মাগুরার বরেণ্য শিক্ষাবিদ, সামাজিক সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ভাষাসৈনিক খান জিয়াউল হকের তৃতীয় মৃত্যুবার্ষিকী মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি)। দিনটি পালন উপলক্ষে আলোচনা সভা, দোয়া মাহফিল ও এতিমখানায় মধ্যাহ্নভোজের আয়োজন করা হয়েছে।
১৯২৮ সালের ৮ জুন মাগুরার ভায়না গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তৎকালীন মাগুরা এসডিও কোর্টের নাজির আবুল কাশেম খানের ছেলে খান জিয়াউল হক। বাবার চাকরি সূত্রে শৈশব কেটেছে নানা জায়গায়। বনগাঁ থেকে প্রাথমিক পর্যায়ের লেখাপড়া শেষ করে যশোর জেলা স্কুল থেকে মাধ্যমিক, কোলকাতা রিপন কলেজে এবং যশোর এমএম কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক ও বিএ পড়েছেন। এমএম কলেজে পড়াকালীন পর্যায়ক্রমে ছাত্র সংসদের জিএস ও প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। এ সময় তিনি ভাষা আন্দোলনে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৫২ সালে যশোর এমএম কলেজে ব্যাপক পুলিশের হামলার পর মাগুরায় চলে আসেন এবং ভাষা আন্দোলনে অন্যতম সংগঠকের ভূমিকা পালন করেন। ওই বছর ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ছাত্র হত্যার প্রতিবাদে মাগুরায় মিছিল বের হলে খান জিয়াউল হকসহ তিন জনকে আটক করেছিল পুলিশ।
পরে মাগুরা মডেল হাইস্কুলে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন খান জিয়াউল হক। ১৯৬২ সালে মাগুরা এজি একাডেমিতে প্রধান শিক্ষক পদে যোগ দিয়ে ৪৪ বছর এই পদে নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। এখান থেকেই জড়িত হন নানা সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে। পরিণত হন মাগুরার সাংস্কৃতিক অঙ্গনের পুরোধা ব্যক্তিত্বে। দীর্ঘ ২২ বছর মাগুরা টাউন হলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে এই অঞ্চলের থিয়েটার আন্দোলনে ভূমিকা রাখেন। অসংখ্য নাটকে অভিনেতা ও নির্দেশক হিসেবে কাজ করেন।
৪৪ বছর মাগুরা সৈয়দ আতর আলী পাবলিক লাইব্রেরির সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে এটিকে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেন। ১৯৬৫ সালে মাগুরায় সর্বপ্রথম স্কাউট আন্দোলনের প্রবর্তন করেন। তার উদ্যোগে এজি একাডেমিতে শুরু হয় মাগুরা দুধ মল্লিক বালিকা বিদ্যালয়, মাগুরা আদর্শ কলেজ, তিন নম্বর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কার্যক্রম। এ ছাড়া মগুরা সরকারি মহিলা কলজসহ অসংখ্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তৈরিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন এই শিক্ষাবিদ।
স্বীকৃতি হিসেবে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক বাংলাদেশ স্কাউটসের সর্বোচ্চ সম্মান রৌপ্য ব্যাঘ্র পদক, জাতীয় সমাজ কল্যাণ পুরস্কার, বঙ্গবন্ধু আবৃত্তি স্মারক সম্মান, নরেন বিশ্বাস পদক, গোলাম মুস্তাফা স্মৃতি সম্মাননা, শ্রেষ্ঠ প্রধান শিক্ষক পুরস্কার, আব্দুল হাই গোল্ড মেডেল, হরিশ দত্ত নাট্য পদক, থিয়েটার ইউনিট নাট্য পদক, জেলা শিল্পকলা একাডেমি পদকসহ অসংখ্য পদক ও সম্মাাননায় ভূষিত হন খান জিয়াউল হক।