কবি হেলাল হাফিজকে শেষ দেখা থেকেও বঞ্চিত নেত্রকোনাবাসী, মর্মাহত ভক্তরা

বাংলা সাহিত্যের তুমুল জনপ্রিয় কবি হেলাল হাফিজ। স্বেচ্ছা নির্বাসিত এই কবির জন্মভূমি নেত্রকোনা। এ জেলার আলো-বাতাসে কেটেছে শৈশব, কৈশোর ও যৌবনের অনেকটা সময়। ১৯৬৭ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুবাদে এলাকা ছাড়েন। এরপর আর তেমন একটা এলাকায় আসা হয়নি তার। 

শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) দুপুরে ঢাকার একটি হাসপাতালে মারা যান হেলাল হাফিজ। এ খবর ছড়িয়ে পড়লে নেত্রকোনায় শোকের ছায়া নেমে আসে।

জেলাবাসীর দাবি ছিল, কবির মরদেহ নেত্রকোনায় নিয়ে আসা হবে। এখানে জানাজা হবে। শেষবারের মতো নিজ জেলার মানুষজন কবিকে একনজর দেখবেন এবং নেত্রকোনাতেই মরদেহ সমাহিত করা হবে। কিন্তু এসবের কিছুই আর হলো না। কবিকে শেষ দেখা থেকেও বঞ্চিত হয়েছেন নেত্রকোনাবাসী। এতে জেলার সাহিত্য সংস্কৃতি অঙ্গনের লোকজনসহ কবির ভক্তরা খুবই মর্মাহত হয়েছেন।

সংস্কৃতিকর্মী আবুল কালাম আল আজাদ বলেন, ‘রাষ্ট্র কবিকে বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে এক টুকরো জায়গা দিয়েছে, জীবদ্দশায় স্বস্তিদায়ক কোনও ব্যবস্থা করতে পারেনি। এদিকে, কবির জন্মভূমি নেত্রকোনা কাঁদছে; শেষ দেখা কিংবা কবরের জায়গা- কোনোটাই পাননি। কবির কবর নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলার বড়তলী গ্রামে হলে কিংবা নেত্রকোনা বিশ্বিবিদ্যালয়ে হলে মানুষ কাছে পেতো, আরেকটি কেন্দ্র গড়ে ওঠার সম্ভাবনা ছিল। কিন্তু তা হয়নি। তাই আমরা খুবই মর্মাহত হয়েছি।’

নেত্রকোনা সাহিত্য সমাজের সাধারণ সম্পাদক কবি তানভীর জাহান চৌধুরী বলেন, ‘হেলাল হাফিজের সঙ্গে আমাদের অনেক স্মৃতি। তার মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর থেকে সে সব স্মৃতি খুব মনে পড়ছে। জীবদ্দশায় তার প্রাপ্য সম্মানটুকু রাষ্ট্র বা সমাজ থেকে পাননি। জেলার মানুষের দাবি ছিল, কবিকে নেত্রকোনায় এনে জানাজা পড়ার এবং তাকে এখানে সমাহিত করার। কিন্তু কিছুই হলো না। কাছে থেকে কবিকে শেষ দেখাটুকুও দেখতে পারেননি নেত্রকোনাবাসী। এ অতৃপ্তি রয়েই গেলো।’

কবি হেলাল হাফিজ ১৯৪৮ সালের ৭ অক্টোবর নেত্রকোনার আটপাড়া উপজেলার বড়তলী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা ছিলেন একজন নামকরা শিক্ষক। হেলাল হাফিজ ১৯৬৫ সালে নেত্রকোনা শহরের দত্ত উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি ও ১৯৬৭ সালে নেত্রকোনা কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুবাদে ঢাকায় যাওয়ার পর তিনি আর এলাকায় ফেরেননি। ঢাকাতেই থেকে যান আমৃত্যু।

অভিমানী কবি হেলাল হাফিজের সঙ্গে স্থানীয় এক মেয়ের প্রেমের সম্পর্ক হয়। কিন্তু যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন, তখন ওই মেয়েকে তাকে অন্যত্র বিয়ে দিয়ে দেন তার মা-বাবা। এ কারণে বিরহ-যন্ত্রণাকে সঙ্গী করেছিলেন কবি। ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখা থেকেও নিজেকে বিরত রাখেন। সেই ক্ষরণ থেকেই বুনন করে গেছেন অনন্য সব কবিতা। সে কারণেই হয়তো জন্মভূমি নেত্রকোনার প্রতি ছিল তার বিশেষ অভিমান। তাই ঢাকায় যাওয়ার পর তিনি ৫০ বছরে মাত্র তিনবার নেত্রকোনায় আসেন। তাও আবার নিকটজন ও ভক্তদের তীব্র অনুরোধে।