বাঘের পর এবার কুমিরের মুখ থেকে বেঁচে ফিরলেন আব্দুল কুদ্দুস

সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের গহিনে ঢুকে মধু কাটার পর নদীতে গোসল করতে নেমে কুমিরের আক্রমণের শিকার হয়েছেন আব্দুল কুদ্দুস নামের এক মৌয়াল। কুমিরের কামড়ে তার বাম হাতে গুরুতর জখম হয়েছে। মঙ্গলবার (১৪ মে) লোকালয়ে ফিরে আসার পর তাকে শ্যামনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। এর আগে গত শনিবার (১১ মে) সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের কলাগাছিয়া নদীতে এ ঘটনাটি ঘটে।

আব্দুল কুদ্দুস (৫৫) শ্যামনগর উপজেলার বুড়িগোয়ালিনী গ্রামের মৃত মোকছেদ সানার ছেলে। এর আগে ২০১৫ সালে মধু কাটতে গিয়ে সুন্দরবনের তালপট্টি এলাকায় বাঘের কবলে পড়েন তিনিসহ সাত জনের একটি মৌয়াল দল।

তার সঙ্গী অন্য মৌয়ালরা জানান, ৭-৮ দিন আগে সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের বুড়িগোয়ালিনী স্টেশন থেকে মধু সংগ্রহের পাস (অনুমতিপত্র) নিয়ে সুন্দরবনে ঢোকেন আব্দুল কুদ্দুসসহ ছয় মৌয়াল। ১১ মে সুন্দরবনের গহিনে তারা অল্প সময়ের ব্যবধানে দুটি মধুর চাক পেয়ে তা ভাঙার পর কলাগাছিয়া নদীতে তারা গোসল করতে নামেন। একপর্যায়ে দুপুর আড়াইটার দিকে নদীর হাঁটুপানিতে নেমে গোসল করার সময় হঠাৎ আব্দুল কুদ্দুসকে পানির মধ্যে ঘুরপাক খেতে দেখেন অন্যরা।

আকস্মিক এ ঘটনায় সবাই হতবিহ্বল হয়ে পড়েন এবং পানিতে রক্ত ভেসে উঠতে দেখেন তারা। এর কিছুক্ষণ পর তার ভাই হালিমসহ অন্যরা কুমিরের লেজ দেখেন। বিষয়টি তারা বুঝতে পেরে তাদের হাতে থাকা মগ ও পাতিল নিয়ে সজোরে পানিতে আঘাত করতে থাকেন। এরপর তারা আব্দুল কুদ্দুসের দুই পা ধরে টানাটানি শুরু করেন। এভাবে চার মিনিট টানাটানির একপর্যায়ে হঠাৎ শিকার ছেড়ে নদীর গভীরে চলে যায় কুমিরটি।

ভয়াবহ এ অভিজ্ঞতা বলতে গিয়ে আব্দুল কুদ্দুস জানান, কুমির যখন তার হাত কামড়ে টেনে নিয়ে যাচ্ছিল তখন তিনি কথা বলার শক্তি হারিয়ে ফেলেন। কুমির ঘুরপাক খেতে থাকায় তিনিও সমানতালে পানিতে ঘুরপাক খাচ্ছিলেন। নিশ্বাস নিতে না পারায় একপর্যায়ে তিনি জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।

তিনি আরও জানান, ৩৫-৩৬ বছর ধরে মাছ, কাঁকড়া শিকারসহ মধু সংগ্রহে সুন্দরবনে যাতায়াত করেন তারা। এর আগে ২০১৫ সালে মধু কাটতে গিয়ে সুন্দরবনের তালপট্টি এলাকায় বাঘের কবলে পড়েন। তখন তাদের দলে ছিলেন সাত জন। বাঘ লাফ দিয়ে আসার মুহূর্তে তারা দেখতে পেয়ে সবাই মিলে চিৎকার এবং লাঠিসোঁটা দিয়ে গাছে আঘাত করে এলাকা ছেড়ে নিজেদের রক্ষা করেন। ২০০৮ সালে মধু কাটতে গিয়ে বাঘের আক্রমণে নিহত হন তাদের খালু দাতিনাখালী গ্রামের গোলাম মোস্তফা।

সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বনসংরক্ষক একেএম ইকবাল হোসাইন চৌধুরী জানান, সুন্দরবনে যাত্রা শুরুর প্রাক্কালে মৌয়ালদের বাঘ, কুমিরসহ হিংস্র প্রাণী থেকে নিরাপদে থাকার বিষয়ে সতর্ক করা হয়। গত পাঁচ বছরে সুন্দরবনে গিয়ে বাঘের আক্রমণে চার জনের মৃত্যু হয়েছে। একই সময়ে কুমির ও বাঘের আক্রমণে আহত হন আরও দুই জন।