বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে আহত ৯, সম্মেলন স্থগিত

জামালপুরের মাদারগঞ্জে ইউনিয়ন বিএনপির সম্মেলনকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) রাতে উপজেলার তেঘরিয়া বাজারে সাহেদ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে চরপাকেরদহ ইউনিয়ন বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনের প্যান্ডেল প্রস্তুত করার সময় এই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে উভয়পক্ষের ৯ জন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় ইউনিয়ন বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন স্থগিত করেছে উপজেলা বিএনপি।

বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীদের সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার তেঘরিয়া বাজারে সাহেদ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে শুক্রবার বিকালে চরপাকেরদহ ইউনিয়ন বিএনপির দ্বি-বার্ষিক সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল। আসন্ন সম্মেলনে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি পদ প্রত্যাশী ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক শাহ মো. মজনু ফকির ও যুগ্ম আহ্বায়ক গোলাম কিবরিয়া বিপ্লব তরফদার নিজেদের প্রার্থী ঘোষণা করেন। বৃহস্পতিবার রাতে দ্বি-বার্ষিক সম্মেলনের প্যান্ডেল ও মঞ্চ প্রস্ততের কাজ চলছিল।

এ সময় সভাপতি পদ প্রত্যাশী দুই নেতার কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। সংঘর্ষ চলাকালে সম্মেলনের মাঠে বিকট শব্দে দুটি ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। সম্মেলনের জন্য মাঠে থাকা প্রায় দুই হাজার চেয়ারে পেট্রোল ঢেলে আগুন জালিয়ে দেওয়া হয়। স্কুল মাঠে সম্মেলনের জন্য তৈরি করা মঞ্চ এবং কয়েকটি মোটরসাইকেলও ভাঙচুর করা হয়। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের কমপক্ষে ৯ জন আহত হন।

মাদারগঞ্জ সরকারি কলেজ ছাত্রদলের আহ্বায়ক শামীম আহমেদ (২২), বালিজুড়ি ইউনিয়ন ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক আল আমিন চৌধুরী (২২), যুবদল নেতা শফিকুল ইসলাম (৪০), ছাত্রদল নেতা শ্যামল মিয়াকে আহত অবস্থায় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। এ ছাড়াও আব্দুস সোবহান (৪১) নামে এক নেতা মাথায় গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছেন। আহত অন্য নেতাকর্মীরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি চলে গেছেন।

এ বিষয়ে ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক শাহ মো. মজনু ফকির ও যুগ্ম আহ্বায়ক গোলাম কিবরিয়া বিপ্লব তরফদার একে অপরের বিরুদ্ধে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ করেন।

মজনু ফকির দাবি করেন, বৃহস্পতিবার ইউনিয়ন বিএনপির সম্মেলনের জন্য সাহেদ আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে প্যান্ডেল ও মঞ্চ তৈরির কাজ চলছিল। ইউনিয়ন বিএনপির বেশ কিছু নেতাকর্মী নিয়ে অফিসে বসে ছিলাম। রাত ৯টার দিকে হঠাৎ বিকট শব্দ হয়। পরে মানুষের চিৎকার চেঁচামেচি শুনে মাঠে গিয়ে দেখি উপজেলা বিএনপির সদস্য ও উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক মুখলেছুর রহমান, ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক গোলাম কিবরিয়া বিপ্লব তরফদার, হুমায়ুন ও স্বপনসহ আরও কয়েকজন সম্মেলন মাঠে ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় ও চেয়ারে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরে বিএনপির বিক্ষুদ্ধ নেতাকর্মীরা তাদের ধাওয়া দিলে তারা সেখান থেকে পালিয়ে যায়। ইউনিয়ন বিএনপির সম্মেলন স্থগিত করার জন্যই তারা এমন কর্মকাণ্ড ঘটিয়েছে। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের বহিষ্কারের দাবি জানান তিনি।

অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক গোলাম কিবরিয়া বিপ্লব তরফদার দাবি করেন, ওয়ার্ড বিএনপির নেতাকর্মীদের সঙ্গে দেখা করে রাতে মিতালী বাজারে যাই। আমাদের কয়েকজন নেতাকর্মী প্যান্ডেল ও মঞ্চ তৈরির কাজ পরিদর্শন করার জন্য স্কুল মাঠে গেলে মজনু ফকিরের নেতৃত্বে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি শাহ মোহাম্মদ মোস্তাক ও তার লোকজন অতর্কিত হামলা করে। এতে আমাদের সাত নেতাকর্মী আহত হয়েছে। মজনু ফকিরের লোকজনই প্যান্ডেল ভাঙচুর করে ও চেয়ারে আগুন লাগিয়ে দেয়। আমাদের নেতাকর্মীদের ছয়টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে তারা। মাঠে ককটেল বিস্ফোরণের কোনও ঘটনা ঘটেনি। মজনু ফকিরের নেতৃত্বে একদল সন্ত্রাসী দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আমাদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করে। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি শাহ মোহাম্মদ মোস্তাককে বিএনপিতে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য মজনু ফকির উঠে পড়ে লেগেছে।

মাদারগঞ্জ উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মঞ্জুর কাদের বাবুল খান বলেন, চরপাকেরদহ ইউনিয়ন বিএনপির সম্মেলন স্থগিত করা হয়েছে। ওই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।

মাদারগঞ্জ মডেল থানার ওসি হাসান আল মামুন জানান, ইউনিয়ন বিএনপির সম্মেলনকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। সম্মেলনের মঞ্চ ও চেয়ার ভাঙচুর করা হয়েছে। ককটেল বিস্ফোরণের কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি। লিখিত অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।