আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে ময়মনসিংহের ভালুকা পৌর বিএনপির আহ্বায়ক হাতেম খানের বিরুদ্ধে আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার অভিযোগ উঠেছে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন। শিল্পকারখানা দখল ও চাঁদাবাজিতে জড়িয়ে পড়েছেন। এতে স্থানীয় বিএনপির ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির তৃণমূলের নেতাকর্মীরা।
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে পৌর বিএনপির আহ্বায়ক হাতেম খান বলেছেন, ‘অনেকে ব্যক্তিগত আক্রোশের কারণে আমার বিরুদ্ধে কুৎসা রটাচ্ছে। এসব অভিযোগ মিথ্যা এবং বানোয়াট।’
দলের স্থানীয় নেতাকর্মীদের অভিযোগ, বিএনপি নেতা হয়েও আওয়ামী লীগের শাসনামলে আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে মিলেমিশে শিল্পকারখানা দখল ও চাঁদাবাজি করে হয়েছেন কোটিপতি। বিএনপির কোনও আন্দোলন-সংগ্রামে তাকে মাঠে পাওয়া যায়নি। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর হয়ে উঠেছেন স্থানীয় বিএনপির নীতিনির্ধারক। ১৬ বছর আওয়ামী লীগ সরকারের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ভালুকা বিএনপির হাজারো নেতাকর্মী। অথচ ওই সময়ে হাতেম খান আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকায় কোনও নির্যাতনের শিকার হননি। বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে বহু মামলা হলেও তার নামে নেই একটিও।
স্থানীয় একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একসময় থানায় দালালি করা হাতেম এখন শত কোটি টাকার মালিক। একসময় দিনে এনে দিনে খেয়ে চলতেন। কয়েক বছর আগে বাদশা গ্রুপের মালিক বাদশা মিয়ার সঙ্গে মিশে ঘনিষ্ঠজন হয়ে যান। তারপর থেকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
সর্বশেষ ময়মনসিংহ দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও ভালুকা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফখর উদ্দিন আহাম্মেদ বাচ্চুকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। এজন্য হাতেমকে দায়ী করছেন তৃণমূল বিএনপির নেতাকর্মীরা। তাদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ভালুকায় শিল্পকারখানা দখল ও চাঁদাবাজি করেছেন হাতেম খান। তিনি দক্ষিণ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ও ভালুকা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক ফখর উদ্দিন আহাম্মেদ বাচ্চুকে সঙ্গে নিয়ে গড়ে তুলেছেন দখলদার বাহিনী। ভালুকা এন্টারপ্রাইজ নামে নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠানের প্যাডে বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানে চিঠি পাঠানো শুরু করেন হাতেম। ফলে শিল্পনগরী ভালুকা কয়েকদিনের ব্যবধানে হয়ে ওঠে ত্রাসের নগরী। হাতেমের দখলদারি ও বেপরোয়া কর্মকাণ্ডে বিতর্কিত হয়ে ওঠে স্থানীয় বিএনপির রাজনীতি। দল সম্পর্কে মানুষের মনে নেতিবাচক ধারণা জন্মায়। বিএনপির কেন্দ্রীয় কমান্ডেও ভালুকার রাজনীতি নিয়ে আলোচনা হয়। পরে ফখর উদ্দিন আহাম্মেদ বাচ্চুকে দল বহিষ্কার করলেও বহাল তবিয়তে আছেন হাতেম। তার বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেয়নি বিএনপি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভালুকা বিএনপির দুজন নেতা বলেছেন, ‘সরকার পতনের পর ভালুকার বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানে চাঁদাবাজি করে অস্থির করে তুলেছেন হাতেম খান। অথচ বহিষ্কার হলেন ফখর উদ্দিন আহাম্মেদ বাচ্চু। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে আমাদের আবেদন, বিষয়টি ভালোভাবে তদন্ত করে হাতেম খানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হোক। কারণ ঘটনার মূলেই আছেন হাতেম।’
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ভালুকা পৌর এলাকার বাসিন্দা এবং বিএনপির কর্মী বলেন, ‘হাতেম খান বিগত গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে যোগ দিয়ে বিভিন্নভাবে অর্থবিত্তের মালিক হয়েছেন। বিশেষ করে শিল্পকারখানায় জুট ব্যবসা ছিল তার আয়ের বড় মাধ্যম। আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর নিজের বাহিনী নিয়ে ভালুকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছেন। বিভিন্ন শিল্পকারখানায় চাঁদাবাজি ও দখলবাজি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। এখনও আগের মতো চলছে তার এই বাণিজ্য।’
একই অভিযোগ করে ভালুকার হবির বাড়ি এলাকার আরেক বিএনপি নেতা বলেন, ‘নিজস্ব বাহিনী দিয়ে ৫ আগস্টের পর থেকে বিভিন্ন শিল্পকারখানা দখল ও চাঁদাবাজি করেছেন হাতেম খান। সবগুলো কারখানার জুট ব্যবসা নিজের দখলে নিয়েছেন।’
এসব ব্যাপারে জানতে চাইলে ভালুকা পৌর বিএনপির আহ্বায়ক হাতেম খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমার জীবনে কোনও দুর্নীতি কিংবা অপরাধ নেই। আমি চাঁদাবাজি কিংবা কোনও দখলবাজির সঙ্গে জড়িত নই। ৫ আগস্টের পর আমার দলের অনেকে দখল এবং চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়েন। তাদের আমি নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেছি। এখন ভালুকা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আছে। তবে অনেকে ব্যক্তিগত আক্রোশের কারণে আমার বিরুদ্ধে কুৎসা রটাচ্ছে। অনেকে মেয়র হতে চায়। দলীয় কোন্দলের সুযোগ নিয়ে নিজের লোকজন দিয়ে আমার বিরুদ্ধে বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ করাচ্ছে। তবে এসব কিছু মিথ্যা ও বানোয়াট।’
শত কোটি টাকার মালিক হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি ভালুকায় শিল্পকারখানা বাদশা গ্রুপের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছি। এই গ্রুপের জমি কেনাবেচাসহ বিভিন্ন বিষয় আমি দেখি। এখানকার অর্থই আমার আয়ের মূল উৎস। আমার আয়কর ফাইল আছে। প্রতি বছর আয়কর দিয়ে থাকি। গত বছর ১৩ লাখ ৪০ হাজার টাকা আয়কর দিয়েছি। দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সাত বছর যাচাই-বাছাই করে ২০২১ সালে আমাকে দুর্নীতি মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়ে চিঠি দিয়েছে।’