ফরিদপুরে স্বামীর পরকীয়া দেখে ফেলায় রিক্তা বেগম (৩৫) নামের এক গৃহবধূকে নির্যাতন করে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ উঠেছে স্বামী ও শ্বশুরবাড়ির লোকজনের বিরুদ্ধে। গত ১০ মার্চ ভাঙ্গা উপজেলার চান্দ্রা ইউনিয়নের দীঘলকান্দা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত রিক্তা বেগম উপজেলার চান্দ্রা ইউনিয়নের পাঁচকুল গ্রামের আজিজ শিকদারের মেয়ে ও পার্শ্ববর্তী দীঘলকান্দা গ্রামের আনোয়ার মোল্লার ছেলে প্রবাসফেরত জাকির মোল্লার স্ত্রী।
নিহতের স্বজনদের অভিযোগ, গত ১০ মার্চ রিক্তাকে পিটিয়ে হত্যার পর লাশ হাসপাতালে রেখে পালিয়ে যান স্বামী ও তার পরিবারের সদস্যরা। পরদিন খবর পেয়ে নিহতের পরিবার হাসপাতাল থেকে লাশটি উদ্ধার করে। তাদের দাবি, রিক্তাকে পিটিয়ে হত্যা করেছেন স্বামী জাকির মোল্লা ও তার পরিবারের লোকজন।
রিক্তার বোন হাফিজা আক্তার জানান, পারিবারিকভাবে ১২ বছর আগে রিক্তা ও জাকিরের বিয়ে হয়। এরপর থেকে রিক্তাকে অত্যাচার ও নির্যাতন করে আসছিল তার স্বামী ও পরিবারের সদস্যরা। ১০ মার্চ দুপুরে রিক্তাকে মারধর করে মুখে বিষ ঢেলে ঘরে আটকিয়ে রাখে স্বামী ও শুশ্বরবাড়ির লোকজন। সেদিন রাতে গোপনে রিক্তাকে ভাঙ্গা থেকে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন রাতেই মারা যান। রিক্তা মারা যাওয়ার পর লাশটি হাসপাতালে রেখে সবাই পালিয়ে যান। পরদিন তার লাশ বুঝে নেন স্বজনরা। রিক্তার ছয় বছর বয়সী এক পুত্রসন্তান রয়েছে।
নিহতের বড় বোন মুক্তা বেগম বলেন, ‘জাকির আগে বরিশালের এক মেয়েকে বিয়ে করেছিল। ওই স্ত্রীর সঙ্গে ডিভোর্স হওয়ার পর আমার বোনকে বিয়ে করে। বিয়ের পাঁচ বছর পর মালয়েশিয়ায় চলে যায়। সেখানে থাকা অবস্থায় আগের স্ত্রীর সঙ্গে পরকীয়া সম্পর্ক গড়ে তোলে। আট মাস আগে দেশে আসার পর ওই নারীর সঙ্গে কয়েকবার দেখা করে এবং মোবাইলে নিয়মিত কথা বলতো। এসব কর্মকাণ্ডে আমার বোন বাধা দেওয়ায় বিভিন্ন সময় মারধর ও নির্যাতন করতো। ১০ মার্চ রাতেও রিক্তাকে মারধর করে জাকির। তখন আমার বোন মাকে ফোন দিয়ে জানায়, তারে লোহার রড দিয়ে পিটিয়েছে। সেখানে মৃত্যুর পর হাসপাতালে নেওয়া হয়।’
হাফিজা বেগম বলেন, ‘রিক্তাকে মারধর করে মুখে বিষ ঢেলে ঘরে আটকিয়ে রাখে জাকির ও তার পরিবারের লোকজন। পরে ফরিদপুর হাসপাতালে ভর্তি করে। সেখানে লাশ রেখে পালিয়ে যায় জাকির ও স্বজনরা। এ ঘটনায় জাকির ও তার পরিবারের লোকজনের বিচার চাই আমরা।’
ঘটনার পর থেকে জাকির মোল্লা ও তার পরিবারের লোকজন আত্মগোপনে থাকায় তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
চান্দ্রা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক মোল্লা বলেন, ‘রিক্তা বিষপানে মারা গেছে বলে শুনেছি। স্বামীর অশান্তির কারণে বিষ খেয়েছে নাকি হত্যা করা হয়েছে, তা নিশ্চিত হতে পারিনি।’
ভাঙ্গা থানার পরিদর্শক (তদন্ত) ইন্দ্রজিৎ মল্লিক বলেন, ‘ওই দিন বিষয়টি ইউপি চেয়ারম্যান আমাদের জানালে এলাকায় পুলিশ পাঠানো হয়েছিল। এ বিষয়ে আমরা কোনও অভিযোগ পাইনি। ঘটনার তদন্ত চলছে।’
ভাঙ্গা থানার ওসি আশরাফ হোসেন বলেন, ‘রিক্তার মৃত্যুর ঘটনায় একটি অপমৃত্যু মামলা হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট আসার পর তা দেখে পরবর্তীতে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’