মাদারীপুরে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে আলাউদ্দিন ব্যাপারী (২৫) নামের এক যুবককে হত্যার পর লাশ গুমের অভিযোগে মামলা করা হয়। মামলার দুই দিন পর তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় চট্টগ্রামের পতেঙ্গা থেকে সোমবার রাতে আত্মগোপনে থাকা আলাউদ্দিনকে উদ্ধার করা হয়। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তাকে মাদারীপুরে নিয়ে আসা হয়।
এর আগে গত শনিবার সদর মডেল থানায় আলাউদ্দিনের মা রানু বেগম বাদী হয়ে সদর মডেল থানায় ছেলেকে অপহরণ করে হত্যার পর লাশ গুম করা হয়েছে মর্মে অভিযোগ দায়ের করেন। পরে থানা পুলিশ ১৭ জনের নামে মামলা রেকর্ড করে। এ ছাড়া মামলায় পাঁচ-সাত জনকে অজ্ঞাত আসামি করা হয়।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ১ এপ্রিল মাদারীপুর সদর উপজেলার কেন্দুয়া ইউনিয়নের শ্রীনাথদী গ্রামের মলফত ব্যাপারীর ঘরে প্রবেশ করেন প্রতিবেশী ইলিয়াস মোল্লাসহ বেশ কয়েকজন। ঘরের আলমারি ভেঙে কয়েক লাখ টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার লুটপাট করেন তারা। পরে মলফত ব্যাপারীর ছেলে আলাউদ্দিনকে অপহরণ করে নিয়ে যান ইলিয়াস ও তার লোকজন। বাধা দেওয়ায় পিটিয়ে আহত করা হয় মলফতের স্ত্রী রানু বেগমকে। এ ঘটনায় মা রানু বেগম বাদী হয়ে ছেলেকে হত্যার পর লাশ গুম করেছে মর্মে মামলা করেন। এরপর তদন্তে নামে পুলিশ। তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় পতেঙ্গা থেকে উদ্ধার করা হয় আলাউদ্দিনকে।
পুলিশ জানায়, প্রতিপক্ষ ইলিয়াস মোল্লাকে ফাঁসাতে গুম ও খুনের নাটক সাজিয়েছেন স্বজনরা। এ ব্যাপারে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেবে পুলিশ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি শ্রীনাথদী গ্রামের মৃত জনাব আলী মোল্লার ছেলে ইলিয়াস মোল্লার পুুকরে বিষ প্রয়োগ করে মাছ নিধন করে একটি চক্র। পরে মাছ মরে যাওয়ার ঘটনায় আলাউদ্দিন ও তার পরিবারের লোকজনের নামে থানায় অভিযোগ করা হয়। ঘটনা তদন্তে কাজ শুরু করে পুলিশ। এ ঘটনা থেকে বাঁচতে প্রতিপক্ষ ইলিয়াস মোল্লাকে ফাঁসাতে ছেলেকে আত্মগোপনে পাঠিয়ে গুম ও খুনের মামলা করেন মা রানু বেগম। ঘটনার তদন্ত করে দোষীদের বিচার দাবি করেছেন ভুক্তভোগী ১৭ আসামি ও এলাকাবাসী।
মামলার বাদী রানু বেগম ও আলাউদ্দিনের চাচাতো ভাই রফিক জানান, আলাউদ্দিনকে কয়েকবার মারধর করেছেন ইলিয়াস ও তার লোকজন। এ ছাড়া ইলিয়াসের পুকুরে বিষ প্রয়োগে মাছ নিধনে মিথ্যা মামলা করেন রানু বেগমের পরিবারের নামে। ঘটনার দিন ঘরে ঢুকে লুটপাট চালিয়ে আলাউদ্দিনকে নিয়ে যান ইলিয়াসের লোকজন। পরে আলাউদ্দিনকে আর না পাওয়া গেলে গুম ও খুনের মামলা করা হয়।
মাদারীপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মোকছেদুর রহমান বলেন, ‘গুম ও খুনের মামলার ঘটনায় ভিকটিমকে উদ্ধার করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আলাউদ্দিন নিজেই আত্মগোপনে থেকে গুম-খুনের ঘটনা সাজিয়েছেন বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে। বুধবার তাকে আদালতে তোলা হবে। এ ঘটনায় জড়িত সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।’