আড়াই মাস আগে হারপিক পান, পাইকগাছায় হিজড়ার অস্বাভাবিক মৃত্যু

খুলনার পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনিতে চন্দনা মণ্ডল (২০) নামে এক হিজড়ার (তৃতীয় লিঙ্গ) অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। আড়াই মাস আগে হারপিক পান করেছিলেন তিনি। কিন্তু তা ওয়াশ হয়নি। চিকিৎসায় উন্নতি হলেও শারীরিক দুর্বলতা ছিল। গত ৭ দিন ধরে তার পায়খানায় রক্ত যাচ্ছিল, ২৩ নভেম্বর রাতে হঠাৎ বমি হয়ে শয্যাশায়ী হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। মৃত্যুর সঠিক কারণ জানতে পুলিশ ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনের অপেক্ষায় রয়েছে।

মৃত চন্দনা কপিলমুনির গোলাবাটি এলাকার আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাসিন্দা। তার বাবা কয়রা উপজেলার চান্নিরচক বউ বাজার এলাকার আনন্দ মণ্ডল। ২৪ নভেম্বর ময়নাতদন্তের পর লাশ তার বাবার কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপর সনাতনধর্মীয় রীতি অনুযায়ী তার শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হয়।

শনিবার (২৩ নভেম্বর) রাত আনুমানিক পৌনে ১০টার দিকে নিজ ঘরে তার মৃত্যু হয়। তবে তাৎক্ষণিক তার মৃত্যুর কারণ জানা যায়নি।

স্থানীয়রা জানান, চন্দনা ছাড়াও গোলাবাড়ি আশ্রয়ণ প্রকল্পে ২ জন হিজড়া সম্প্রদায়ের বসবাস রয়েছে। গুরুমা জুঁইয়ের তত্ত্বাবধানে চন্দনা সেখানে বসবাস করতেন।

গুরুমা জুঁই জানান, ২৩ নভেম্বর রাত ৯টার দিকে তারা একসঙ্গে কপিলমুনি বাজার থেকে কেনাকাটা সেরে বাসায় আসেন। তখন চন্দনা স্বাভাবিক ছিল। তবে বাসায় ফেরার পর চন্দনার বমি হয়। এ সময় তারা স্থানীয় পল্লিচিকিৎসক মাহমুদুল্লাহকে বাসায় ডেকে আনেন। ডাক্তার প্রাথমিক পরীক্ষা শেষে জানান তার (রোগীর) পালস নেই। তাই তিনি চিকিৎসা না দিতে পেরে তাকে অন্যত্র নেওয়ার পরামর্শ দেন। এর কিছুক্ষণ পরই চন্দনার মত্যৃ হয়।

তিনি আরও জানান, চন্দনার সঙ্গে একটি ছেলে মোবাইলে কথা বলতো। প্রায় আড়াই মাস আগে চন্দনা হারপিক পান করেছিল। এরপর বিভিন্ন স্থানে চিকিৎসার পর সুস্থ হয় চন্দনা। ৩ মাস পর আবার ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল।

গুরুমা আরও বলেন, ‘গত ১০-১২ দিন আগে তার (চন্দনা) পায়খানা ও বমির সঙ্গে রক্তক্ষরণ হয়। এরপর তাকে কপিলমুনি হাসপাতালে নিয়ে রক্ত, প্রস্রাব পরীক্ষা করাসহ বেশ কিছু পরীক্ষা হয়। তাতে প্রস্রাবে বেশি সমস্যা পাওয়া যায়। তার চিকিৎসা চলছিল। কিন্তু ওষুধ খাওয়ার ক্ষেত্রে তার অনিয়ম ছিল। চন্দনা জানে সে নিজে কী, তাই কোনও সম্পর্কের কারণে সে হারপিক খায়নি। মানসিক অস্থিরতা থেকে সে হারপিক খেয়েছিল।’

গোলাবাড়ি পুলিশ ফাঁড়ির উপপরিদর্শক (এসআই) হুমায়ুন বলেন, ‘খবর পেয়ে ২৪ নভেম্বর আশ্রয়ণ প্রকল্প থেকে চন্দনার লাশ উদ্ধার করা হয়। এরপর মৃত্যুর সঠিক কারণ জানার জন্য লাশ খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিকে নিয়ে ময়নাতদন্ত করানো হয়। পরে তার পরিবারের সদস্যদের কাছে লাশ হস্তান্তর করা হয়। তারা তাকে কয়রার বাড়িতে নিয়ে যায়।’

পাইকগাছা থানার তদন্ত কর্মকর্তা (ওসি, তদন্ত) তুষার কান্তি দাশ বলেন, ‘হিজড়া সম্প্রদায়ের সদস্য চন্দনার মৃত্যুর খবর সেখানে যাই। তার সম্প্রদায়ের আরও লোকজন সেখানে ছিল। তাদের তথ্য ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চন্দনা প্রায় ৩ মাস আগে অসাবধানতাবশত হারপিক পান করে। এরপর তাকে কপিলমুনি ও সাতক্ষীরায় চিকিৎসা করানো হয়। কিন্তু সেসময় ওয়াশ করানো সম্ভব হয়নি। তাই চিকিৎসায় তার অবস্থার উন্নতি হলেও শারীরিক সমস্যা ছিল। গত এক সপ্তাহ ধরে তার পায়খানায় রক্তক্ষরণ হচ্ছিল কিন্তু গুরুত্ব দেয়নি। ঘটনার রাতে বমি হয়ে অসুস্থ হওয়ার পর তার মৃত্যু হয়। আমরা ধারণা করছি, হারপিক পানের পর ওয়াশ না হওয়ায় তার প্রতিক্রিয়া থেকে এমন হতে পারে। তাই ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করছি।’

খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার (আরএমও) ডা. সুহাস রঞ্জন হালদার বলেন, ‘হারপিক পানে নাড়িতে ক্ষত সৃষ্টি হয়। যা সঠিকভাবে ওয়াশ হওয়াটা জরুরি। কিন্তু সেটা না হলে ক্ষতস্থানে আলসার থেকে প্রতিক্রিয়া হতে পারে। এ ক্ষেত্রে সঠিক তথ্য ময়নাতদন্তে জানা সম্ভব।’