সওজের উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতির প্রতিবেদনের পরও বহাল প্রকৌশলী মঈনুল

সড়ক ও জনপথ (সওজ) অধিদফতরের অধীনে বাস্তবায়িত উন্নয়ন প্রকল্পের নির্মাণকাজে সর্বনিম্ন ২৯ হাজার ২৩০ কোটি থেকে সর্বোচ্চ ৫০ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে বলে গত ৯ অক্টোবর এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। এ ছাড়া সওজের উন্নয়ন প্রকল্পের নির্মাণকাজে সার্বিক দুর্নীতির হার ২৩-৪০ শতাংশ বলেও জানিয়েছে সংস্থাটি। সরকারি এই প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে রয়েছেন প্রকৌশলী সৈয়দ মঈনুল হাসান। দুর্নীতির এমন প্রতিবেদন দেওয়ার পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও মঈনুল হাসানের বিরুদ্ধে নেওয়া হয়নি কোনও ব্যবস্থা। স্বপদে বহাল রয়েছেন প্রধান প্রকৌশলী। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অনেকে। 

গত ৯ অক্টোবর ধানমন্ডির টিআইবির নিজ কার্যালয়ে ‘সড়ক ও মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক গবেষণা ফল উপস্থাপনের সময় দুর্নীতির তথ্য জানানো হয়। গবেষণা সম্পন্ন করেছেন মো. মোস্তফা কামাল ও মো. জুলকারনাইন। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন টিআইবি-এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। টিআইবি বলছে, সড়ক নির্মাণ বা উন্নয়ন সংক্রান্ত কাজে সার্বিকভাবে দুর্নীতির হার ২৩ থেকে ৪০ শতাংশ। ২৩ শতাংশ হলে ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সময়ে সড়ক ও মহাসড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের নির্মাণ বা উন্নয়নকাজে প্রাক্কলিত দুর্নীতির পরিমাণ ২৯ হাজার ২৩০ কোটি টাকা, আর ৪০ শতাংশ হলে দুর্নীতির পরিমাণ দাঁড়ায় ৫০ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা।

দুর্নীতির এমন প্রতিবেদনের পরও প্রকৌশলী মঈনুল বহাল থাকার বিষয়ে নড়াইল জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম ফেরদৌস রহমান বলেন, ‌‘সওজের প্রধান প্রকৌশলী হিসেবে নয়, বরং সরকারি দলের নেতা হিসেবে নড়াইলে দাপট আছে সৈয়দ মঈনুলের। তিনি অর্থশালী মানুষ, তার বহুবিধ ব্যবসা আছে এখানে। তার দফতরের দুর্নীতি নিয়ে টিআইবি প্রতিবেদন দেওয়ার পরও এখনও মঈনুলের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা না নেওয়া আশ্চর্যজনক।’

লোহাগড়া উপজেলার মল্লিকপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. খিজির আহমেদ বলেন, ‘সৈয়দ মঈনুলের পুরো পরিবার আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। এখানে আওয়ামী রাজনীতির মূল অর্থদাতা মঈনুল। সওজ অধিদফতরে দুর্নীতি করে এসব টাকার মালিক হয়েছেন। তার ভাই টাকার বিনিময়ে জেলা পরিষদ নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন। দুর্নীতি করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন তার ভাইও।’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সৈয়দ মঈনুল হাসানের বাড়ি নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলায়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালীন ১৮তম বিসিএসে নিয়োগ পান। পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২৫ জানুয়ারি ১৯৯৯ সালে সড়ক ও জনপথ অধিদফতরে সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে যোগ দেন। তিনি কেন্দ্রীয় বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদের সদস্য। আইইবি-২০২২-২৩-এর নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু প্রকৌশলী পরিষদে (সবুর-মঞ্জুর প্যানেল) বিনাভোটে নির্বাচিত হয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনে গঠিত সড়ক কমিটির উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। মঈনুল হাসানের চাচাতো ভাই শামসুল আলম কচি লোহাগড়া উপজেলার মল্লিকপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি এবং নড়াইল জেলা পরিষদের আওয়ামী লীগের নির্বাচিত সদস্য।

আরও পড়ুন: ১৪ বছরে সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পেই ৫১ হাজার কোটি টাকা দুর্নীতি: টিআইবি