যশোরের মণিরামপুরে টিসিবির পণ্যের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন বঞ্চিতরা। সোমবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত মণিরামপুর পৌরসভা কার্যালয়ের সামনে কয়েকশ মানুষ সড়ক অবরোধ করে এ বিক্ষোভ করেন।
এ সময় পৌরসভার প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিশাত তামান্নার অপসারণ দাবি করেন তারা। আন্দোলনকারীরা সড়কে অবস্থান নেওয়ায় যশোর-চুকনগর আঞ্চলিক সড়কের মণিরামপুর বাজারের দুই পাশে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ও সহকারী কমিশনার ভূমি (এসিল্যান্ড) নেয়াজ মাখদুম ঘটনাস্থলে এসে সড়ক থেকে তাদের সরিয়ে দেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মণিরামপুর পৌরসভার আওতায় টিসিবির উপকারভোগীর সংখ্যা প্রায় তিন হাজার। সোমবার টিসিবির পণ্য বিতরণের আগে মাত্র কয়েকশ উপকারভোগী পণ্য কেনার জন্য কার্ড পেয়েছেন। বাকিরা কার্ড না পেয়ে পণ্য বিতরণের খবর শুনে পৌরসভার গেটে বিক্ষোভ শুরু করেন।
উপজেলা প্রশাসন ও পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, পৌরসভায় দুই হাজার ৭১২ জন টিসিবি পণ্যের উপকারভোগী ছিলেন। সম্প্রতি কার্ড যাচাই-বাছাই করে দুই হাজার ২৯৬ জনের স্মার্টকার্ড তৈরি হয়। উপজেলা প্রশাসন এই কার্ড পৌরসভায় হস্তান্তর করলেও উপকারভোগীদের মাঝে বিতরণ করেনি পৌর কর্তৃপক্ষ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্মার্টকার্ডধারীদের জন্য ‘টিসিবি স্মার্ট ফ্যামেলি কার্ড সেবা’ নামে একটি সফটওয়্যার রয়েছে। তাতে প্রবেশ করে স্মার্ট কার্ড সক্রিয় করতে হয়। পৌরসভার এই সফটওয়্যারের অনটাইম পাসওয়ার্ড (ওটিপি) সাবেক পৌর মেয়র মাহমুদুল হাসানের নামে। ওটিপি দিয়ে প্রবেশ করতে গেলে সেটা সাবেক মেয়রের কাছে চলে যাচ্ছে। তিনি পলাতক থাকায় তার কাছ থেকে পাসওয়ার্ড উদ্ধার করা যাচ্ছে না। ওটিপি পরিবর্তনের জন্য বারবার আবেদন করেও সেটা সংশোধন করা যাচ্ছে না। এ কারণে পৌরসভায় টিসিবির স্মার্ট কার্ড বিতরণ সম্ভব হয়নি। এরই মধ্যে নিয়মতান্ত্রিকভাবে স্মার্ট কার্ডের বিপরীতে পণ্য বরাদ্দ এসেছে। আজ জাতীয় পরিচয়পত্রের ভিত্তিতে যাচাই করে দরিদ্রদের মধ্যে টিসিবির পণ্য বিতরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
পৌরসভার স্টাফ রবিউল ইসলাম বলেন, ‘পণ্য বিতরণ শুরু করার আগে লোকজন এসে হইচই শুরু করে। তখন পণ্য বিতরণ বন্ধ রাখা হয়।’
টিসিবির কার্ডধারী পৌরসভার বিজয়রামপুর গ্রামের নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘আমার নামে ছবিসহ একটা কার্ড ছিল। সেই কার্ড জমা দিয়ে পণ্য তোলার পর আর আমারে কার্ড ফেরত দেয়নি পৌরসভা। এজন্য কয়েকবার পণ্য তুলতে পারিনি। অনেক চাপাচাপির পর আজ সকালে আমারে একটা কার্ড দিয়েছে। এই কার্ডে কোনও ছবি নেই। কার্ডে মনজুর নামে একজনের নাম লেখা আছে।’
মোহনপুর ওয়ার্ডের উপকারভোগী আমির হোসেন বলেন, ‘আগে আমাদের ওয়ার্ডে ৩০০ কার্ড ছিল। আজ সকালে সেখানে ১০০ জনেরে কার্ড দিয়েছে। আমার কার্ড না পেয়ে পণ্যের দাবিতে রাস্তায় নেমেছি। আমরা বর্তমান ইউএনওর অপসারণ চাই।’
টিসিবির পণ্য বিতরণের দায়িত্বে থাকা পরিবেশকের সহকারী শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা দুই হাজার ৩০৮ জনের পণ্য বরাদ্দ পেয়েছি। ৫৪০ টাকা মূল্যে প্রতি কার্ডের বিপরীতে পাঁচ কেজি চাল, দুই কেজি ডাল, এক কেজি চিনি ও দুই লিটার সয়াবিন তেল বিক্রির কথা ছিল। হট্টগোলের কারণে বিতরণ করতে পারিনি।’
পৌরসভার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) নিয়াজ মাখদুম বলেন, ‘টিসিবির কার্ডের বিষয়ে আমি কিছু জানি না। পৌরসভার গেটে অবরোধের খবর পেয়ে আমি ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেছি। পরে পৌরসভার প্রশাসক এসে বিএনপি, জামায়াত ও ছাত্র প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করেছেন। কারা টিসিবির পণ্য পাওয়ার যোগ্য, সেটা দেখার জন্য ১০ জনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।’
মণিরামপুর পৌরসভার প্রশাসক ইউএনও নিশাত তামান্না বলেন, ‘সড়ক অবরোধ হয়নি। একসঙ্গে বহু মানুষ চলে আসায় পৌরসভার গেটে ভিড় হয়েছে।’
নিজের অপসারণ দাবির বিষয়ে ইউএনও বলেন, ‘পৌরসভার দুই হাজার ৭১২ কার্ডের মধ্যে দুই হাজার ২৯৬ স্মার্ট কার্ড তৈরির তালিকা ৫ আগস্টের আগের। এই তালিকা তৈরিতে আমার কোনও সংশ্লিষ্টতা নেই। স্মার্ট কার্ডের বিপরীতে আমরা পণ্য দিচ্ছি না। সংশোধিত তালিকায় অনেক ত্রুটি আছে। এই তালিকার পুরোটাই সংশোধনের আবেদন করা হবে। এখন টিসিবির যে পণ্য এসেছে, তা বিতরণের জন্য পৌরসভার সব ওয়ার্ডে নতুন করে তালিকা করা হবে।’