বিশ্ব বাঘ দিবস

সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা কত, জানা যাবে কবে?

আজ ২৯ জুলাই। বিশ্ব বাঘ দিবস। কিন্তু এবার দিবসটি পালন পিছিয়েছে। একই সঙ্গে বাঘ জরিপের ফলাফল ঘোষণাও পিছিয়েছে। আগস্টের মধ্যে সুবিধাজনক সময়ে বাঘ জরিপ ফলাফল ঘোষণা ও বিশ্ব বাঘ দিবস পালিত হবে। সুন্দরবন অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, ‘জরিপ শেষ করেই আগস্টের মধ্যে ফলাফল ঘোষণা ও বিশ্ব বাঘ দিবস পালন করা হবে।’

সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে ২০১৮ সালের জরিপে ১১৪টি বাঘ শনাক্ত হয়। ২০২৩ সালের মার্চে সুন্দরবনের পশ্চিম অংশে বাঘ জরিপের ক্যামেরা ট্রাপিং শেষ হয়। আর নভেম্বর থেকে সুন্দরবনের পূর্ব অংশে ক্যামেরা ট্রাপিং শুরু হয়ে ২০২৪ সালের শুরুতে শেষ হয়। চলছে জরিপ পর্যালোচনার কাজ।

সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) ড. আবু নাসের মো. মোহসীন হোসেন বলেন, ‘জরিপ শেষে পর্যালোচনার কাজ অনলাইনে থেকেই করতে হচ্ছে। সম্প্রতি অনলাইন সেবা বিঘ্নিত হওয়ায় জরিপ পর্যালোচনার কাজ বিঘ্নিত হয়। এ কারণে জরিপের ফলাফল ঘোষণাও পিছিয়ে নেওয়া হয়। যা আগস্টের মধ্যেই ঘোষণা করা সম্ভব হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা বাড়াতে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। সুন্দরবন দস্যুমুক্ত করা হয়েছে। যার সুফল দেখা যাচ্ছে। বন্যপ্রাণী শিকার বন্ধ করতে বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। বন বিভাগ বাঘ সুরক্ষায় কাজ করছে। ইতোমধ্যেই বাঘের প্রজনন, বংশ বৃদ্ধিসহ অবাধ চলাচলের জন্য গোটা সুন্দরবনের অর্ধেকেরও বেশি এলাকাকে সংরক্ষিত বন হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। বনে টহল ও টহল ফাঁড়ি বাড়ানো হয়েছে। পাশাপাশি চোরা শিকারিদের তৎপরতা বন্ধে আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট প্যাট্রোলিং ও ফুট প্যাট্রোলিং চালু করা হয়েছে। মানুষের সচেতনতা বাড়াতে নেওয়া হয়েছে বিভিন্ন পদক্ষেপ। সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষা করতে জুন থেকে আগস্ট ৩ মাস সুন্দরবনের সকল পাস-পারমিট বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এতে করে সুন্দরবনে বন্যপ্রাণী অবাধে চলাচল করতে পারবে।’

এই বন কর্মকর্তা জানান, সুন্দরবনকে বন্যপ্রাণীর জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ করতে কাজ করছে বন বিভাগ। চূড়ান্ত রিপোর্ট পাওয়ার আগে নিশ্চিত করে বাঘ পরিস্থিতি সম্পর্কে কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে পারিপার্শ্বিক অবস্থা এবং সুন্দরবনের চিত্র এবং জীববৈচিত্র্য রক্ষায় নানা ধরনের কার্যক্রম চলছে। এ ছাড়া বাঘ প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। সার্বিক বিবেচনায় সুন্দরবনে বাঘের নিরাপদ বসবাসের পরিবেশ এখন অনেকটাই নিশ্চিত হয়েছে। দস্যুমুক্ত হয়েছে সুন্দরবন, চোরা শিকারিদেরও দৌরাত্ম্য থামানো গেছে। বাঘের শিকার হরিণের সংখ্যাও বেড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে ভালো সংবাদ দেওয়া যাবে বলেও তিনি জানান।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ‘সুন্দরবনই হচ্ছে এশিয়ার মধ্যে রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ বন্যপ্রাণীর বৃহত্তম আবাসভূমি। তবে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের এ আবাসভূমিকে বাঘের জন্য সম্পূর্ণ নিরাপদ করা সম্ভব হয়নি। সুন্দরবনকে বন্যপ্রাণীদের জন্য নিরাপদ করা গেলে দ্রুত বাঘের সংখ্যা বাড়বে। সম্প্রতি সুন্দরবনের বিভিন্ন এলাকায় বাঘের অবাধ বিচরণ ও প্রতিনিয়ত বাঘ শাবকের দেখা মিলছে বলে জানিয়েছেন সুন্দরবনের ওপর নির্ভরশীল জেলে, বাওয়ালি ও বিভিন্ন সময়ে বনে যাওয়া পর্যটকরা।’

বন বিভাগের তথ্যে জানা যায়, স্বাধীনতার পর ১৯৭৫ সালের জরিপে সুন্দরবনে বাঘ ছিল ৩৫০টি। এরপর ১৯৮২ সালে জরিপে ৪২৫টি। ১৯৮৪ সালে সুন্দরবন দক্ষিণ বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যের ১১০ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় জরিপ চালিয়ে ৪৩০ থেকে ৪৫০টি বাঘ থাকার কথা জানানো হয়। ১৯৯২ সালে ৩৫৯টি বাঘ থাকার তথ্য জানায় বন বভিাগ। ১৯৯৩ সালে সুন্দরবনরে ৩৫০ বর্গ কিলোমিটার এলাকায় প্যাগমার্ক পদ্ধতিতে জরিপ চালিয়ে ধন বাহাদুর তামাং ৩৬২টি বাঘ রয়েছে বলে জানান। ২০০৪ সালে জরিপে বাঘের সংখ্যা বলা হয় ৪৪০টি। ১৯৯৬-৯৭ সালের জরিপে বাঘের সংখ্যা উল্লেখ করা হয় ৩৫০ থেকে ৪০০টি। ওই সময়ে বাঘের পায়ের ছাপ পদ্ধতিতে গণনা করা হয়। ২০১৫ সালের প্রথম ক্যামেরা ট্রাপিং জরিপে সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশে বাঘের সংখ্যা দাঁড়ায় ১০৬টি। ২০১৮ সালে দ্বিতীয়বার ক্যামেরা ট্রাপিং হয়। তখনকার জরিপে সুন্দরবনে বাঘের সংখ্যা উঠে আসে ১১৪টিতে।

সুন্দরবন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০০১ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ৫০টি বাঘের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে স্বাভাবিকভাবে মারা গেছে ১০টি, বাঘ পিটিয়ে মারা হয়েছে ১৪টি, ২০০৭ সালের সুপার সাইক্লোন সিডরে নিহত হয়েছে ১টি। বাকি ২৫টি বাঘ হত্যা করেছে চোরা শিকারিরা।

সুন্দরবন অ্যাকাডেমির নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক আনোয়ারুল কাদির বলেন, ‘শুধু একটি প্রকল্প বা প্রকল্পভিত্তিক নির্দিষ্ট কাজ দিয়ে বাঘ সংরক্ষণে টেকসই ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা যাবে না। বরং প্রকল্পের বাইরে বাঘ সংরক্ষণে রেগুলার কর্মসূচি থাকতে হবে।’