শ্রীপুরে হকার ও ইজারাদার সংঘর্ষ, আহত ২০

গাজীপুরের শ্রীপুরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের মাওনা চৌরাস্তায় ইজারাদার ও হকারদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয়পক্ষের ২০ জন আহত হয়েছেন। শুক্রবার (২৫ এপ্রিল) মাগরিবের নামাজের সময় শিল্পাঞ্চল হিসেবে পরিচিত মাওনা চৌরাস্তায় এ ঘটনা ঘটে।

গুরুতর আহতরা হলেন- নজরুল বেপারী (৬০), আতিক বন্দোকশী (৪৬) ও ইমরান (২৫)। তাদেরকে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তারা ইজারাদার কাজল ফকির ও সেলিমের পক্ষের লোক বলে দাবি করেন। আহত অন্যরা স্থানীয় বিভিন্ন ক্লিনিক ও হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা নিয়েছেন।

হকার্স কমিটির জাহিদ বলেন, মাওনা চৌরাস্তায় হকারদের কাছ থেকে অব্যাহত চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) বাংলাদেশ শ্রমিক কল্যাণ ফেডারেশন শ্রীপুর উপজেলা শাখার উদ্যোগে প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ মিছিল হয়েছিল। ওই প্রতিবাদের জেরে কাজল ফকির ও সেলিম মিয়া দেড় থেকে দুইশ সশস্ত্র লোক নিয়ে হকারদের ওপর হামলা করে। তারা আমাকে ও হকার্স কমিটির সভাপতি মামুন মিয়ার মাথায় কুপিয়ে মারাত্মক আহত করে।

তিনি জানান, সড়ক ও জনপথের জায়গায় ভাসমান কয়েক শতাধিক দোকান থেকে রশিদের মাধ্যমে প্রতিদিন ১০০ টাকা করে আদায় করছে। আমাদেরকে রশীদ দিলেও রশিদে টাকার কথা উল্লেখ করছে না। পৌরসভা থেকে ইজারা নিলেও মাওনা চৌরাস্তার উত্তরে বেশিরভাগ জায়গা তেলিহাটি ইউনিয়ন পরিষদের। তাহলে পৌরসভার ইজারা নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের আওতাধীন এলাকা থেকে তারা জোরপূর্বক টাকা আদায় করছেন।

ইজারাদর কাজল ফকির বলেন, পৌরসভার দরপত্রের মাধ্যমে আমি চৌরাস্তা বাজার ইজারা পাই। পহেলা বৈশাখ থেকে আমি নিয়মিত ইজারা ওঠাচ্ছি। আওয়ামী লীগের আমলে একটি হকার্স কমিটি করা হয়েছিল। সেই কমিটির জাহিদ ও সাধারণ সম্পাদক কয়েকজন হকার নিয়ে আমাদের পক্ষের লোকদেরকে ওপর হঠাৎ হামলা করে। আমাদের লোকজন ইজারা ওঠানোর সময় হঠাৎ হকারদের মিছিল থেকে হামলা করে। তাদের হামলায় আমাদের ২০ জন আহত হয়েছে। বৈধভাবে শ্রীপুর পৌরসভা থেকে মাওনা চৌরাস্তা অস্থায়ী বাজার ইজারা নিয়েছেন দাবি করেন শ্রমিকদলের বহিষ্কৃত নেতা কাজল ফকির ও সেলিম।

মাওনা চৌরাস্তা উড়াল সেতুর নিচে ছোটবড় একাধিক অস্থায়ী ব্যবসায়ী বলেন, আমরা দুপুরের পর থেকে দোকান খুলে বসি। অনেকে সকাল থেকেই ব্যবসা শুরু করে। কেউ কেউ বিকাল ৪টার পর থেকে ব্যবসা শুরু করে। অনেক ব্যবসায়ী ভ্যান গাড়িতে মালামাল রেখে ব্যবসা করছে, কেউ কেউ দাঁড়িয়ে মুড়ি বা চানাচুর বিক্রি করছে। যারা স্থায়ীভাবে নিয়মিত দোকান করছে, তাদের কাছ থেকে ইজারাদাররা ৩০ থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্তও নিরাপত্তা চুক্তি (অ্যাডভান্স) নিয়েছে। পৌরসভা থেকে যারা ইজারা পেয়েছে তারা আমাদের ছোটবড় প্রত্যেক দোকান থেকে প্রতিদিন ১০০ টাকা করে ইজারা তুলছে। প্রতিবাদ করলেই দোকান উচ্ছেদের হুমকি দেয়।

তারা বলেন, সারা দিন ছোটখাটো দোকানে বিক্রি করে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা আয় হয়। তা থেকে ইজারাদারকে ১০০ টাকা দিয়ে দিলে আর থাকেই বা কতো? আমরা পেটের দায়ে তাদেরকে ১০০ টাকা দিতে বাধ্য হয়েছি। আগে আমাদের কাছ থেকে ২০ থেকে ৫০ টাকা করে ইজারা নিয়েছে। চলতি বৈশাখের শুরু থেকে প্রতি দোকান থেকে ১০০ টাকা করে ইজারা নিচ্ছে, যা সম্পূর্ণ জুলুম।

হকাররা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, যারা চাঁদাবাজি করছে, তারা যতই প্রভাবশালী হোক, তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। বিএনপির নামধারী নেতা ও সহযোগীদেরও শাস্তির মুখোমুখি করতে হবে।

শ্রীপুর থানার ওসি জয়নাল আবেদীন মন্ডল বলেন, ইজারাদার ও হকারদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় তিন জনকে চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে মাওনা চৌরাস্তা এলাকায় পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।