদের রসুলপুর ফেরিঘাট এলাকায় পারাপারকে কেন্দ্র করে মাছ শিকারিদের সঙ্গে স্থানীয় রসুলপুর ও জগন্নাথপুর গ্রামের লোকজনের সংঘর্ষ হয়। এতে উভয়পক্ষের অন্তত অর্ধশত লোকজন আহত হয়। সংঘর্ষ চলাকালে কমপক্ষে শতাধিক অটোরিকশা, পিকআপ ভ্যান ভাঙচুর ও তাতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এ সময় রোকন মিয়া ও অটোরিকশাচালক ইয়াছিন মিয়া নিখোঁজ হয়। পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর লোকজন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে ঘটনাস্থল থেকে অন্তত ৪০ জনকে আটক করে।
এ ঘটনার পর থেকেই খালিয়াজুরী উপজেলার জগন্নাথপুর, রসুলপুর এবং মদন উপজেলার গোবিন্দশ্রীসহ বেশ কিছু গ্রামে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে। বিষয়টি নজরে নিয়ে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের নির্দেশে মদন উপজেলার বিএনপির সভাপতিসহ দলীয় নেতাকর্মীরা খালিয়াজুরী উপজেলা বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে রবিবার দিনভর জরুরি সভা করেন। সভায় সিদ্ধান্ত মোতাবেক দুই উপজেলার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য দলীয় নেতাকর্মীদের জিম্মায় আটকদের পুলিশ হেফাজত থেকে ছাড়িয়ে আনার সিদ্ধান্ত হয়। তবে অন্য উপজেলার যারা আটক হয়েছেন তাদের ব্যাপারে পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী সিদ্ধান্ত হবে বলে জানা যায়।
এদিকে নিখোঁজ রোকন ও ইয়াছিনের বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখছেন বলে মদন উপজেলা বিএনপির সভাপতি নুরুল আলম জানান।
কিন্তু এরই মধ্যে রবিবার রাতে মদন উপজেলার গোবিন্দশ্রী গ্রামসহ কয়েকটি গ্রামে মাইকিং করে সোমবার সকালে যা যা আছে তাই নিয়ে জগন্নাথপুর ও রসুলপুর আক্রমণের ঘোষণা দেওয়া হয়। এর পরপরই সংঘর্ষ ঠেকাতে সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের পক্ষে মদন উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মাইকিং করা হয়। এ ছাড়া সকাল থেকেই সেনাবাহিনী ও পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে অবস্থান নেওয়ায় সোমবার কোনও সংঘর্ষ হয়নি। দুপুর ২টা পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহ ধরে নেত্রকোনার হাওরাঞ্চল খালিয়াজুরী ও মদন উপজেলার বিভিন্ন ইজারাকৃত জলমহালের মাছ লুটপাট করার মহোৎসব চালিয়েছে একশ্রেণির লোকজন। পূর্বঘোষণা অনুযায়ী প্রতিদিনিই ময়মনসিংহের নান্দাইল, গৌরিপুর, ঈশ্বরগঞ্জ, কিশোরগঞ্জের তাড়াইল, নেত্রকোনা সদর, আটপাড়া, কেন্দুয়া, মদন ও খালিয়াজুরী উপজেলার হাজার হাজার লোকজন সমবেত হয়ে হাওরের ইজারাকৃত বিলের মাছ লুট করে আসছে। গত এক সপ্তাহে মদন উপজেলার লুনেশ্বর বিল, খালিয়াজুরী উপজেলার কীর্তনখলা বিল, কারি বিল, উচাবাইদা বিল, হাইলা বিলসহ বেশ কয়েকটি ইজারাকৃত বিলের মাছ লুট করেছে মাছ শিকারিরা। প্রশাসনের লোকজনের বাধা উপেক্ষা করেই প্রতিদিন এমন ঘটনা ঘটছে। যেসব বিলের মাছ লুট হয়েছে সেগুলোর ইজারামূল্য প্রায় ৪ কোটি টাকা।
নিখোঁজ ইয়াছিন মিয়ার মা সুলতানা আক্তার বলেন, ‘আমার ছেলে মাছ ধরতে যায়নি। মাছ ধরার লোকজনকে নিয়ে গিয়েছিল। মারামারির সময় আমার ছেলে অটোতে বসেছিল। পরে সেখানকার লোকজন আমার ছেলেকে মারপিট করতে থাকলে সে দৌড়ে গিয়ে পাশের ভুট্টাক্ষেতে পালায়। পরে আমার এক খালাতো ভাই নাজিম মিয়াকে ফোন করে বিষয়টি জানায়। এরপর থেকেই তার মোবাইল ফোন বন্ধ রয়েছে।’ সুলতানা আক্তারের একমাত্র ছেলে ইয়াছিন মিয়ার জন্য তার মা ও তার পরিবারের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
এ বিষয়ে খালিয়াজুরী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মকবুল হোসেন বলেন, ‘মদন উপজেলার যে দুজন নিখোঁজ রয়েছেন এ বিষয়টি আমার জানা নেই।’