কুষ্টিয়ার মিরপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) নির্দেশে উপজেলা পরিষদের তিনটি প্রবেশদ্বারের মধ্যে দুটি গেট প্রায় ৫ মাস ধরে বন্ধ রয়েছে। এই দুটি প্রবেশদ্বারে একটিতে উপজেলা পরিষদের জামে মসজিদও রয়েছে। এ ছাড়াও উপজেলা পরিষদের গেটের বাইরে আশপাশে প্রায় অর্ধশতাধিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে।
গেট দুটি দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার অভিযোগ তুলেছেন। তা ছাড়াও মসজিদের সঙ্গে লাগোয়া গেটটি বন্ধ থাকায় নামাজ আদায় করতে আসা মুসল্লিরা ভোগান্তিতে পড়ছেন।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, গত বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর মিরপুরে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব রহমত আলী রব্বানসহ উভয়পক্ষের কমপক্ষে ১০ জন আহত হয়। এর পরদিন মিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিবি করিমুন্নেছার নির্দেশে উপজেলা পরিষদের তিনটি গেটের মধ্যে দুটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বন্ধ গেট দুটির অন্তত একটি খুলে দেওয়ার অনুরোধ জানালেও ইউএনও এতে কোনও কর্ণপাত করেননি।
উপজেলার দুই নম্বর গেটের ব্যবসায়ী সোহেল বলেন, ‘গেট বন্ধ করে দেওয়ার পরে ম্যাডামের (ইউএনও) কাছে আমরা সবাই মিলে গিয়ে গেটটা খুলে দেওয়ার জন্য বলেছিলাম। উনি উত্তরে বলেছিলেন, আপনাদের ব্যবসায় যদি কোনও ক্ষতি হয় তাহলে আপনারা ব্যবসা বন্ধ করে দেন। এরপরে আমরা সেখান থেকে অপমানিত হয়ে চলে আসি।’
তিনি আরও বলেন, ‘উপজেলা পরিষদের প্রধান গেটের চেয়ে এই গেট দিয়ে মানুষ সবচেয়ে বেশি যাতায়াত করে। এই গেট দিয়ে যাতায়াত করাটা মানুষের কাছে সহজ হয়। এ ছাড়া এই গেটে একটি মসজিদ রয়েছে। গেটটা খোলা থাকলে উপজেলায় যারা কাজের জন্য আসেন তাদের নামাজে যাতায়াত সুবিধা হয়। এটার প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে।’
স্থানীয় আরেক ব্যবসায়ী জিয়াউর ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘গেট বন্ধ থাকায় আমাদের ব্যবসা হচ্ছে না। গেটটা খুললে আমাদের উপকার হয়, কিন্তু উনি (ইউএনও) কোনও কথাই শুনছেন না।’
স্থানীয় চা-দোকানি আজিজুল হক বলেন, ‘উপজেলা পরিষদের এই গেটটা ম্যাডাম হঠাৎ করে তালা মেরে দিয়েছেন। আমরা দোকানদাররা সবাই গিয়েছিলাম। ওনাকে আমরা সকাল ৯টা থেকে ৫টা পর্যন্ত গেটটা খোলা রাখার জন্য বলি। আমাদের দোকানগুলো সবই উপজেলা পরিষদের মসজিদের। আমরা ভাড়াগুলো মসজিদে দিই। কিন্তু উনি বললেন গেট খোলা হবে না। আমাদের নিরাপত্তার জন্য এটি বন্ধ রাখা হয়েছে। আমরা অনুরোধ করার পরেও গেটটি খোলেনি।’
মিরপুর উপজেলা পরিষদ বাজার সমিতির সাবেক সেক্রেটারি সানোয়ার হোসেন বলেন, ‘এটি উপজেলার বাজার। আর উপজেলার লোকজন যদি না আসে সেটা আর বাজার থাকে না। আমাদের বাজারের কোনও আর অস্তিত্ব নেই, একেবারেই বন্ধ অবস্থা। কোনটা অফিসিয়াল দিন আর কোনটা শুক্রবার, এটা আমরা বুঝতে পারি না।’
