গত ২৬ মে উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হানে ঘূর্ণিঝড় রিমাল। এতে প্রাণহানির পাশাপাশি ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ে উপকূলের বাসিন্দারা। যেটির ক্ষত এখনও কাটিয়ে উঠতে পারেননি ঘূর্ণিঝড়ে আক্রান্তরা। তেমনই একটি জনপদ খুলনার কয়রার দশহালিয়া গ্রাম।
রিমাল তাণ্ডবের ২১ দিন পার হলেও ওই গ্রামের মানুষ এখনও আতঙ্কিত। ওই এলাকায় ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধ আটকানো হয়েছে। কিন্তু প্লাবিত এলাকার মানুষ স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেননি। ভাঙা ঘরে বসবাস করছেন অনেকেই।
একমাত্র উপার্জনক্ষম চিংড়িঘের প্লাবিত হওয়ায় দিশাহারা হয়ে পড়েছেন চাষিরা। ছিন্নমূল মানুষগুলো রয়েছেন চরম হতাশায়। ত্রাণ কার্যক্রম খুবই সীমিত। নানা প্রতিবন্ধকতায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ। এর মধ্যে চলে এসেছে পবিত্র ঈদুল আজহা। মানুষের মাঝে নেই কোনও আনন্দের উপলক্ষ। ফলে ঈদ আনন্দ ম্লান হচ্ছে তাদের।
শুধু দশহালিয়া গ্রামের মানুষ নয়, ঘূর্ণিঝড় রিমালে ক্ষতিগ্রস্ত কয়রাজুড়েই এমন চিত্র। উপকূলীয় কয়রার মানুষের এবারের ঈদ আনন্দ কেড়ে নিয়েছে ঘূর্ণিঝড় রিমাল। দিনে অন্তত একবার খাবারের চিন্তায় ব্যাকুল পরিবারগুলোর কাছে নেই ঈদের আনন্দ। রিমালে কপোতাক্ষ নদের ভাঙনে মাথা গোঁজার ঠাঁইটুকু কেড়ে নেওয়া হয়েছে।
মহারাজপুর ইউনিয়নের দশহালিয়া গ্রামের তানিয়া খাতুন, নাজমা বেগম, শহিদুল্লাহ গাজীসহ আরও অনেকেই জানান, ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবলীলায় তাদের সব কিছু শেষ হয়ে গেছে। এখন শুধু হাহাকার রয়েছে তাদের।
শারীরিক প্রতিবন্ধী আফছার উদ্দীন জানান, পরিবারের মুখে খাবার তুলে দিতে ৭০ বছর বয়সে এসেও জীবিকা নির্বাহ করে চলেছেন। তিনি বলেন, ‘কী আর করবো। সব সময় নদীর ভাঙা-গড়ার মধ্যে বসবাস করতে হয়। লোনাজলে সব কিছু বিলীন। জমিজমা, ঘরবাড়ি সবই তো ভাইস্যা গেছে। শুধু ঘরখানই দাঁড়াই আছে। নদীতে জোয়ার আসলে সব সময় আতঙ্কিত হয়ে পড়ি।’
রিমালে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন ওই গ্রামের ৬০টি পরিবার। তাদের অনেক কিছু ভাসিয়ে নিয়ে গেছে কপোতাক্ষের লোনাজলে। অনেকের বাড়িতে রাখা ধান ছিল। রিমালের দিন জলোচ্ছ্বাস শুরু হওয়ার সময় কিছু জিনিসপত্র সরাতে পারলেও ধান, কাপড়-চোপড়, এমনকি হাঁড়ি-কড়াই, থালা-বাটি সব হারিয়ে অনেকেই এখন নিঃস্ব। কপোতাক্ষ নদের তীরে এই দশালিয়া গ্রামের সব কটি ঘরেই এখন জলোচ্ছ্বাসের ক্ষতচিহ্ন। এখানে এমন কোনও ঘর নেই যা ঘূর্ণিঝড়ের রাতে প্লাবিত হয়নি। সম্পূর্ণভাবে বিধ্বস্ত হয়েছে অনেকের ঘরবাড়ি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মোস্তফা কামাল বলেন, ‘উপকূলীয় অঞ্চল দুর্যোগপ্রবণ। প্রতিবছরই ঝড়ের তাণ্ডব মোকাবিলা করতে হয় এ দশালিয়া বেড়িবাঁধ তীরে বসবাস করা শত শত মানুষকে। দুর্যোগ-দুর্বিপাকে এখানকার মানুষের নিয়তির ওপর ভর করা ছাড়া আর কোনও উপায় থাকে না। ঝড়ের মৌসুমে নদীপাড়ের একদিকে ঝড়ের প্রকোপ, অন্যদিকে উত্তাল নদী ধারণ করে অগ্নিমূর্তি। সৃষ্টিকর্তার নাম ডাকা ছাড়া নদীপাড়ের মানুষের আর কোনও উপায় থাকে না।’
মহারাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বলেন, ‘ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধগুলো টেকসই করা না হলে প্রতিনিয়ত ঝুঁকির মধ্যে থাকতে হবে উপকূলবাসীকে।’ জরুরিভিত্তিতে ঝুঁকিপূর্ণ বেড়িবাঁধগুলো সংস্কারের দাবি জানান তিনি।
খুলনা জেলা পরিষদের সদস্য আবদুল্লাহ আল মামুন লাভলু বলেন, ‘রিমালে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আনতে পর্যাপ্ত সহযোগিতা প্রয়োজন।’
কয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিএম তারিক-উজ-জামান বলেন, ‘রিমালে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের মাঝে সরকারি-বেসরকারিভাবে ত্রাণ সহযোগিতা দেওয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে সরকারিভাবে বিভিন্ন সহযোগিতা করা হচ্ছে। বেশি ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতার ব্যবস্থা করা হবে।’