বৈষম্যবিরোধী নেতার কাছে জিলাপি খেতে চেয়ে ওসি প্রত্যাহার

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এক নেতার কাছে জিলাপি খেতে চাওয়ার ঘটনায় কিশোরগঞ্জের ইটনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনোয়ার হোসেনকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। 

মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) সন্ধ্যায় ইটনা থানা থেকে তাকে প্রত্যাহার করে জেলা পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়েছে। একইসঙ্গে জেলা পুলিশ লাইনসের পুলিশ পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মো. জাফর ইকবালকে ইটনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (ওসি) দায়িত্ব দেওয়া হয়। রাত ৯টার দিকে এসব তথ্য বাংলা ট্রিবিউনকে নিশ্চিত করেছেন কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী।

ইটনা সদর ইউনিয়নের ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ করা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ইটনা উপজেলার সংগঠক আফজাল হুসাইন শান্তর কাছে জিলাপি খেতে চেয়েছিলেন ইটনা থানার ওসি মো. মনোয়ার হোসেন। এ সংক্রান্ত অডিও রেকর্ড সোমবার ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে সমালোচনা শুরু হয়।

অডিওতে ওসি মনোয়ার হোসেনকে বলতে শোনা যায়, ‘সেফটি সিকিউরিটি দিলাম তো সারা জীবন। তোমরা যে ১৮ লাখ টাকার কাজ করে ১০ লাখ টাকা লাভ করলা, ১০ টাকার জিলাপি কিনে তো পাবলিকেরে খাওয়ালে না। খাইয়া যে একটু দোয়া কইরা দেই বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের। তোমার জায়গায় আমি হইলে সুদের ওপরে টাকা আইনা আগে জিলাপি খাওয়াইতাম। দোয়াডা হইল সবার আগে। ঠিক আছে, তাহলে জিলাপির অপেক্ষায় রইলাম, নাকি?’

এ সময় অপর পক্ষ থেকে বলতে শোনা যায়, ‘শুধু জিলাপি না, অন্য কিছু?’ ওসি বলেন, ‘না না, জিলাপি হইলেই হইবো। এক প্যাঁচ, আধা প্যাঁচ জিলাপি দিলে হইবো। বিভিন্ন পারপাসে হইলে পাবলিক খাইল আর কী, বোঝো না?’ এ সময় ছাত্রনেতা বলেন, ‘বিলটিল পাই, একটা অ্যামাউন্ট দেখবোনে।’ উত্তরে ওসি বলেন, ‘ঠিক আছে।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ওসির সঙ্গে কথোপকথনে অপর প্রান্তে ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ইটনা উপজেলার সংগঠক আফজাল হুসাইন। তিনি ইটনা সদর ইউনিয়নের ফসলরক্ষা বাঁধের কাজ করেছেন।

কিশোরগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, মো. নাজমুল ঠাকুর নামে ইটনা সদর ইউনিয়নের বলদা খেয়াঘাট থেকে শেরপুর সেতু পর্যন্ত ১ হাজার ৪৮০ মিটার ডুবন্ত বাঁধ নির্মাণ প্রকল্প বাঁধ মেরামতের একটি কাজ রয়েছে। এর প্রাক্বলিত মাটির পরিমাণ ৯ হাজার ৬ দশমিক ৫৩ ঘন মিটার। প্রাক্বলিত ব্যয় ১৯ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। আফজাল হুসাইনের দাবি এই কাজই তিনি করেন। নাজমুল ঠাকুর তার ব্যবসায়িক পার্টনার। নাজমুল ঠাকুরও বিষয়টি স্বীকার করেন।

আফজাল হুসাইন বলেন, ‌‘আমরা ইটনা উপজেলার বলদা হাওরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ১৪৮০ মিটার ফসলরক্ষা বাঁধের একটা কাজ পাই। কাজ শেষ হওয়ার পরে থানায় গেলে ওসি জিলাপি খেতে টাকা চাইতেন। তখন রেকর্ড করতে পারিনি। পরে ওসির সঙ্গে ফোনে আমার কথা হলে তিনি আবার আমার কাছে ফসলরক্ষা বাঁধ করে যে লাভ হয়েছে, সেখান থেকে জিলাপি খেতে চান। সেটি রেকর্ড করে রাখি।’

এ বিষয়ে ওসি মনোয়ার হোসেন জানিয়েছিলেন, অডিও রেকর্ডটি তিনি শুনেছেন। মজার ছলে তিনি ওই ব্যক্তির কাছে জিলাপি খেতে চেয়েছিলেন। টাকার কথাগুলো এআই দিয়ে এডিট করা হয়ে থাকতে পারে বলে তার ধারণা। 

ওসি আরও বলেন, ‘গত দুই মাস ধরে আমার সঙ্গে আফজালের কোনও কথা হয়েছে বলে মনে পড়ছে না। প্রায় দুই মাস হলো থানার পাশের মসজিদে আমার টাকায় জিলাপি বণ্টনের সময় ওর ফোন আসে। সে সময় আমি মজার চলে জিলাপির কথা বলেছি। এখন এতোদিন পরে ওই অডিও ফাঁস আবার ফেসবুকে একধরনের থ্রেট দিয়ে আমার বিরুদ্ধে স্ট্যাটাস দিচ্ছে। সব মিলিয়ে বিষয়টি আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র মনে হচ্ছে।’

পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হাছান চৌধুরী বলেন, ‘ওসি মনোয়ার হোসেনকে প্রত্যাহার করে ইটনা থানায় নতুন ওসি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রকাশ হওয়া ফোনালাপ নিয়ে তদন্ত চলছে। তদন্তে ওসির দোষ প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’