কিশোরগঞ্জের ভৈরব থেকে নিজের তিন বছরের মেয়েসন্তানকে নিয়ে জেলা শহরে অটোরিকশাযোগে আসছিলেন সোহেল মিয়া (৩০)। কুলিয়ারচর উপজেলার রামদি ইউনিয়নের তাতারকান্দি এলাকায় তাকে ‘ছেলে ধরা’ সন্দেহে অটোরিকশা থেকে নামায় কিছু লোকজন। এ সময় মব সৃষ্টি করে সন্তানের সামনেই সোহেল মিয়াকে পেছন থেকে হাত বেঁধে বেধড়ক পেটাতে থাকে উপস্থিত প্রায় সবাই। পাশেই সোহেল মিয়ার মেয়েসন্তান রাইসা বাবা বাবা বলে চিৎকার করলেও কেউ শোনেনি তার কথা।
গণপিটুনি চলাকালীন এদের মধ্যে কয়েকজন ভিডিও ধারণ করে ‘শিশু অপহরণকারী’ শিরোনাম দিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিতে থাকে। বিষয়টি দেখে স্থানীয় সচেতন কোনও একজন কুলিয়ারচর থানা পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ এসে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে বাবা-মেয়েকে থানায় নিয়ে যায়।
রবিবার দুপুরে কুলিয়ারচর উপজেলার রামদি ইউনিয়নের তাতারকান্দি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। গণপিটুনির শিকার হওয়া সোহেল মিয়া জেলা শহরের পৌর এলাকার হারুয়া সওদাগর পাড়ার বাসিন্দা। তিনি ফেরি করে প্লাস্টিকের মালামাল বিক্রি করেন। তিন বছরের মেয়েকে নিয়ে নিজের স্ত্রীকে খুঁজতে গিয়ে এমন গণপিটুনিতে গুরুতর আহত হয়েছেন তিনি।
পুলিশ ও স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১০ বছর আগে সাবিনা আক্তার নামে এক নারীর সঙ্গে বিয়ে হয় সোহেলের। তাদের সংসারে আট বছরের এক ছেলে, তিন বছর ও সাত মাস বয়সী দুই মেয়ে রয়েছে। তবে কয়েকদিন আগে সোহেলকে তালাক দিয়ে সন্তানদের রেখে অন্যত্র চলে যান সাবিনা। কিন্তু তিন বছরের শিশুকন্যা মায়ের কাছে যেতে অস্থির হয়ে বারবার কান্না করতে থাকে। তার কান্না থামাতে না পেরে তাকে নিয়েই রবিবার সাবেক স্ত্রীর খোঁজে বের হন সোহেল। লোকমুখে তিনি শুনেছিলেন সাবিনা ভৈরবে আছেন। তাই মেয়েকে নিয়ে সেখানে যান। তবে সাবেক স্ত্রীর দেখা পাননি সেখানে। পরে মেয়েকে নিয়ে অটোরিকশায় করে দুপুরে জেলা শহরে ফিরছিলেন। তাতারকান্দি এলাকা অতিক্রমের সময় লাইসার ‘মা মা’ বলে কান্না শুনে ছেলেধরা সন্দেহে স্থানীয় কয়েকজন যুবক সোহেলকে অটোরিকশা থেকে নামিয়ে মারপিট করতে থাকে। বাবাকে মারতে দেখে শিশুটি ‘বাবা বাবা’ বলে কাঁদতে থাকে। কিন্তু তাতেও মন গলেনি গণপিটুনি দেওয়া যুবকদের। পরে স্থানীয় একজনের মাধ্যমে খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে বাবা-মেয়েকে উদ্ধার করে।
কুলিয়ারচর থানার এসআই শুভ আহমেদ বলেন, ‘উদ্ধারের পর সোহেলকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। এ ঘটনায় কুলিয়ারচর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।’
কুলিয়ারচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হেলাল উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘রবিবার দুপুরে থানায় ফোন আসলে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে গিয়ে সোহেল মিয়া ও তার সন্তানকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। পরে যাচাই-বাছাই করে জানা যায় তার নিজেরই সন্তান। কোন অসৎ উদ্দেশ্য ছিল না তার। পরিবারের লোকজনকে খবর দিয়ে রাত ৯টার দিকে সোহেল মিয়া ও তার সন্তানকে হস্তান্তর করা হয়। এ বিষয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে।’
এ ঘটনায় পুলিশ কোনও পদক্ষেপ নেবে কিনা জানতে চাইলে ওসি বলেন, ‘ঘটনাটি ভুল বোঝাবুঝির কারণে ঘটেছে। কাউকে সন্দেহ হলে পুলিশকে খবর দেওয়া উচিত। আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া অপরাধ। এ ঘটনার সঙ্গে যারা যারা জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।’