বিদ্যালয়ের জায়গা দখল করে ‘জিয়া স্মৃতি সংসদ’, ভয়ে আত্মগোপনে প্রধান শিক্ষক

যশোরের কেশবপুরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জায়গা দখল করে ‘জিয়া স্মৃতি সংসদ’ নামে একটি কার্যালয় বানিয়েছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। ইতিমধ্যে তারা সেখানে সাইনবোর্ড টানিয়ে দিয়েছেন। উপজেলার চিংড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জায়গা এটি। সরকার পতনের আগে জায়গাটিতে যুবলীগের কার্যালয় ছিল।

জায়গা দখলের বিষয়ে বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দেন। অভিযোগ করায় প্রধান শিক্ষককে হুমকি দেওয়া হয়েছে। ভয়ে বর্তমানে আত্মগোপনে আছেন তিনি।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাকির হোসেন বলেন, ‘এ ঘটনা জানার পরপরই সেখানে সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) পাঠানো হয়েছিল। তিনি সেটি ভেঙে দিয়ে এসেছেন।’

এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অজয় কুমার দত্ত বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘বিদ্যালয়ের জায়গায় রাজনৈতিক দলের কার্যালয় নির্মাণের বিষয়ে অভিযোগ দেওয়ার পর কয়েকজন আমার বাড়িতে এসে খুঁজতে থাকেন। তারা আমার স্ত্রীকে শাসিয়ে গেছেন। তারা কারা, তাদের নাম বলতে পারবো না আমি।’

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ৩০ বছর ধরে উপজেলার সাগরদাঁড়ি ইউনিয়নের চিংড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পশ্চিম পাশে জমি দখল করে রাজনৈতিক কার্যালয় চলছে। গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ওই জায়গায় জিয়া স্মৃতি সংসদের ব্যানার টানিয়ে দেওয়া হয়। কেশবপুর চিংড়া সড়কের পাশে সামনে প্রস্থে ছয় থেকে সাত হাত, দৈর্ঘ্যে পেছনে ১০ থেকে ১২ হাত জায়গায় একটি টিনের চাল কাঠের তক্তার বেড়া দিয়ে কার্যালয়টি করা হয়েছে। বিদ্যালয়ের জায়গায় ঘরটি আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে তৎকালীন যুবলীগের আহ্বায়ক আযাহারুল ইসলাম দখল করে যুবলীগের কার্যালয় হিসেবে ব্যবহার করতেন। এর আগে ১৯৯১ সালের দিকে তৎকালীন বিএনপি নেতা ও স্থানীয় ইউপি সদস্য মোনায়েম খান দখল করে দলীয় কার্যালয় করেন। এখন জিয়া স্মৃতি সংসদের নামে পাকা ঘর নির্মাণের চেষ্টা করা হয়।

এলাকার কয়েকজন বাসিন্দা জানান, ক্ষমতার পালাবদলের সময় বিদ্যালয়ের ওই জায়গার দখলও পাল্টে যায়। বিদ্যালয় ওই জায়গা দখলমুক্ত করতে পারে না। এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক অজয় কুমার দত্ত ২৪ ফেব্রুয়ারি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগটিতে কেশবপুরের উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুর রব জায়গাটি দখলমুক্ত করার বিষয়ে সুপারিশ করেন। অভিযোগের পর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাৎক্ষণিক উপজেলা সহকারী কমিশনারকে পাঠিয়ে ইট দিয়ে গাঁথা অংশ ভেঙে দেন। পরে আবারও সেটি গাঁথার কাজ চলছে এখন।

এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক অজয় কুমার দত্ত বলেন, ‘অভিযোগ করার পর আমাকে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। বর্তমানে ভয়ে আত্মগোপন করে অন্যত্র আছি। আমাকে কেউ রক্ষার জন্য এগিয়ে আসছে না।’

অভিযোগের বিষয়ে বিএনপির সাগরদাঁড়ি ইউনিয়ন কমিটির সভাপতি আকরাম হোসেন বলেন, ‘ওই জায়গা এর আগে যখন আওয়ামী লীগের দখলে ছিল, তখন কেউ কথা বলেনি। সেখানে আমাদের কর্মীরা সাময়িক ওঠাবসা করছে। সেখানে কোনও পাকা স্থাপনা হচ্ছে না। ইট দিয়ে যেটুকু গাঁথা হয়েছে, তা বাজারের পানি আসা ঠেকানোর জন্য করা হয়েছে।’

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুর রব বলেন, ‘বিদ্যালয়ের জায়গা দখল করে পাকা স্থাপনা নির্মাণের বিষয়ে ইউএনও আমাকে তদন্ত করার দায়িত্ব দিয়েছেন। আমি একজন সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা দিয়ে তদন্ত করে ইউএনও বরাবর প্রতিবেদন দেবো। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাকির হোসেন বলেন, ‘নতুন পাকা স্থাপনা নির্মাণ করা হলে সরকারি সম্পত্তি উদ্ধারে উচ্ছেদ নোটিশ পাঠানো হবে। সরকারি সম্পত্তি উদ্ধারে প্রক্রিয়ায় মাধ্যমে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’