আন্তর্জাতিক নারী দিবস

ময়মনসিংহের কৃষি বিভাগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন নারী কর্মকর্তারা

বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। এখনও গ্রামাঞ্চলে নারীরা পুরুষদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কৃষিকাজে ভূমিকা রেখে চলেছেন। তবে কৃষি ‘পুরুষদের‘ কাজ বলে এখনও একটি ধারণা সমাজে রয়ে গেছে। তবে সেই ধারণা বদলে দেবে দেশের সবচেয়ে নতুন বিভাগ ময়মনসিংহের দিকে তাকালে। এই বিভাগের কৃষি খাতের নেতৃত্ব দিচ্ছেন নারী কর্মকর্তারা। বিভাগীয় দুটি পদের মধ্যে দুটিতেই নারী কর্মকর্তা, জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরে চারটি পদের মধ্যে চার জনই নারী কর্মকর্তা। এছাড়া ময়মনসিংহ বিভাগের ১৩টি উপজেলার মধ্যে ১০টি উপজেলায় রয়েছেন নারী কৃষি কর্মকর্তা। এসব নারী কর্মকর্তা নানান সীমাবদ্ধতার মধ্যেও আন্তরিকতা দিয়ে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।

ময়মনসিংহ বিভাগীয় কৃষি বিভাগের প্রধান হিসেবে আছেন অতিরিক্ত পরিচালক ড. সালমা লাইজু, একই কার্যালয়ে উপপরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন সালমা আক্তার। ময়মনসিংহ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের চারটি গুরুত্বপূর্ণ পদের মধ্যে চার জনই নারী কৃষি কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করছেন। এর মধ্যে রয়েছেন উপ-পরিচালক হিসেবে ড. মোসাম্মৎ নাসরিন আক্তার বানু, একই কার্যালয়ের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা হিসেবে আছেন ড. উম্মে হাবিবা, অতিরিক্ত উপপরিচালক (উদ্যান)-এর দায়িত্বে আছেন এসএস ফারহানা হোসেন ও অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) এর দায়িত্ব পালন করছেন তাহমিনা ইয়াসমিন।

ময়মনসিংহের ১৩টি উপজেলায় ১৩ জন কৃষি কর্মকর্তার মধ্যে ১০ জনই নারী কৃষি কর্মকর্তা দায়িত্ব পালন করছেন। ময়মনসিংহ সদর উপজেলায় কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে আছেন কৃষিবিদ জুবায়রা বেগম সাথী, মুক্তাগাছা উপজেলায় সেলিনা পারভিন, ত্রিশাল উপজেলায় তানিয়া রহমান, ভালুকা উপজেলায় নুসরাত জামান, গফরগাঁও উপজেলায় শাকুরা নাম্মী, নান্দাইল উপজেলায় নাঈমা সুলতানা, ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায় রিপা রানী চৌহান, গৌরীপুর উপজেলায় নিলুফার ইয়াসমিন জলি, তারাকান্দা উপজেলায় অরুনিমা কাঞ্চি সুপ্রভা শাওন ও ধোবাউড়া উপজেলায় নাদিয়া ফেরদৌসী।

নানা সীমাবদ্ধতার মধ্যেও অর্পিত দায়িত্ব আন্তরিকতা দিয়ে পালন করছেন দাবি করে ময়মনসিংহ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) কৃষিবিদ তাহমিনা আক্তার জানান, সব সময় চ্যালেঞ্জ নিয়েই কাজ করতে হয়। দায়িত্ব পালন করার ক্ষেত্রে নারী কিংবা পুরুষ ভেদাভেদ করে দেখি না। তবে নারী কর্মকর্তাদের যাতায়াতে ট্রান্সপোর্ট একটা বড় সমস্যা নিয়ে আমাদের কাজ করতে হয়।

ময়মনসিংহ সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ জুবায়রা বেগম সাথী জানান, সবার আগে আমরা মানুষ, তারপর নারী। পুরুষের সঙ্গে প্রতিযোগিতা নয়, নারী-পুরুষ পাশাপাশি কাজ করতে চাই।

তিনি বলেন, ‘আমি নারী, আমি আমার মতো করে পারি। আমি চাই পৃথিবীর কোথাও বৈষম্য না থাকুক। সবাই সবার সাথে থেকে কাজ করে এগিয়ে যেতে চাই।’

ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রিপা রানী চৌহান জানান, কাজের অনুকূল পরিবেশ থাকায় আন্তরিকভাবে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। বিশেষ করে নারীরা অফিসের দাফতরিক কাজ পুরুষের চেয়েও দক্ষতার সাথে করে থাকে। নানা চ্যালেঞ্জ থাকার পরও নারীরা কৃষি ছাড়াও শিক্ষায় এগিয়ে যাচ্ছে।

ময়মনসিংহ বিভাগীয় কার্যালয়ের অতিরিক্ত পরিচালক ড. সালমা লাইজু বাংলা ট্রিবিউনকে জানান, নারী কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করা নেগেটিভ-পজিটিভ দুটি দিকই রয়েছে। নারীদের বেশ কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে। পুরুষরা যেভাবে রাতে দিনে বাইরে বের হয়ে কাজ করতে পারেন, নারীদের জন্য কিন্তু সেটি সম্ভব হয় না। তবে কৃষক ও কৃষির উন্নয়নে আন্তরিকতা দিয়ে কাজ করলে কোনও সমস্যা হওয়ার কথা না।

বাংলাদেশ কৃষক ঐক্য পরিষদ ময়মনসিংহ জেলা শাখার সভাপতি আল আমিন জানান, ময়মনসিংহের যারা কৃষি বিভাগে নারী কর্মকর্তারা দায়িত্ব পালন করছেন সবাই খুবই আন্তরিক। রাতে দিনে যেকোনও সময় ফোন করলে তাদের পাওয়া যায় এবং পরামর্শ পাওয়া যায়। কৃষকের বিপদে আপদে সবসময় তাদের পাশে পাওয়া যায়, জানান তিনি।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ ময়মনসিংহ জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ফাহমিদা ইয়াসমিন রুনা জানান, কৃষিপ্রধান বাংলাদেশের নারীরা জন্মের পর থেকেই কৃষির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকে। নারীর ক্ষমতায়নে কৃষি বিভাগে দায়িত্ব পালন করা নারী কর্মকর্তারা আন্তরিকভাবে কাজ করছেন এটা আমাদের জন্য অত্যন্ত গর্বের। শুধু কৃষি বিভাগ না, সব ক্ষেত্রেই নারীরা এগিয়ে যাবেন, এটাই প্রত্যাশা।