ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংক থেকে এক ব্যাগ রক্ত চুরির সময় ধরা পড়েছে দুই ব্যক্তি। তারা এক ব্যাগ চোরাই রক্তে স্যালাইন মিশিয়ে তিন ব্যাগ বানিয়ে বিক্রি করতো।
রবিবার (১৯ জানুয়ারি) দুপুর ১২টায় কোতোয়ালি মডেল থানায় সংবাদ সম্মেলন করে এসব তথ্য জানিয়েছেন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শফিকুল ইসলাম খান। এর আগে শনিবার বিকালে তাদের আটক করা হয়। পরে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য জানায়। তারা হলো- মো. নাঈম খান (৩৮) ও মো. আবদুল্লাহ ওরফে তুষার চন্দ্র দে (২২)। নাঈম তারাকান্দা উপজেলার গোয়াইলকান্দি গ্রামের আবদুর রহমান খানের ছেলে এবং তুষার আকুয়া মোড়ল বাড়ি এলাকার মিন্টু চন্দ্র দের ছেলে। তাদের বিরুদ্ধে হাসপাতালের ওয়ার্ড মাস্টার মো. সেলিম মিয়া শনিবার রাতে মামলা করেছেন।
তাদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, তারা একটি চক্রের মাধ্যমে বিভিন্ন হাসপাতাল বা ক্লিনিক থেকে রক্ত চুরি করতো। প্রতি ব্যাগ রক্তে স্যালাইনের সঙ্গে মিশিয়ে তিন ব্যাগ বানিয়ে বিক্রি করে আসছিল। এ ছাড়া মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের থেকে রক্ত সংগ্রহ করে বিক্রি করতো তারা।
ওসি বলেন, ‘গ্রেফতারের পর তারা জানায় বিভিন্ন ক্লিনিক থেকে তারা রক্ত সংগ্রহ করে বিক্রি করতো। অনেক বড় চক্রের সঙ্গে জড়িত সবাই। নগরের বিভিন্ন ক্লিনিক ও হাসপাতালে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে তারা মানুষের ক্ষতি করে আসছিল। মাদকদ্রব্য গ্রহণ করে এমন ব্যক্তিদের রক্ত সংগ্রহ করে, সরকার অনুমোদিত ব্লাড ব্যাংক থেকে রক্ত না নিয়ে তারা ভুয়া ব্লাড ব্যাংকের কথা বলে এসব রক্ত বিক্রি করতো। আপাতত চক্রের দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদেরও গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। যে দুজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের রক্ত বিক্রির বৈধতা নেই। কিছু ব্লাড ট্রান্সফিউশন সেন্টারের রসিদ পাওয়া গেছে, যার মধ্যে শুধু উল্লেখ করা চরপাড়া, তাতে কোনও সঠিক ঠিকানা ও ফোন নম্বর নেই। দুজনকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হবে।’
ময়মনসিংহের ভারপ্রাপ্ত সিভিল সার্জন ফয়সল আহমেদ বলেন, ‘চক্রের তৎপরতা সম্পর্কে আমাদের জানা ছিল না। ময়মনসিংহ নগরে নিবন্ধিত চারটি ব্লাড ট্রান্সফিউশন সেন্টার রয়েছে। এসব সেন্টারের বাইরে থেকে যদি কেউ রক্ত নিয়ে যায়, তাহলে সেই রক্ত রোগীর শরীরে প্রবেশ করানো উচিত নয়। কারণ, রোগী ভালো হওয়ার জন্য রক্ত দিতে গিয়ে এইডস, হেপাটাইটিস-বিসহ বিভিন্ন মরণঘাতী রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। অনিরাপদ রক্ত নেওয়ার কারণে রোগীর মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এ জন্য ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালকে বেশি সচেতন হতে হবে, তারা সচেতন হলেই এ সমস্যা অনেকটা কেটে যাবে।’
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে জানা গেছে, ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংক, কমিউনিটিভিত্তিক মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল ব্লাড ব্যাংক, ময়মনসিংহ ব্লাড ব্যাংক অ্যান্ড ট্রান্সফিউশন সেন্টার, নিরাপদ ব্লাড ট্রান্সফিউশন সার্ভিস সেন্টার—এই চারটি ব্লাড ব্যাংক অনুমোদিত।
ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) মোহাম্মদ মাইনউদ্দিন খান বলেন, ‘একজন রোগীর কাছ থেকে এক ব্যাগ রক্তের জন্য ২ হাজার ২০০ টাকা নিলেও রক্ত দিচ্ছিল না। পরে বিষয়টি নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তৎপরতা শুরু করলে চক্রের সদস্যরা আটক হয়। তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। রক্ত বিনিময়ে সবাইকে সতর্ক হতে হবে। তা না হলে ভয়াবহ পরিণতি হবে।’