একেকজনের একেকরকম চাওয়া

জীবনসঙ্গী হিসেবে চান সৌদি নাগরিককে, চিঠি ফেললেন পাগলা মসজিদের দানবাক্সে

মানুষের মনে থাকে নানান রকমের চাওয়া। কিন্তু সব চাওয়াই তো আর পূরণ হয় না। সেক্ষেত্রে সৃষ্টিকর্তার আনুকূল্য পেতে চান বিশ্বাসীরা। খুঁজতে থাকেন মাধ্যম। বিভিন্ন মাধ্যমে ইচ্ছে প্রকাশ করে পেতে চান কাঙ্ক্ষিত ব্যক্তি-বস্তু কিংবা শারীরিক সৌন্দর্যটাকে। তার কিছু ছিটেফোঁটা মেলে কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদের দানবাক্সে।

মনোবাসনা লিখে চিঠি ফেলেন মসজিদের সিন্দুকে। তিন মাস পর যখন এসব খোলা হয় তখন টাকাপয়সা, স্বর্ণালংকারের সঙ্গে মেলে এসব চিঠিপত্র। যেগুলো লেখা হয় সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশে। এগুলো আবার চলে আসে গণমাধ্যমের খবরে। 

এমনই একটি চিঠিতে এক সৌদি নাগরিককে বিয়ে করার প্রার্থনা জানিয়েছেন এক নারী। চিঠিতে লেখা রয়েছে ‘আমি একজন সৌদি নাগরিককে ভালোবাসি। হে মহান আল্লাহ, তুমি তাকে আমার করে দাও। আমি যেন তাকে বিবাহ করতে পারি (সুম্মা আমিন)। হে আমার রব, তুমি আমাকে খালি হাতে ফিরিয়ে দিও না। হে, রব তুমি আমাকে নবীর দেশে পবিত্র মাটিতে জন্মগ্রহণ করার সৌভাগ্য দিয়েছো। আমি যেন আমার সেই সৌভাগ্য নিয়ে তোমার পবিত্র মাটিতে মৃত্যুবরণ করিতে পারি। আমি যেন পড়ালেখায় ভালো হতে পারি, আমার পরিবারে যেন শান্তি বয়ে আসে (আমিন)। আমি যেন হালাল রুজিরোজগার করতে পারি। হে রব, হে মহান আল্লাহ, তোমার কাছে দুই হাত তোলে চাইতেছি তুমি আমাকে মক্কাবাসীর ভালো এক উত্তম, দ্বিনি সুদর্শন লোকের সঙ্গে বিবাহ করিয়ে দাও (আমিন)।’

এ তো গেলো একটির লেখা। এমন অসংখ্য চিঠি পাওয়া গেছে পাগলা মসজিদের দানবাক্সে।

আরেকটিতে জানানো হয়েছে, সুন্দর ও স্লিম হওয়ার আকুতি। নাম না জানা একজন লিখেছেন, ‘আল্লাহ তুমি আমাকে সারা জীবনের জন্য চিকন বানাইয়া দাও দয়া করে। আমি ও পাতিবাবু সারা জীবন একসঙ্গে থাকতে চাই। আমাদের দুই জনকে একসঙ্গে রাইখো। তার আগে আমার মৃত্যু দিও। আমাদের মধ্যে যেন কোন শাকচুন্নি না আসে। জান্নাতেও যেন আমার পাতিবাবু কোনও হুর না পায়। আল্লাহ তুমি ঠাকুমার ঝুলি কার্টুনে যেরকম পুকুর ছিল সেরকম জাদুর পুকুরের সন্ধান দাও। যাতে আমি ওই পুকুরে ডুব দিয়ে সুন্দর হতে পারি। মুখের দাগগুলো যায়, চুল বড় আর ঘন হয়, আর যাতে কম বয়স্ক লাগে সারা জীবন।’

আরেকটি চিঠি

শনিবার (৩০ নভেম্বর) সকাল ৭টায় পাগলা মসজিদের ১১টি দানবাক্স খোলা হয়। সেখানে পাওয়া গেছে চিঠিগুলো। এসব চিঠি ঘুরে বেড়াচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও।

দানবাক্সে পাওয়া আরেকটি চিঠিতে লেখা রয়েছে, ‘প্রিয় খাদিজা আক্তার লিপি, আজ এই ঐতিহাসিক মসজিদে তোমার নামে একটা মানত পূর্ণ করলাম। তুমি নেই তো কী হয়েছে তোমার দেওয়া স্মৃতি নিয়ে বাঁচবো আজীবন। আমার কী দোষ ছিল? আমি তোমাকে অভিশাপ দেবো না, তোমার শহর আমি অনেক দেখেছি কিন্তু তোমার মতো কাউকে পেলাম না। আমি আশা রাখি, তুমি একসময় আমার হবে।’

প্রসঙ্গত, এবার পাগলা মসজিদের ১১টি সিন্দুকে পাওয়া গেছে রেকর্ড ৮ কোটি ২১ লাখ ৩৪ হাজার ৩০৪ টাকা। এটি এই মসজিদের ইতিহাসে সর্বোচ্চ পরিমাণ দানের টাকা। শনিবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে টাকার পরিমাণ আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করেছেন কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পাগলা মসজিদ কমিটির সভাপতি ফৌজিয়া খান।

শনিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে মসজিদের ১১টি দানবাক্স পর্যায়ক্রমে খোলা হয়। সেখানে পাওয়া যায় মোট ২৯ বস্তা টাকা। দেশি টাকার পাশাপাশি সেখানে ছিল স্বর্ণালংকার ও বিদেশি মুদ্রাও। জেলা প্রশাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে কড়া নিরাপত্তায় বস্তাগুলো মসজিদের দোতলায় নিয়ে যাওয়া হয়।

এদিন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মিজাবে রহমতের নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট টাকা গণনার কাজ তদারকি করেছেন। তা ছাড়া দুটি মাদ্রাসার প্রায় আড়াইশ শিক্ষার্থী, ব্যাংকের ৭০ জন কর্মী, মসজিদ কমিটি ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসহ প্রায় সাড়ে চারশ লোক টানা ১১ ঘণ্টা টাকা গণনার কাজে নিয়োজিত ছিলেন।