খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) প্রশাসনিক ভবনের মূল ফটকের সামনে ২৪ ঘণ্টা ধরে অবস্থান করছেন শিক্ষার্থীরা। হল খুলে দেওয়ার দাবিতে রবিবার বিকাল ৩টার দিকে সেখানে অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। হল খুলে না দেওয়া পর্যন্ত সেখানেই অবস্থান করবেন বলে জানিয়েছেন তারা।
এর আগে রবিবার রাত ৮টার মধ্যে খুলে না দেওয়ায় রাতভর সেখানে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। হল খুলে দেওয়ার দাবিতে কর্তৃপক্ষের সাড়া না পেয়ে এ কর্মসূচি পালন করছেন তারা। ওই দিন কুয়েটের ভিসি বলেছিলেন, ‘আমার কিছুই করার নেই। সিন্ডিকেটের সভা ছাড়া হল খোলা ও একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।’ তবে শিক্ষার্থীদের অবস্থানের কারণে সোমবার সন্ধ্যা ৭টায় সিন্ডিকেটের সভা হওয়ার কথা জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানান, সোমবার বেলা ১১টার দিকে ছাত্রকল্যাণ পরিচালকের দফতরের সহকারী পরিচালক রাজু আহম্মদ তাদের সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন। তিনি আজ সন্ধ্যায় সিন্ডিকেটের সভা হওয়ার কথা বলেছেন। তিনি শিক্ষার্থীদের প্রশাসন ভবনের সামনে থেকে অবস্থানরত শিক্ষার্থীদের চলে যেতে অনুরোধ করেন। তবে হল খুলে না দেওয়া পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা অবস্থান কর্মসূচি চালিয়ে যাবেন বলে জানান।
শিক্ষার্থীরা বলেন, আজ পহেলা বৈশাখের দিনেও আন্দোলন চালিয়ে যেতে হচ্ছে আমাদের। কোভিড ও পরে রোজার ছুটিসহ বিভিন্ন কারণে গত পাঁচ বছর বাংলা বর্ষবরণে কুয়েটে বড় কোনও আয়োজন ছিল না। আমরা আশা করেছিলাম, এ বছর বড় আয়োজনে পহেলা বৈশাখ উদযাপন করবো। অথচ এই দিনে নিদারুণ কষ্টে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছি। কিন্তু হল খোলার যৌক্তিক দাবিকে কানে তুলছে না প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মাছুদ বলেন, ‘আজ সন্ধ্যায় জরুরি সিন্ডিকেট সভায় সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হবে। ১৮ ফেব্রুয়ারির সংঘর্ষ নিয়ে গঠিত তদন্ত প্রতিবেদন জমা হলে সভায় ওই প্রতিবেদন নিয়েও আলোচনা হবে। পাশাপাশি একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করার পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে কিনা, কবে নাগাদ চালু করা যায়, বা আরও সময় নেওয়ার প্রয়োজন আছে কিনা তা নিয়েও আলোচনা হবে সভায়।’
শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেন, গতকাল রাতে তারা ২২ জন এখানে ছিলেন। প্রশাসন ভবনের সামনে অবস্থান করলেও এই ভবনের শৌচাগার ব্যবহার করতে দেওয়া হচ্ছে না। বিভিন্ন একাডেমিক ভবনের শৌচাগার ব্যবহার করেছেন। প্রচণ্ড গরমে কেউ কেউ অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। খাওয়া-দাওয়া এবং নানাবিধ কাজের প্রয়োজনে ক্যাম্পাস থেকে একবার বের হলে পরে ভেতরে ঢুকতে অসুবিধায় পড়ছেন। দায়িত্বরত নিরাপত্তাকর্মীরা নানাভাবে শিক্ষার্থীদের হেনস্তা করছেন।
এদিকে আজ ‘কুয়েট ১৯’ নামের একটি ফেসবুক পেজে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে তাদের ন্যায্য আন্দোলনে সারা দেশের শিক্ষার্থীদের একাত্ম হওয়ার আহ্বান জানান। ওই পেজ থেকে কুয়েট শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের বিভিন্ন কর্মসূচি ঘোষণা দেওয়া হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গতকাল প্রশাসন শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে প্রবেশে বাধা দিলেও, শিক্ষার্থীদের প্রবল চাপে তা ভেঙে পড়ে এবং অবশেষে শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়। কিন্তু বর্তমান ভিসি (যিনি শিক্ষার্থীদের দ্বারা অবাঞ্ছিত হিসেবে চিহ্নিত) অধ্যাপক মুহাম্মদ মাছুদ প্রশাসনের প্রভাব খাটিয়ে শিক্ষার্থীদের ভয়ভীতি প্রদর্শনের চেষ্টা করেন। শিক্ষার্থীরা হলে প্রবেশের অনুমতি চাইলেও প্রশাসন রাত ৮টা পর্যন্ত সময় পাওয়ার পরও হল খুলে দেয়নি। ফলে শিক্ষার্থীরা খোলা আকাশের নিচে প্রশাসনিক ভবনের সামনে রাত্রিযাপনের সিদ্ধান্ত নেন এবং সেই অনুযায়ী অবস্থান নেন।
বিজ্ঞপ্তিতে শিক্ষার্থীরা বলেন, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি স্থানীয় বিএনপি, ছাত্রদল ও যুবদলের সন্ত্রাসীরা কুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালায়, যাতে দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়। এই হামলার ঘটনায় এখনও কোনও সন্ত্রাসীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, বরং উল্টো আহত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধেই মিথ্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে।
গতকাল বিকালে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে রাত ৮টার মধ্যে আবাসিক হল খুলে দেওয়ার দাবি জানিয়েছিলেন। বিকাল ৫টার দিকে কুয়েট প্রশাসনিক ভবনের সামনে প্রশাসনের কাছে আবেদনের কপি তুলে দেন শিক্ষার্থীরা। প্রশাসনের পক্ষে আবেদন গ্রহণ করেন ইইই অনুষদের ডিন রফিকুল ইসলাম।
১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। পরদিন প্রশাসনিক ভবনসহ সব একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। ওই দিন দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় কুয়েটে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সংঘর্ষের ঘটনা তদন্তে কমিটিও করা হয়েছে। ওই দিন রাতেই খানজাহান আলী থানায় অজ্ঞাতনামা ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করে মামলা করে প্রশাসন। ২৫ ফেব্রুয়ারি সব আবাসিক হল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করা হয়।
এদিকে গত বৃহস্পতিবার কুয়েটের ২২ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আমলি আদালতে মামলা করেছেন নগরের মহেশ্বরপাশা উত্তর বণিকপাড়া এলাকার হোচেন আলী নামের এক ব্যক্তি। আদালত বাদীর অভিযোগ আমলে নিয়ে খানজাহান আলী থানাকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দিয়েছেন। গত শনিবার ওই মামলার বিষয়টি জানাজানি হয়। বাদী তার অভিযোগে উল্লেখ করেন, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি দুপুরে তিনি কুয়েট রোড দিয়ে বাড়ি যাচ্ছিলেন। পকেট গেটের সামনে গেলে আসামিরা তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে রড ও লাঠি দিয়ে মারধর করেন এবং স্বর্ণের চেন ছিনিয়ে নেন।