খুলনায় ডুবে গেছে ১২ হাজার হেক্টর জমির ফসল

ঘূর্ণিঝড় রিমালের আঘাতের পর জলোচ্ছ্বাসে খুলনার ১২ হাজার ৭১৫ হেক্টর জমির ফসল আক্রান্ত হয়েছে। এর মধ্যে বেশিরভাগ ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে জানিয়েছেন চাষিরা। এর মধ্যে দাকোপ, পাইকগাছা ও কয়রা উপজেলার চাষি বেশি। অনেকে উঠতি ফসল হারিয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন।

সোমবার (২৭ মে) রাত সাড়ে ৯টার দিকে বাংলা ট্রিবিউনকে এসব তথ্য জানিয়েছেন খুলনার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. নাজমুল হুসেইন খাঁন। তিনি বলেন, ‘জলোচ্ছ্বাসে খুলনার এক হাজার ৭৫০ দশমিক পাঁচ হেক্টর জমির ধান, এক হাজার ৩৫৬ হেক্টর জমির পাট, ৫৭৫ দশমিক পাঁচ হেক্টর জমির শাকসবজি ও আট হেক্টর জমির তরমুজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের আর্থিকভাবে সহায়তা দেওয়া হবে।’

খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘খুলনায় এবার ১২ হাজার ৭৪৮ হেক্টর জমিতে ফসল আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ১২ হাজার ৭১৫ হেক্টর জমির ফসল ক্ষেতে ছিল। যা ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়েছে। আক্রান্ত ফসলের মধ্যে রয়েছে আউশ ধানের বীজতলা ৫৪ হেক্টর, তিল ৪৮৫ হেক্টর, মুগডাল ২৭০ হেক্টর, মরিচ ১৭৫ হেক্টর, আদা ৩৩ হেক্টর, হলুদ ২০৩ হেক্টর, চিনাবাদাম ৩০ হেক্টর, ভুট্টা দেড় হেক্টর, পেঁপে ৩১০ হেক্টর, কলা ৫৪৫ হেক্টর, পান ৮৭৭ হেক্টর ও আখ ৭২ হেক্টর। পাশাপাশি কয়েক হেক্টর জমির তরমুজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে ক্ষতির পরিমাণ বাড়তে পারে।’

ক্ষয়ক্ষতির কথা জানিয়ে ডুমুরিয়ার মরিচ চাষি আজাদ আলী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পানিতে ডুবে গেছে মরিচ ক্ষেত। এই পানি নামতে দুই-তিন দিন লাগবে। এর মধ্যে তিন বিঘা জমির সব মরিচ নষ্ট হয়ে যাবে।’

জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) বলছে, রিমালের তাণ্ডবে স্বাভাবিকের চেয়ে ছয়-সাত ফুট উঁচু জোয়ার ও জলোচ্ছ্বাসে দাকোপ ও কয়রা উপজেলার পাঁচটি স্থান ভেঙে গেছে। পাইকগাছা উপজেলার বিভিন্ন পয়েন্টে বাঁধ না ভাঙলে বাঁধ উপচে লোকালয়ে পানি ঢুকেছে। জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে পুকুর ও মৎস্যঘের। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে কৃষিজমির বিভিন্ন জাতের ফসল।

জেলা প্রশাসনের দেওয়া তথ্যমতে, জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হয়েছে সাত ২৮৩ হেক্টর জমির পাঁচ হাজার ৫৭৫টি মৎস্যঘের ও ৩০৭ হেক্টর জমির তিন হাজার ৩০০টি পুকুর। ফলে এক হাজার ৮৩৫ মেট্রিক টন সাদা মাছ ও এক হাজার ৭২৪ মেট্রিক টন চিংড়ি ভেসে গিয়ে চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। সবমিলিয়ে ১৬৮ কোটি ৫৬ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে তাদের। 

জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আবদুল করিম বলেন, ‘বন্যাদুর্গতদের আমরা সার্বিক সহায়তা করতে প্রস্তুত আছি। উপজেলাগুলোতে নগদ টাকা পাঠানো হবে। তবে উপজেলা থেকে পাঠানো তথ্যমতে ৪০টির মতো জায়গা দিয়ে লোকালয়ে পানি ঢুকেছে। এটাই সবচেয়ে চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’