তিনি আরও বলেন, ‘উপজেলার গেটটা বন্ধ হওয়ার কারণে আমাদের এমন পরিস্থিতি। এই বাজারে প্রায় ৫৭টি দোকান রয়েছে। এর মধ্যে শুধু এই গেটে ৩৮টি। ব্যবসায়ীদের স্বার্থে গেটটা খুলে দেওয়া অত্যন্ত জরুরি।’
সচেতন নাগরিক কমিটির কুষ্টিয়া জেলা সভাপতি রফিকুল আলম বলেন, ‘গেট বন্ধের কারণে জনদুর্ভোগ বেড়েছে। বিষয়টি খুবই ক্ষতিকারক। এখানে কিছু মানুষ জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছে। কিছু দোকান গড়ে উঠেছে এই গেটকে কেন্দ্র করে। যেখানে মানুষের অবাধ চলাচল ছিল, হঠাৎ করে বন্ধ করাটা অবশ্যই প্রশাসনের দেখা উচিত। সেই সঙ্গে এখানে একটা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ আছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ওখানে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা নামাজ পড়েন। তাদের যাতে কোনও বিঘ্ন না ঘটে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ওখানে এতদিন যে যাওয়া-আসার রাস্তাটা যার কারণে কিছু ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে, সেগুলো তাদের জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছে। তার ওপরে তাদের পরিবার পরিজন আছে, দোকানের কর্মচারী আছে, তাদের জীবন-জীবিকা আছে। সবদিক বিবেচনা করে আমার মনে হয় প্রশাসনের ভেবে দেখা উচিত।’
এ বিষয়ে ইউএনও বিবি করিমুন্নেছা বলেন, ‘যেকোনও প্রতিষ্ঠানের একটি গেট থাকে। তিনটি গেট অপ্রয়োজনীয়। তিনটা গেট ছিল, এখন প্রয়োজন নেই। তাতে কোনও সমস্যা হচ্ছে না। মসজিদে ঢোকার জন্য একটি গেট রয়েছে।
দুটি গেট বন্ধ করার বিশেষ কোনও কারণ আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিশেষ কারণ অবশ্যই আছে। আমার উপজেলা পরিষদের সিকিউরিটি নষ্ট হয়। কিছুদিন আগেও আমার উপজেলা চত্বরে গাঁজা, ফেন্সিডিলের বোতল পাওয়া যেত। রাতের বেলা এসব আড্ডা ছিল। আমি এসব ঠেকানোর জন্য যেকোনও একদিকে এক্সেস এবং এন্ট্রি করেছি। যাতে কে বের হচ্ছে, কে ঢুকছে জানতে পারি।’
ব্যবসায়ীদের অভিযোগের বিষয়ে ইউএনও বলেন, ‘এখানে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের কোনও ক্ষতি হচ্ছে না। এটা আপনি খুব ভালো করেই জানেন। এই গেট থেকে ওই গেটের দূরত্ব ৩০ সেকেন্ডের পথও না। আপনি হেঁটে দেখেন ৩০ সেকেন্ড লাগে কি না?’
তিনি আরও বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের অভিযোগ শোনার টাইম নাই। ওনারা আমার কাছে অনেক আগে আসছে এবং বিষয়টি সেটেল। এখানে যারা সত্যিকারের ব্যবসায়ী তাদের কোনও সমস্যা হওয়ার কথা না। ওনাদের এটার কারণে আসলেই যদি কোন লস হতো তাহলে তো ব্যবসা ছেড়ে দিতো। খুব অল্প ভাড়া দিয়ে তারা এখানে ব্যবসা করছে এবং এই দোকানগুলো আমাদের। সুতরাং এটা নিয়ে অভিযোগ করার কারণ নেই। উপজেলা পরিষদ চত্বর এটা একটা অফিসের চত্বর। এটা বিজনেসম্যানদের সুবিধা করে দেওয়ার কোনও চত্বর না। এখানে মানুষ অফিসিয়াল কাজে আসে এবং তারা কাজ শেষে চলে যায়। এখানে তো বিজনেস করার কোনও বিষয় না।’