মেয়েকে শিকলে বেঁধে নিজের সঙ্গে নিয়ে ঘোরেন মা

জন্ম থেকে প্রতিবন্ধী ১৩ বছরের কিশোরী জামিলা খাতুন মুন্নি। তাকে শিকল দিয়ে বেঁধে নিজের সঙ্গে নিয়ে ঘোরেন মা রাবেয়া বেগম। সাত বছর ধরে এভাবেই শিকলবন্দি জীবন কাটছে মুন্নির।

রাবেয়া বেগমের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হারিয়ে যাওয়ার ভয়ে মুন্নিকে শিকলে বেঁধে নিজের কোমরের সঙ্গে শিকল লাগিয়ে রাখেন মা। ওভাবে রাস্তায় চলাচল করেন। ভিক্ষাবৃত্তি করেই সংসার চালান। সাত বছর ধরে মেয়েকে নিয়ে এভাবে ছুটছেন। অর্থাভাবে চিকিৎসা করাতে পারছেন না। সমাজের বিত্তবান ও সরকারের কাছে মেয়ের চিকিৎসার জন্য অর্থ সহায়তা চেয়েছেন রাবেয়া।

রাবেয়া বেগম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘১৩ বছর আগে জন্ম মুন্নির। জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধী। বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। কারও কোনও কথা শুনতে এবং বুঝতে চায় না। যা মনে আসে তাই করে। হুটহাট করে ঘরের বাইরে চলে যায়। এজন্য হারিয়ে যাওয়ার ভয়ে বেঁধে রেখে নিজের সঙ্গে নিয়ে চলছি।’

তিনি বলেন, ‘আমার তিন মেয়ে। বড় দুই মেয়েকে বিয়ে দিয়েছি। স্বামী তোতা মিয়া সবজি বিক্রি করে সংসার চালাতেন। সে আয়ে মেয়ের চিকিৎসাও চলেছিল। তিন বছর আগে স্বামী মারা যান। এতে বিপাকে পড়ে যাই। আগে বটিয়াঘাটা উপজেলার বাড়িতে থাকতাম। পরে খুলনার দৌলতপুরে চলে আসি। তিন দোকান মোড় এলাকায় ঘর ভাড়া নিয়ে থাকি। আর রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে মেয়ের জন্য ভিক্ষাবৃত্তি করে যাচ্ছি।’

সরকারি কোনও সহায়তা পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে রাবেয়া বেগম বলেন, ‘সমাজসেবা অধিদফতর থেকে এক বছর আগে মুন্নি প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড পায়। তারা মুন্নিকে একটি হুইলচেয়ার দেয়। সেটি নষ্ট হয়ে গেছে। একটি দোকান করে দিতে চেয়েছিল সমাজসেবা। কিন্তু আমি লেখাপড়া জানি না। দোকান চালাবো কীভাবে। আমার দরকার মেয়েকে সুস্থ করে তোলা। কেউ যদি তার চিকিৎসার খরচ দিতো তাহলে বড় উপকার হতো।’ 

এ ব্যাপারে খুলনা বিভাগীয় জেলা সমাজসেবা অধিদফতরের উপপরিচালক মোতাহার হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রতিবন্ধীদের জন্য সরকারি বরাদ্দের বাইরে আলাদা করে কোনও সহায়তা দেওয়া যায় না। কারণ এর জন্য কোনও বরাদ্দ নেই। তবে কোনও প্রতিবন্ধী যদি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয়, তা আমাদের নজরে আসলে স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে কথা বলে তার চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে আমরা উদ্যোগ নিই।’