কুষ্টিয়ায় চুরির অভিযোগে তিন জনকে তুলে নিয়ে নির্যাতন, একজনের মৃত্যু

কুষ্টিয়ায় চুরির অভিযোগে তিন জনকে তুলে নিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে। এর মধ্যে একজনের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকালে শহরের রেনউইক চর এলাকা থেকে তার লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

নিহত সুরমান খান (৩৫) রেনউইক চর এলাকার আবুল কালামের ছেলে। সুরমানরা চার ভাই। সবার ছোট আশরাফুল ইসলাম প্রতিবেশী আবদুল হাকিমের বাড়িতে হালিম তৈরির শ্রমিকের কাজ করেন। সুরমান রিকশা চালাতেন। তার স্ত্রীর নাম রূপা খাতুন। তাদের এক মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে। তার পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, প্রতিবেশী আবদুল হাকিম চুরির অভিযোগে সুরমান, আশরাফুল ও তাদের এক প্রতিবেশীকে তুলে নিয়ে দফায় দফায় নির্যাতন করেছেন। এতে সুরমানের মৃত্যু হয়।

বৃহস্পতিবার দুপুরে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে সুরমানের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। হাসপাতালের সামনে নিহত সুরমানের বড় ভাই জয়নাল খান বলেন, গত ঈদের দিন আবদুল হাকিমের বাড়িতে চুরি হয়। তারা অভিযোগে করেন, চুরির সঙ্গে আশরাফুল জড়িত। গত মঙ্গলবার সকালে আশরাফুলকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে পাঁচ কিলোমিটার দূরে শহরের ত্রিমোহনী এলাকায় একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নেওয়া হয়। সেন্টারটির মালিক হাকিমের এক আত্মীয়। সেখানে আশরাফুলকে মারধর করে চুরির স্বীকারোক্তি নেওয়ার চেষ্টা করা হয়। ওই দিন দুপুরে তাদের প্রতিবেশী কারিবুল ইসলামকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে ওই ডায়াগনস্টিক সেন্টারে নিয়ে নির্যাতন করা হয়।

জয়নাল খান আরও জানান, আশরাফুলকে নির্যাতনের বিষয়ে জানার পর তারা হাকিমের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তখন হাকিম জানান চুরির সঙ্গে আশরাফুল ও সুরমান জড়িত। সুরমানকে দিলে আশরাফুলকে ছেড়ে দেওয়া হবে। এরপর বুধবার সকালে বাড়ির সামনেই সুরমানকে পেয়ে মারধর করেন হাকিম ও তার লোকজন। হুমকি দিয়ে একটা স্ট্যাম্পে জমি দেওয়ার লিখিত নেওয়া হয়; চুরির মালামাল ফেরত দিলে স্ট্যাম্প তুলে নেওয়া হবে বলে জানানো হয়। এরপর তারা সুরমানকে ছেড়ে দেন। তবে বুধবার বিকাল থেকে সুরমানকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। তখনও আশরাফুল হাকিমের জিম্মাতেই ছিলেন। আজ সকাল সাড়ে ৬টার দিকে নিজ বাড়ির কিছুটা দূরে সুরমানকে পড়ে থাকতে দেখেন এক প্রতিবেশী। খবর পেয়ে লাশ উদ্ধার করে নিয়ে যায় পুলিশ।

নির্যাতনের শিকার কারিবুল ইসলাম নিজের পিঠ দেখিয়ে জানান, চুরির সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের চারতলায় নিয়ে তাকে মারধর করা হয়। তার পিঠে এখনও রক্ত জমাট বেঁধে লাল হয়ে আছে। সেখানে আশরাফুলকেও তিনি দেখতে পান। তাকেও মারধর করা হয়েছিল। মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে হাকিমের লোকজন তাকে বাড়িতে পৌঁছে দেন।

সুরমানের আরেক ভাই সেলিম খান ঘটনাস্থল দেখিয়ে বলেন, ‘আমার ভাইকে নির্যাতন করে লাশ এইখানে ফেলে রেখেছিল হাকিমেরা। আরেক ভাই আশরাফুলকেও প্রচুর মেরেছে। ঘটনা জানার জন্য পুলিশ তাকে (আশরাফুল) থানায় নিয়ে গেছে। হাকিম ও তার লোকজন আমাদের বাড়িতে ভাঙচুর চালিয়েছে। তারা প্রভাবশালী হওয়ায় পুলিশকে জানাতে পারিনি।’

আবদুল হাকিম শহরের থানা মোড় এলাকায় মিশন স্কুলের সামনে দীর্ঘদিন ধরে হালিম বিক্রি করেন। আজ দুপুরে তার বাড়িতে গিয়ে ফটকে তালা ঝুলতে দেখা যায়। ডাকাডাকি করেও কারও সাড়া পাওয়া যায়নি। প্রতিবেশীরা জানান, আজ সকালে পুলিশ হাকিম ও তার স্ত্রীকে নিয়ে গেছে।

নিহত সুরমানের লাশের ময়নাতদন্ত করেছেন কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) হোসেন ইমাম। তিনি বলেন, লাশের দুই পাসহ পিঠে ব্যাপক মারধরের চিহ্ন রয়েছে। পায়ের কয়েক স্থানে কাটা রয়েছে; পিঠে রক্ত জমাট বাঁধা। গলায় রশি দিয়ে তাকে শ্বাসরোধে হত্যা করা হয়েছে।

কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোশাররফ হোসেন বলেন, ‌‘কয়েক দিন ধরেই ঘটনা ঘটছিল। বিষয়টি কেউ জানায়নি। নিহতের শরীরে টর্চারের চিহ্ন দেখা গেছে। তাকে চুরির অভিযোগে মারা হয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে। জড়িতদের ধরতে পুলিশ কাজ করছে। এ ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’