গাজীপুরের শ্রীপুরে আগুন লেগে ২২টি ঘর পুড়ে গেছে। পুড়ে যাওয়া ঘরগুলোতে বসবাসকারী পোশাক শ্রমিকরা কিছুই রক্ষা করতে পারেননি। কারণ আগুন লাগার সময় সবাই কারখানায় কাজে ছিলেন।
মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে শ্রীপুর পৌরসভার বেড়াইদচোলা (দোখলা) এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। আগুনে শাকিল বেপারীর ভাড়া দেওয়া টিনশেডের ২২টি ঘর পুড়ে যায়। ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তাদের ভাষ্যমতে, আগুনে অন্তত ৩০ লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।
ওসব কক্ষ ভাড়া নিয়ে আশপাশের পোশাক কারখানার শ্রমিকরা বসবাস করতেন। আগুনে টিভি, ফ্রিজ, সিলিং ফ্যান, ওভেন, খাট, ওয়ারড্রপ, চেয়ার-টেবিল, আলনা, মোটরসাইকেল, স্বার্ণালঙ্কার, নগদ টাকা এবং জামাকাপড়সহ মূল্যবান সব আসবাব পুড়ে যায়। এমনকি ঘরে থাকা চাল-ডালসহ খাদ্যসামগ্রী পুড়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত পোশাকশ্রমিকরা বলছেন, তাদের প্রত্যেকের ঘরে প্রায় দুই লাখ টাকার মালামাল ছিল।
সরেজমিনে দেখা যায়, পাশাপাশি ঘরের সবগুলোই টিনশেড কক্ষ। একটি ঘর অপর ঘরের সঙ্গে লাগানো। ছোট ছোট কক্ষের প্রতিটিতে একটি করে পরিবারের বসবাস। আগুনে ঘরের আসবাবপত্র, ফ্যান, খাট, বই-খাতা সবই পুড়ে গেছে। কারও কারও ঘরে ছেলেমেয়েদের পোড়া বইখাতা পুড়ে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, অগ্নিকাণ্ডের সময় শ্রমিকরা কারখানায় থাকায় প্রতি ঘরই তালাবদ্ধ ছিল। কেউ কোনও মালামাল বের করতে পারেননি। খবর পেয়ে শ্রীপুরের মাওনা ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। আগুনে ২২টি ঘরে থাকা পোশাকশ্রমিকদের সব মালামাল পুড়ে ছাই হয়ে যায়।
এম এন আর ডিজাইন পোশাক কারখানার লিংকিং অপারেটর শামীম ইসলাম বলেন, ‘ওই বাড়ির একটি কক্ষে বসবাস করতাম। যখন আগুন লাগে, তখন কারখানায় ছিলাম। খবর পেয়ে এসে দেখি আগুন জ্বলছে। ঘর থেকে কোনও কিছু বের করতে পারিনি। ঘরে কিছু টাকা ছিল, সেগুলোও পুড়ে গেছে।’
আগুন নেভানোর পর চায়না আক্তার পুড়ে যাওয়া ঘরে কিছু একটা খুঁজছেন। জানতে চাইলে বলেন, ‘ঘরে আমার গয়না ছিল। আগুন লাগার সময় কিছুই বের করতে পারিনি। এখন ছাইয়ের মধ্যে গয়না খুঁজছি।’
ওয়েলডান পোশাক কাখানার আইরনম্যান আমজাদ হোসেন বলেন, ‘ঘরের আসবাবপত্র ও জামাকাপড়সহ সব মালামাল পুড়ে গেছে। অর্ধেক মাসের বেতন পেয়ে কিছু টাকা রেখেছিলাম সেগুলোও পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। এতে আমার দুই লাখ টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।’
একই কারখানার শ্রমিক নাজমা আক্তার এবং রুপা আক্তার বলেন, আমরা কারখানায় ছিলাম। খবর পেয়ে এসে দেখি ঘরের ওপর দিয়ে আগুনের কালো ধোঁয়া বের হচ্ছে। চোখের সামনে পুরো ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেলো। আগুনে আমাদের ঘরে থাকা সাড়ে তিন লাখ টাকার মালামাল পুড়ে গেছে।
বাড়ির মালিক শাকিল ব্যাপারী বলেন, ‘পুড়ে যাওয়া ওসব ঘর বিভিন্ন পোশাক কারখানার শ্রমিকদের কাছে ভাড়া দিয়েছি। প্রতিটি কক্ষে একটি করে পরিবার বসবাস করতো। হঠাৎ মাঝখানের একটি ঘরে আগুন লাগে। মুহূর্তের মধ্যে পাশপাশি থাকা ২২টি ঘরে ছড়িয়ে পড়ে। শ্রমিকরা কারখানায় ছিলেন। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে পৌঁছে দুপুর ১২টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তার আগেই সব পুড়ে যায়।’
মাওনা ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের পরিদর্শক মাহমুদুল হাসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট পৌনে এক ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এতে হতাহত হয়নি। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। ২২টি কক্ষ পুড়ে গেছে।’