মামলার সাক্ষীকে কুপিয়ে হত্যায় ৫ জনের যাবজ্জীবন, ১৯ জন খালাস

মাদারীপুরের রাজৈরে ২০১৫ সালে চাঁদাবাজির মামলার সাক্ষী ব্যবসায়ী বাবুল হাওলাদারকে কুপিয়ে হত্যায় পাঁচ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে ১৯ আসামিকে খালাস দেওয়া হয়েছে।

বুধবার (২২ জানুয়ারি) বিকালে জেলার সিনিয়র জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবির এ রায় দেন। দণ্ডপ্রাপ্ত প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে জরিমানা করা হয়েছে। অনাদায়ে আরও এক বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তবে এই রায়ে ক্ষুব্ধ হয়ে উচ্চ আদালতে যাওয়ার কথা জানিয়েছে বাদী ও আসামিপক্ষ।

মামলার এজাহার থেকে জানা গেছে, ২০১৪ সালে একটি চাঁদাবাজি মামলায় রাজৈর উপজেলার শাখারপাড় গ্রামের ফল ব্যবসায়ী বাবুল হাওলাদারকে সাক্ষী করা হয়। এরই জেরে ২০১৫ সালের ৪ জানুয়ারি বাবুল হাওলাদারকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। ঘটনার দুদিন পর ৬ জানুয়ারি ৪২ জনের নামে রাজৈর থানায় হত্যা মামলা করেন নিহতের বড় ছেলে ইমরান হাওলাদার। মামলার পর ইমরানকে বিভিন্ন সময় ভয়ভীতি দেখায় আসামিপক্ষ। পরে তিনি বিদেশ চলে যান। এরপর উচ্চ আদালদের নির্দেশে মামলা পরিচালনার দায়িত্ব পান নিহতের ছোট ছেলে আসাদুল হাওলাদার। সর্বশেষ তৃতীয় দফায় ২০১৬ সালের ২৪ মে ২৭ জনের মধ্যে আদালতে চার্জশিট জমা দেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা তৎকালীন সহকারী পুলিশ সুপার মো. মনিরুজ্জামান ফকির। মামলা চলাকালে চার্জশিটভুক্ত তিন আসামির মৃত্যু হয়।

এরপর ১২ জনের সাক্ষ্য নেন আদালত। বুধবার বিকালে মামলার আসামি সাহেবালী মুন্সি, খোকন মুন্সি, সাহাবুদ্দিন মুন্সি, লাবলু মুন্সি ও হান্নান মুন্সি এই পাঁচ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন বিচারক। একইসঙ্গে প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে জরিমানাও করা হয়। এ ছাড়া দোষ প্রমাণিত না হওয়ায় বাকি আসামিদের খালাস দেওয়া হয়। মামলার রায়ের সময় হান্নান মুন্সি ছাড়া সাজাপ্রাপ্ত চার আসামি আদালতে উপস্থিত ছিলেন। পরে তাদের কড়া নিরাপত্তায় কারাগারে পাঠানো হয়।

এদিকে রায়ে ক্ষুব্ধ হওয়ায় উচ্চ আদালতে আপিল করার কথা জানিয়েছে উভয়পক্ষ। নিহতের ছোট ছেলে আসাদুল হাওলাদার বলেন, ‘আমার বাবা একজন নিরীহ মানুষ ছিলেন। তাকে নির্মমভাবে আসামিরা কুপিয়ে হত্যা করেছে। আমরা অন্তত পাঁচ জন আসামির ফাঁসি ও অন্যদের যাবজ্জীবন সাজার আশা করেছিলাম। কিন্তু আদালত যে রায় দিয়েছেন, এতে আমরা ও আমাদের পরিবার সন্তুষ্ট নই।’

রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এমারত হোসেন বলেন, ‘এই রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ উচ্চ আদালতে আপিল করবে।’

আসামি পক্ষের আইনজীবী ফজুর রহমানর হিরু বলেন, ‘আসামিপক্ষ ন্যায় বিচার পায়নি। আমাদের সব আসামি নির্দোষ ছিল। তাই আমরা পাঁচ আসামির সাজার বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাবো।’