১০ দিনে মোংলা বন্দরে এলো পণ্যবাহী ২৮টি জাহাজ

দেশের দ্বিতীয় সমুদ্রবন্দর মোংলায় কনটেইনার পণ্যবাহী জাহাজের আগমন বেড়েছে। নতুন বছরের প্রথম ১০ দিনে বন্দরে ভিড়েছে ২৮টি বাণিজ্যিক জাহাজ। ফলে ব্যস্ত সময় পার করছেন শ্রমিক-কর্মকর্তারা। আগের চেয়ে বেশি জাহাজ আসায় বেড়েছে বন্দরের আয় ও রাজস্ব।

শুক্রবার (১০ জানুয়ারি) রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের মালামাল নিয়ে দুটি কনটেইনারবাহী জাহাজ বন্দরে আসে। ফলে বন্দরের বিভিন্ন পয়েন্টে বর্তমানে ১৮টি জাহাজ অবস্থান করছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, দুদিন আগে সাড়ে ৭ মিটার গভীরতা ও ১৪২.৭০ মিটার দৈর্ঘ্যের বারমুডার পতাকাবাহী ‘এমভি পাকান্ডা অ্যান্টিগা’ নামের একটি জাহাজ বন্দরের ৭ নম্বর জেটিতে ভিড়েছে। জাহাজটিতে ১৯০টি টিউজ কনটেইনার পণ্য রয়েছে। এ ছাড়া ২০৭টি টিউজ নিয়ে ‘মার্কস ঢাকা’ নামে আরও একটি কনটেইনারবাহী জাহাজ ৮ নম্বর জেটিতে ভেড়ার কথা আছে। পানামার পতাকাবাহী এই জাহাজটি ১৮৬ মিটার বিশাল দীর্ঘ ও ৭.১০ মিটার গভীর। পাশাপাশি রাশিয়ার পতাকাবাহী এমভি মেলিনা নামের একটি জাহাজ রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রকল্পের মালামাল নিয়ে বন্দরের ৯ নম্বর জেটিতে অবস্থান করছে।

বন্দরের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, দেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে বন্দরটি। নৌ, সড়ক ও রেলপথ এসব অবকাঠামো তৈরি থাকায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সহজে পণ্য পাঠানোর পাশাপাশি প্রতিবেশী ভারত, নেপাল ও ভুটানের জন্যও এই বন্দরের ব্যবহার দারুণ সম্ভাবনাময়। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে বন্দরকে এগিয়ে নিতে সব ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এজন্য বিদেশি জাহাজের আগমন বেড়েছে। 

মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের উপপরিচালক মো. মাকরুজ্জামান বলেন, ‌‘২০২৫ সালের শুরু থেকে মোংলা বন্দরে বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজের আগমন বেড়েছে। বর্তমানে বন্দরের পশুর চ্যানেলের বিভিন্ন স্থানে ১৮টি বাণিজ্যিক জাহাজ অবস্থান করছে। এসব জাহাজে কয়লা, সার, সিমেন্টের কাঁচামাল ক্লিংকার, এলপিজি ও পাথরসহ বিভিন্ন পণ্য আছে। এর মধ্যে ১ জানুয়ারি থেকে ১০ জানুয়ারি বন্দরে এসেছে ২৮টি জাহাজ।’

তিনি বলেন, ‘প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই বন্দরের প্রধান চ্যালেঞ্জ ছিল দীর্ঘ নৌপথের নাব্যতা সংকট। সমুদ্রগামী জাহাজ চলাচলের উপযোগী গভীরতা হারিয়ে ফেলায় ১৯৮০ সাল থেকে বন্দরটিতে বাণিজ্যিক জাহাজের আগমন প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। এরপর বিভিন্ন সময় নৌপথটি খনন করা হয়। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোয় নিয়মিতভাবে খননের মাধ্যমে এই বন্দরকে গতিশীল করে তোলা হয়েছে।’

বন্দর কর্তৃপক্ষ জানায়, ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসে বন্দরে ৪১৩টি বাণিজ্যিক জাহাজ আসে। এ সময়ে ১০ হাজার ৩৮৬টি টিউজ কনটেইনার খালাস করা হয়। প্রথম ছয় মাসে গাড়ি বহনকারী ১০টি জাহাজ থেকে পাঁচ হাজার ৬৩৭টি গাড়ি আমদানি হয়েছে। এই সময়ে বন্দর দিয়ে সর্বমোট আমদানি-রফতানি হয়েছে ৫২ লাখ ৮৪ হাজার ৪৭১ টন পণ্য, যা থেকে ২১০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। ২০২২-২০২৩ অর্থবছরের তুলনায় ২০২৩-২০২৪-এ বিদেশি জাহাজের আগমনের ক্ষেত্রে ২ দশমিক ৩০ শতাংশ, কার্গো ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ, কনটেইনারবাহী জাহাজ ১৬ দশমিক ৭৮ শতাংশ এবং গাড়ির ক্ষেত্রে ১৩ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়েছে।