১৩৪তম তিরোধান দিবস

বৈষম্যবিরোধী সমাজ প্রতিষ্ঠার রূপকার ছিলেন লালন: উপদেষ্টা ফরিদা আখতার

মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, ‘আজ থেকে ১৩৪ বছর আগে মরমি সাধক ফকির লালন সাঁই তৎকালীন জমিদারদের বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক আচরণের তীব্র প্রতিবাদ করেছিলেন। সেসময় তার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন প্রাসঙ্গিক এবং সর্বজন গ্রহণযোগ্য ছিল। ঠিক তেমনি স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের পতন ঘটাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনও প্রাসঙ্গিক এবং গুরুত্বপূর্ণ। তরুণ ছাত্র-জনতার প্রতি আমার এবং সরকারের পূর্ণ আস্থা রয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নিহত এবং আহতদের পরিবারের সকল দায়িত্ব সরকার বহন করতে বদ্ধপরিকর।’

বৃহস্পতিবার (১৭ অক্টোবর) রাতে কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলার ছেঁউড়িয়ায় বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহের ১৩৪তম তিরোধান দিবসের ৩ দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।

ফরিদা আখতার বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী সমাজ প্রতিষ্ঠার রূপকার ছিলেন লালন সাঁই। সবকিছুর ঊর্ধ্বে মানুষ ও মানবতা। জাত-পাতের কোনও মূল্য নেই, মূল্য শুধু মানবতার। তাই সবার আগে নিজেদের মধ্যে হানাহানি বাদ দিয়ে সাম্প্রদায়িকতার ঊর্ধ্বে থেকে মানুষের কল্যাণে নিবেদিত হতে হবে। বাউল সম্রাট ফকির লালন সাঁইয়ের কোনও ধর্ম ও জাত ছিল না। লালনের একমাত্র পরিচয় ছিল মানবতা। তিনিই একমাত্র বাউল সাধক যিনি সকল ধর্মের সীমাবদ্ধতাকে ছাড়িয়ে সদা সত্য পথে চলতে মানুষকে মানবতার পথে ডাক দিয়েছিলেন। তাই লালন সাঁইয়ের আদর্শ হোক আধুনিক সমাজ গড়ার পথ ও পাথেয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘রাষ্ট্র কিংবা সমাজের বৈষম্য নয়, সবার আগে নিজের ভেতরের বৈষম্য দূর করতে হবে। তবেই তো একটি সুন্দর সমাজ প্রতিষ্ঠা হবে। দেশের উন্নয়নে নারীসমাজের অবদান রয়েছে অপরিসীম। তাদের প্রতি, তাদের কাজের প্রতি সম্মান দেখাতে হবে। লালন সাঁইজি অহিংস মানবতার ব্রত নিয়ে মানুষের কল্যাণে অসংখ্য গান সৃষ্টি করে গেছেন। তার এই অমর সৃষ্টি সংগীত কোনও ধর্মের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। সকল ধর্মের ঊর্ধ্বে থেকে সম্প্রীতির বাঁধনে আবদ্ধ করতে মরমি এই সাধক মানবমুক্তির জন্য সৃষ্টি করেছিলেন ফকিরি মতবাদ।’

অনুষ্ঠানের শুরুতেই আগত অতিথি ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার প্রতিনিধিদের কুষ্টিয়া লালন একাডেমির পক্ষ থেকে ফুলের তোড়া, ক্রেস্ট ও আত্মশুদ্ধির প্রতীক একতারা উপহার দিয়ে বরণ করে নেওয়া হয়।

উল্লেখ্য, ১৮৯০ সালের পয়লা কার্তিক কুষ্টিয়ার কুমারখালীর চাপড়া ইউনিয়নের ছেঁউড়িয়া দেহত্যাগ করেন উপমহাদেশের প্রখ্যাত বাউল সম্রাট ফকির লালন শাহ। এরপর থেকে আখড়াবাড়ী চত্বরে তার ভক্ত-অনুসারীরা তাদের সাঁইজিকে স্মরণ করে আসছেন। লালন একাডেমি প্রতিবছর ছেঁউড়িয়ায় একাডেমি চত্বরে লালন স্মরণোৎসবের আয়োজন করে।