অবশেষে ময়মনসিংহে যৌনকর্মী ও তাদের সন্তানদের জন্ম নিবন্ধন শুরু

নানা জটিলতার কারণে ময়মনসিংহ নগরের রমেশ সেন রোডের যৌনপল্লির কর্মী ও তাদের সন্তানদের জন্ম নিবন্ধন করা যাচ্ছিল না। অবশেষে শাপলা মহিলা সংস্থার তৎপরতায় এবং প্রশাসনের উদ্যোগে শিশু ও মায়েদের জন্ম নিবন্ধনের কার্যক্রম শুরু হলো। এমন উদ্যোগে খুশি যৌনপল্লির কর্মীরা।

নগরের গাঙ্গিনারপাড়ের ১ নম্বর রমেশ সেন রোডের যৌনপল্লির কর্মী স্বপ্নার (ছদ্মনাম) কোনও জন্ম নিবন্ধন সনদ ছিল না। এ কারণে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি, ব্যাংকের হিসাব খোলা থেকে শুরু করে সন্তানের জন্ম নিবন্ধন করাতে পারছিলেন না। নানা জটিলতা এড়িয়ে শাপলা মহিলা সংস্থার তৎপরতায় এবং স্থানীয় প্রশাসনের উদ্যোগে যৌনপল্লির শিশু ও মায়েদের জন্ম নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হওয়ায় খুশি স্বপ্না। 

তিনি বলেন, ‘সন্তানের বাপ আমারে রাইখা আরেক বেটিরে বিয়ে করেছে। আমারে খাওয়োন পরোন কিছুই দেয় না। বাধ্য হয়ে এই অন্ধকার জায়গায় আইছি। বাপ-মা আমার জন্ম নিবন্ধন করে নাই। এহন জন্ম নিবন্ধন সনদ না থাকায় কোনও কাজকাম করতে পারছি না। সন্তানরে ভবিষ্যতে স্কুলে ভর্তি করামু। তারও জন্ম নিবন্ধন করানো যাইতাছে না। অবশেষে আমাদের পল্লির সবার জন্ম নিবন্ধন করানোর উদ্যোগে খুশি হইছি।’    

শুধু স্বপ্না নন, এখানকার সব যৌনকর্মী এমন উদ্যোগে খুশি। জন্ম নিবন্ধন সনদ পেলে এখানকার শিশুরা স্কুলে ভর্তিসহ নানা সরকারি সুবিধা পাবে বলে আশা তাদের।

পল্লির আরেক শিশুর মা বলেন, ‘আমার সন্তানকে স্কুলে পড়াতে চাই। জন্ম নিবন্ধন না থাকায় স্কুলে ভর্তি করা যাবে না। আবার সন্তানের পড়ালেখার জন্য টাকা জমাতে ব্যাংক হিসাব খোলা দরকার, সেটাও করা যাচ্ছিল না। এখন সুযোগ হয়েছে। জন্ম নিবন্ধনের ব্যবস্থা হওয়ায় আমাদের খুব উপকার হয়েছে।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রমেশ সেন রোডের যৌনপল্লিতে ৩০০ কর্মী এবং তাদের শতাধিক সন্তান রয়েছেন। জন্ম নিবন্ধন সনদ পেলে সরকারি সব ধরনের সুবিধার আওতায় আসবে দাবি যৌনকর্মীদের সংগঠন শুকতারা কল্যাণ সংঘের নেত্রীদের। 

সংগঠনের সভাপতি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বাপের পরিচয়সহ নানা জটিলতার কারণে এখানের শিশু ও মায়েদের জন্ম নিবন্ধন করানো যাচ্ছিল না। এ বিষয়ে শাপলা মহিলা সংস্থার কর্মকর্তারা তৎপর হন এবং প্রশাসনের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করেন। স্থানীয় প্রশাসনের আন্তরিকতায় অবেশেষে জেলা শিশু কল্যাণ বোর্ড বিষয়টি নিয়ে কাজ করে। তাদের চেষ্টায় জন্ম নিবন্ধন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। নিবন্ধন পেলে সরকারি সব ধরনের সুবিধা ভোগ করতে পারবেন এখানকার কর্মী এবং তাদের সন্তানরা।’

জেলা সমাজসেবা অধিদফতরের উপপরিচালক ও জেলা শিশু কল্যাণ বোর্ডের সদস্যসচিব রাজু আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নানা জটিলতার কারণে যৌনকর্মী ও তাদের সন্তানদের জন্ম নিবন্ধন করা যাচ্ছিল না। এ নিয়ে জেলা শিশু কল্যাণ বোর্ড একাধিকবার আলোচনা করে জন্ম নিবন্ধন কার্যক্রম সহজ করার জন্য উদ্যোগ নেয়। এর ফলে যৌনকর্মী ও তাদের সন্তানদের জন্ম নিবন্ধন কার্যক্রম চালু করা সম্ভব হয়েছে।’